নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: রাজধানীর সড়কে যানজট সমস্যার যেন কোনো সমাধান নেই, বরং দিন দিন তা প্রকট আকার ধারণ করছে! একদিকে রাস্তাগুলো সংকুচিত হচ্ছে; অন্যদিকে বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা, অ্যাম্বুলেন্স, রিকশা, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, মালবাহী ভ্যান, কাভার্ডভ্যান, ঠেলাগাড়ি ও ট্রাকের সংখ্যা বাড়ছে। বস্তুত সড়কের তুলনায় যানবাহনের মাত্রাতিরিক্ত সংখ্যাধিক্য এবং অবাধ ও অনিয়ন্ত্রিত চলাচলই যানজট বৃদ্ধির অন্যতম কারণ, যার ধকল পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
পরিকল্পিত শহরের মানদণ্ড অনুযায়ী একটি শহরের কমপক্ষে ২৫ ভাগ সড়ক থাকা জরুরি হলেও ঢাকা শহরে এর পরিমাণ মাত্র ৭ ভাগ। এ পরিমাণ সড়কে চার লাখের কিছু বেশি গাড়ি স্বচ্ছন্দে চলতে পারলেও বর্তমানে এখানে চলাচল করছে অন্তত সাড়ে ১৭ লাখ যানবাহন। কম সড়কে বেশি যানবাহন চলাচল করায় স্বভাবতই একদিকে সেগুলোর গতি হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে যানজট তীব্র আকার ধারণ করছে। এতে মানুষের বিপুল পরিমাণ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।
তদুপরি এ বিশৃঙ্খলাজনিত কারণে অনেকে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। উপরন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকার ফলে যাত্রীদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে, যা নানা রোগের উৎস হিসাবে কাজ করছে। প্রশ্ন হলো, এ অবস্থা থেকে কি নগরবাসীর মুক্তি নেই?
এক গবেষণার হিসাব অনুযায়ী, যানজটের কারণে ঢাকায় প্রতিবছর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় ২৫ হাজার থেকে ৪২ হাজার কোটি টাকা। যানজট পরিস্থিতি দিন দিন যেভাবে খারাপ হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যতে এ ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং যানজট নিরসনে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এ ক্ষতির অন্তত ৬০ শতাংশ বা ২২ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব।
বলার অপেক্ষা রাখে না, রাজধানীর যানজট সমস্যার অন্যতম সমাধান হলো সড়কের সংখ্যা ও পরিসর বৃদ্ধি এবং জনগণের যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত মানসম্পন্ন গণপরিবহণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। বস্তুত মানসম্পন্ন গণপরিবহণের অভাবেই ঢাকার রাস্তায় প্রাইভেট কার ও মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, রাজধানীতে এখন গাড়ির গতি এবং মানুষের পায়ে হাঁটার গতি প্রায় সমান।
সরকার অবশ্য যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার, ওভারপাস, ইউলুপ ও ইউটার্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনার সুপারিশ উপেক্ষিত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বস্তুত এর ফলে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও যানজট কমছে না। তবে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে যানজট কিছুটা কমে আসতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অবশ্য পরিকল্পনা অনুযায়ী মেট্রোরেলের পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ মেট্রোতে চলাচল করতে পারবে। বাকি প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষকে বিদ্যমান যানবাহন ব্যবস্থায়নই সড়কে চলাচল করতে হবে। এজন্য বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের বাস্তবায়ন জরুরি।
যানজটের একটি বড় কারণ, সড়কের সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ যথাসময়ে ও সঠিকভাবে সম্পন্ন না হওয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হলে রাজধানীর যানজট ৮০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। রাজধানীবাসীর জীবনযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে যানজট সমস্যা সমাধানের বিকল্প নেই।
আরো পড়ুন:
খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ও শান্তিকালীন পদকপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের সংবর্ধনা