খেলাধুলা

রান তুলতে সংগ্রাম, রেকর্ড করল বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ

ড্যান ক্রিস্টিয়ানকে বলা হয় অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে ‘টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞ’। তিনিও স্বীকার করেছেন কথাটা। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে যে ধরনের কন্ডিশনের মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া হয়েছে, সে ধরনের কন্ডিশনের মুখোমুখি তাঁর মতো টি-টোয়েন্টি বিশেষজ্ঞও এর আগে কখনোই হননি। আর পাঁচ ম্যাচের এ টি-টোয়েন্টি সিরিজের চার ম্যাচ শেষ হওয়ার পর দুই দল একটা রেকর্ডের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। এটি হতে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের ওভারপ্রতি সবচেয়ে কম বা সবচেয়ে কম রানরেটের সিরিজ।

কাল প্রথমে ব্যাটিং করে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়েছিল ১০৪ রানে। আপাতদৃষ্টে খুবই সহজ একটা লক্ষ্য অস্ট্রেলিয়ার জন্য। কিন্তু সেই অস্ট্রেলিয়াই এ রান তাড়া করতে গিয়ে ৭ উইকেট হারিয়ে বসল। ম্যাচটা জিতল ১৯তম ওভারের শেষ বলে। আগের তিনটি ম্যাচে কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে হার সঙ্গী হলেও কাল কন্ডিশনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া।

ক্রিস্টিয়ানকেই বড় একটা ধন্যবাদ দিতে হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার। তাঁকে টপ অর্ডারে পাঠিয়েই যে সফল তারা। ক্রিস্টিয়ান সাকিবের করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারটিতে গুণে গুণে মেরেছেন পাঁচখানা ছক্কা। এক ওভারে ৩০ রান খরচ করে ম্যাচের লাগামটাও বাংলাদেশ তুলে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার হাতে। ১০৪ রান নিয়ে বোলিংয়ে নেমে এক ওভারে ৩০ রান দিয়ে ফেললে তো ম্যাচ ওখানেই শেষ।

সোমবার সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এ ম্যাচে রান তোলায় নাটকীয় কিছু না হলে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার এ টি-টোয়েন্টি সিরিজ হচ্ছে ইতিহাসে সবচেয়ে কম রানেরও। এখন পর্যন্ত সিরিজের রানরেট দেখলে অবাকই হতে হয়—৫.৯৩! এ যুগে টি-টোয়েন্টি সিরিজে এসে ৬-এর নিচে রানরেট রীতিমতো অচিন্তনীয়। দুটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে আয়োজিত পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ হিসেবেও এতে রান উঠেছে অনেক কম। এখন পর্যন্ত চারটি ম্যাচে দুই দলের ইনিংস মিলিয়ে মোট রান উঠেছে মাত্র ৯৩৬। এখন পর্যন্ত দুটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে সবচেয়ে কম রান হয়েছে এ বছরের শুরুতে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে—১৫৯৪। কাল শেষ ম্যাচে এ সংখ্যাকে ছাপিয়ে যেতে না পারলে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি সিরিজটিই হতে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে দুটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত সবচেয়ে কম রানের সিরিজ।

আরও একটা তথ্য এখানে দেওয়া যেতে পারে। এ সিরিজে এখনো দুই দল যে ২২ জন ক্রিকেটারকে খেলিয়েছে, তাদের মধ্যে মাত্র ৭ জনের স্ট্রাইক রেট ১০০ পেরিয়েছে। বর্তমান যুগে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এমনটা ভাবা যায়!

অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমে কথা উঠেছে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে এমন উইকেট, এমন কন্ডিশনে খেলে কার কী লাভ হবে! কিন্তু এখানেও কথা থেকে যাচ্ছে। অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যম সে লাইনেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হবে আগামী অক্টোবর-নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে। এর আগে সেপ্টেম্বর থেকে সেখানে মাঠে গড়াবে (আমিরাতে) করোনার কারণে আইপিএলের স্থগিত হয়ে যাওয়া বাকি অংশের খেলাগুলো। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড যে সূচি দিয়েছে, তাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর এক দিন আগে আইপিএল শেষ হওয়ার কথা। বিশ্বকাপের উইকেট যে একেবারে ‘আনকোরা’ হবে, সে গ্যারান্টিও কেউ দিতে পারছে না।

ক্রিস্টিয়ান বলেছেন, এটা তাঁর দেখা সবচেয়ে কঠিন কন্ডিশন। বর্ষাকালে বাংলাদেশের মাটিতে সিরিজ খেলতে এলে এমন কন্ডিশনে পড়তেই হবে। এই কঠিন কন্ডিশনের শিক্ষাটাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়াকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত করবে বলে মনে করেন গতকালের ম্যাচের জয়ের নায়ক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *