ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: ষাট বছরেরও বেশি সময় ব্রিটেনের রানির পার্শ্ব-সহচর ও একান্ত সমর্থক প্রিন্স ফিলিপ বা ডিউক অফ এডিনবারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ রাজ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিতে পরিণত হন। রানির জীবন সঙ্গী হলেও ফিলিপের কোনো সাংবিধানিক দায়িত্ব ছিল না। কিন্তু রাজ পরিবারের এতো ঘনিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ তিনি ছাড়া আর কেউ ছিলেন না।
তিয়াত্তর বছর তিনি ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের স্বামী। রানির আদেশেই ব্রিটিশ রাজতন্ত্রে একসময় তিনি হয়ে ওঠেন দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। জীবন সঙ্গী হিসেবে রানিকে তাঁর কাজে সহযোগিতা করলেও বিশেষ কিছু কাজের ব্যাপারে প্রিন্স ফিলিপের বিশেষ আগ্রহ ছিল।
পরিবেশ ও তরুণদের জন্যে অনেক কাজ করেছেন তিনি। স্পষ্টভাষী হিসেবেও পরিচিতি ছিল প্রিন্স ফিলিপের। এই দীর্ঘ সময় ধরে রানি ও ব্রিটিশ রাজ পরিবারের প্রতি একনিষ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতার জন্যে তিনি যথেষ্ট শ্রদ্ধাও অর্জন করেন।
রাজ পরিবারের নানা আনন্দ উৎসব আর কঠিন চ্যালেঞ্জের সময় তিনি সবসময় ছিলেন রানির পাশে। নিজের ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে তিনি একবার বলেছিলেন, তাঁর কাছে যেটা সবচেয়ে ভাল মনে হয়েছে তিনি সেই কাজটাই করেছেন।
এলিজাবেথের সাথে সাক্ষাৎ
প্রিন্স ফিলিপ যখন ডার্টমাথে ব্রিটানিয়া রয়্যাল নেভাল কলেজের ক্যাডেট, তখন ওই কলেজ পরিদর্শন করেন রাজা ষষ্ঠ জর্জ এবং রানি এলিজাবেথ, সঙ্গে ছিলেন তাঁদের দুই কিশোরী কন্যা- প্রিন্সেস এলিজাবেথ ও প্রিন্সেস মার্গারেট।
ওই সফরে দুই কিশোরী প্রিন্সেসের সাথী হয়ে তাঁদের সঙ্গ দেন প্রিন্স ফিলিপ। তরুণ প্রিন্স ওই সফরে ১৩ বছরের প্রিন্সেস এলিজাবেথের মনে গভীর ছাপ ফেলেছিলেন। সেটা ছিল ১৯৩৯ সাল। ১৯৪২ সালের অক্টোবরের মধ্যে প্রিন্স ফিলিপ হয়ে ওঠেন রয়্যাল নেভির তরুণতম ফার্স্ট লেফটেন্যান্ট।
এই সময় তারা দু’জন প্রচুর চিঠি চালাচালি করেছেন। বেশ কয়েকবার রাজপরিবারের সঙ্গে থাকার আমন্ত্রণও পেয়েছেন তিনি। এরকমই একটি সফরের পর ১৯৪৩ সালের বড়দিনের সময় এলিজাবেথ তাঁর প্রসাধনের টেবিলে প্রিন্সের একটি ছবি সাজিয়ে রাখেন।
তাঁদের সম্পর্ক গভীর হয়ে ওঠে যুদ্ধ পরবর্তী দিনগুলোতে। কিন্তু তাঁদের এই সম্পর্কের বিরোধিতা করেছিলেন রাজপরিবারের কেউ কেউ। কারণ তারা মনে করতেন ফিলিপের আচরণ “রুক্ষ্ম ও খুব ভদ্রোচিত” নয়।
কিন্তু প্রিন্সেস এলিজাবেথ বেশ ভালোভাবেই ফিলিপের প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। ১৯৪৬এর গ্রীষ্মে ফিলিপ রাজার কাছে গিয়ে তাঁর কন্যাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন এবং প্রথম সাক্ষাতের আট বছর পর তাঁরা বিয়ে করেন। বিয়ের আগে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নিতে হয় ফিলিপকে। গ্রিক পদবী বাদ দিয়ে তিনি নেন মায়ের ইংরেজ পদবী মাউন্টব্যাটেন।
ওয়েস্টমিনস্টার গির্জায় ১৯৪৭ সালের ২০শে নভেম্বর তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সেই সময় উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন যুদ্ধ পরবর্তী ব্রিটেনের ধূসর দিনগুলিতে ওই বিয়ে ছিল “রং-এরঝলকানি।”
সংক্ষিপ্ত কেরিয়ার
তাঁদের বিবাহিত জীবনের শুরুটা ছিল খুবই আনন্দঘন। এক সময় রয়্যাল নেভিতেও সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে তাঁর কেরিয়ার, বিয়ের পর তাঁর পোস্টিং হয় মাল্টায় কিন্তু এই জীবন খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। তাঁদের প্রথম সন্তান প্রিন্স চার্লসের জন্ম হয় বাকিংহাম প্রাসাদে ১৯৪৮ সালে। তার দু’বছর পর ১৯৫০ সালে জন্ম হয় কন্যা প্রিন্সেস অ্যানের।
পিতা হিসাবে বেশ কড়া ছিলেন ডিউক। অনেকে মনে করতেন তিনি ছেলেমেয়েদের ব্যাপারে স্পর্শকাতর নন। প্রিন্স চার্লসের জীবনীকার জনাথান ডিম্বলবি লিখেছেন তাঁর অল্প বয়সে সবার সামনে বাবা তাঁকে এমনভাবে তিরস্কার করতেন যে তাঁর চোখে জল এসে যেত। বাবা ও বড় ছেলের সম্পর্ক কোনো সময়ই সহজ ছিল না।
চার্লসের জন্য বোর্ডিং স্কুলের কঠোর জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার যে নীতি তিনি নিয়েছিলেন তা বাবা ও ছেলের মধ্যে একটা টানাপোড়েন তৈরি করেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল ছেলে যখন ছোট তখন বাবা হয়ে তাঁর মনের কথা বোঝার চেষ্টা তিনি করেন নি।
প্রিন্স ফিলিপ শারীরিক অসুস্থতার কারণে লন্ডনের কিং এডওয়ার্ড হাসাপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১৬ই ফেব্রুয়ারি। পরে লন্ডনের সেন্ট বার্থলোমিউ হাসপাতালে তার পুরনো হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণে তার সফল অস্ত্রোপচারও হয়েছিল। প্রায় এক মাস চিকিৎসার পর তিনি উইন্ডসর কাসেলে ফিরে যান। সেখানেই আজ তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সূত্র: বিবিসি।