অযোধ্যায় সোমবার (২২ জানুয়ারি) রামমন্দির উদ্বোধনের দিন অনুষ্ঠানে যোগ দেননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বরং এদিন তিনি কলকাতায় সংহতি মিছিলের আয়োজন করেন।
আজ বেলা তিনটায় কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংহতি যাত্রায় অংশ নেন। সংহতি যাত্রা শুরু হয় হাজরাপার্ক থেকে আর শেষ হয় পার্ক সার্কাসে গিয়ে। সংহতি মিছিলে যোগ দেন হিন্দু, মুসলিম, শিখ, বৌদ্ধ, পারসি, ইহুদি ধর্মের প্রতিনিধিরা।
এরপর মমতা পার্ক সার্কাসে আয়োজিত সভায় বলেন, ‘আমরা এই রাজ্যে ধর্মের নামে বিভেদ চাই না। আমরা যেন একসাথে থাকি। আমরা ধর্মে ধর্মে বিভেদে চাই না।’
মিছিলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তৃণমূল এমপি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল কাউন্সিলর কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়, কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়, মন্ত্রী সুজিত বসু, মন্ত্রী জাভেদ খান প্রমুখ।
মিছিলের আগে মমতা কালীঘাট মন্দিরে গিয়ে পূজা দেন। এরপর তার সংহতি যাত্রার মাঝে পথিমধ্যে শিখ সম্প্রদায়ের গুরুদুয়ারা। পার্ক সার্কাসের গির্জা থেকে বেরিয়ে কাছের এক মসজিদে যান মমতা। এরপর পার্ক সার্কাস ময়দান গিয়ে সভায় বক্তব্য দেন মমতা।
রামমন্দির উদ্বোধনে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল; কিন্তু কয়েক দিন আগেই মমতা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি অযোধ্যা যাচ্ছেন না। এমনকি রামমন্দির উদ্বোধনকে ‘ভোটের আগে গিমিক’ বলেও কটাক্ষ করেছিলেন মমতা।
তৃণমূল নেতারা বলেছেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি ধর্ম নিয়ে রাজনীতির খেলা শুরু করেছে।
এমন কথা শোনা গেল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠেও। তিনি বলেছেন, যত দিন তৃণমূল সরকার থাকবে, তত দিন আমি এই রাজ্যে ধর্ম নিয়ে বিভাজন হতে দেব না। আমরা সবাই একসঙ্গে থাকব। থাকব সব ধর্মের মানুষদের নিয়ে।
মমতা বলেন, যখন বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছিল, আমি একা পথে নেমেছিলাম। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কাছে গিয়েছিলাম। বলেছিলাম- কোনো প্রয়োজন আছে কিনা। ভয় না পেয়ে সমস্ত জায়গায় গিয়ে ত্রাণ দিয়ে এসেছিলাম। এসব অনেকেই ভুলে গিয়েছেন।
‘জয় বাংলা, জয় সম্প্রীতি। সব ধর্ম ভাই ভাই। দেশকে ভাগ করতে দেব না। আমরা শান্তি চাই’- বলেন মমতা।
রামমন্দির উদ্বোধনের দিন কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা স্কুল, কলেজ এবং অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে হাফ ছুটির সমালোচনা করে মমতা বললেন, নেতাজীর জন্মদিনে তাদের ছুটি দেওয়ার কথা বলেছিলাম। দেয়নি। আর আজ তারা ছুটি চাইছে। ছুটি দিচ্ছে। কারণ আজ নাকি ওদের স্বাধীনতা দিবস।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিরোধী জোটের নাম ‘ইন্ডিয়া’ আমি দিয়েছি, অথচ বৈঠকে সম্মান পাই না। সিপিএম বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়ার’ বৈঠক নিয়ন্ত্রণ করে। আমি সেটা মানব না।
এদিকে আজ সকালে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলের নেতা বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী অযোধ্যায় রামমন্দিরের শুভ উদ্বোধনকে স্মরণে রাখতে কলকাতায় আয়োজন করেন ‘অকালবোধন যাত্রার।’ এই যাত্রায় ছিল অযোধ্যার রামমন্দিরের একটি ট্যাবলো। আর ছিল দুর্গা প্রতিমা। এই যাত্রায়ও প্রচুর মানুষের সমাগম হয়।