প্রচ্ছদ

বেপরোয়া রাইডারদের নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: রাজধানীবাসীর কাছে যাতায়াতের ভোগান্তি কমাতে এক সময় আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল অ্যাপ-চালিত মোটরসাইকেল সেবা। কিন্তু ৫ বছর যেতে না যেতেই সেই সেবা এখন রূপ নিয়েছে ভয়াবহ যন্ত্রণা আর ভোগান্তিতে। অ্যাপে রাইড না পাওয়া, অতিরিক্ত ভাড়া প্রদর্শন আর মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে অ্যাপ রেখে ‘খ্যাপে’ যাওয়ার প্রতিযোগিতা। ফলে সড়কে বিশৃঙ্খলা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে নানা রকম দুর্ঘটনা আর অপরাধ।

রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে হরহামেশা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অসংখ্য বাইক রাইডারকে। আইন অনুযায়ী অ্যাপের কলে যাত্রীসেবা দেওয়ার কথা থাকলেও সে আইনের তোয়াক্কা করেন না তারা। অ্যাপ নয়, খ্যাপেই তাদের বেশি আগ্রহ। তাই প্রশ্ন আসছে অ্যাপের কলে কেনো তাদের এতো অনীহা?

এক বাইক রাইডার বলেন, পান্থপথ থেকে মালিবাগ রেলগেট বাস স্টপ দূরত্ব আসছে ০ কি.মি.। ৪০ মিনিটই রাস্তায় জ্যামে থেকে আসার পর আমি ভাড়া পেয়েছি ৩৮ টাকা। প্রধান সমস্যা হলো তারা ২৫ শতাংশ টাকা কেটে নেয়। অনেক সময় যাত্রীর রিকোয়েস্ট অনেক দূর থেকে আসে, সেক্ষেত্রে যাত্রী নিয়ে আসতে আমাদের দূরে যেতে হয় কিন্তু আমরা সেই যাওয়ার টাকাটা পাই না।

অ্যাপ-চালিত মোটরসাইকেল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও ভিন্ন সুর আছে অনেক রাইডারদের মধ্যে। তাদের ভাষ্য অ্যাপে আয় কম হলেও নিরাপত্তাই তাদের প্রধান ভরসা।

রাইডার নাসের বলেন, অ্যাপসে প্রথমে বলব এটা আমার সেফটি, আমার গাড়ির সেফটি। আর আয়ের দিক থেকে আমার অনেক লস। তারা কমিশনটা কেটে নিচ্ছে অনেক বেশি। এছাড়াও অ্যাপসে ভাড়াটাও অনেক কম আসে।

অভিযোগ আছে, রাইডাররা যেমন খ্যাপে যেতে আগ্রহী তেমনই যাত্রীদের মধ্যেও আছে অ্যাপ রেখে খ্যাপে যাওয়ার প্রবণতা। সময় বাঁচানো, রাইড না পাওয়া আবার কেউবা দেখাচ্ছেন অ্যান্ড্রয়েড সেট না থাকার অজুহাত। ফলে প্রশ্রয় পাচ্ছেন অবৈধ এসব খ্যাপাররা।

এক যাত্রী বলেন, আমি আসলে ধানমন্ডি থেকে এসেছি। অনেক সময় দেখা যায় ধানমন্ডি ৩২ থেকে বাইকের জন্য রিকোয়েস্ট পাঠালে অনেক দূরে পায়। আর আমার একটু জরুরি ছিল এ জন্য আমি খ্যাপে চলে আসছি।

আরেক যাত্রী বলেন, আমি এখন মিরপুরে যাব। আমার ফোনে মেগাবাইট নেই, তাছাড়া পাঠাও অ্যাপে সংযোগ করা সময়ের ব্যাপার। আমার সময় স্বল্পতার কারণে আমি খ্যাপে  চলে আসছি।

রাস্তার মোড়ে মোড়ে লোকাল বাসের মতো যাত্রীর জন্য ডাকাডাকি করতে দেখা যায় রাইডারদের। ‘কই যাবেন’, ‘যাবেন নাকি’- এ বাক্যগুলো শুনে প্রায়ই বিরক্ত পথচারীরা। কিন্তু পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেও এ নিয়ে নির্বিকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিতরা। এদের দমনে তেমন কোনো তৎপরতাও চোখে পড়েনি।

সার্জেন্ট মো. আসাদুজ্জামান জুয়েল বলেন, এ ব্যাপারে আসলে আমরা প্রতিদিন স্বোচ্চার। আমরা যখন সুযোগ পাই তখন আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। বিআরটিএ থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে যে, যারা রাইড শেয়ারিংয়ের আন্ডারে এনলিস্টেড তারা চালাতে পারে আর যারা নেই তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।

রাইডারদের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে অ্যাপচালিত মোটরসাইকেল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে অতিরিক্ত কমিশন কেটে নেওয়া ও অ্যাপে গেলে ভাড়ায় না পোষানো অন্যতম। এদিকে একই দূরত্বে সময়ভেদে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে পাঠাও কর্তৃপক্ষের সাথে বারবার যোগাযোগ করলেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি। তবে ও ভাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে অবৈধ খ্যাপের কারণে পর্যাপ্ত কল না থাকায় তারা তাদের বাইকের কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন।

‘ও ভাই’ এর সিনিয়র ম্যানেজার সৈয়দ ফখরুদ্দিন মিল্লাত বলেন, অ্যাপ ছাড়া রাইডারদের বাইক চালানোর যে অভ্যাসটা তৈরি হয়েছে সেটার কারণে আমাদের বাইক সার্ভিস সাময়িক বন্ধ রেখেছি। আমরা চেষ্টা করছি রাইডের চাহিদা পূরণ করার জন্য। বিআরটিএ-এর সহযোগিতা চেয়েছি ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও সহযোগিতা চেয়েছি।

এদিকে অবৈধ রাইডারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিআরটিএ। এ ছাড়া যে সব রাইডার অ্যাপে না গিয়ে খ্যাপে যাচ্ছেন, তাদের বিস্তারিত চেয়েও সহায়তা চেয়েছেন তারা।

বিআরটিএ-এর পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও কথা বলেছি। এটা কীভাবে বন্ধ করা যায় এ ব্যাপারে আমরা সবাই সঙ্গেই আলোচনা করছি। যারা কন্ট্রাক্টে এসব পরিচালনা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আর যাত্রীরা যদি গাড়ির নম্বর উল্লেখ করে আমাদের কাছে অভিযোগ করে তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে জর্জরিত অ্যাপচালিত মোটরসাইকেল সেবা। ফলে বেড়েছে খ্যাপ, ভুক্তভোগী হচ্ছেন যাত্রীরা। ব্যবসা নিয়েও ঝুঁকিতে অ্যাপচালিত মোটরসাইকেলের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তাই সবার প্রত্যাশা সুষ্ঠু নীতিমালার মাধ্যমে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক অ্যাপভিত্তিক এ সেবায়।

আরো পড়ুন:

চুরি-ছিনতাই নিয়ন্ত্রণে সিসিটিভি লাগানোর পরামর্শ ডিবির

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *