সর্বশেষ

রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফের প্রস্তুতি

রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফের প্রস্তুতি

রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফের প্রস্তুতি যেভাবে নিবেন তা নিয়েই আজকের এই আলোচনা। রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতিকাফ। ইতিকাফ হলো দৈনন্দিন জীবনের কাজ ও ব্যস্ততা থেকে অবসর হয়ে ইবাদত-বন্দেগির জন্য মসজিদে অবস্থান করা।

মূলত ইতিকাফের মাধ্যমে ব্যক্তি রমজানের শিক্ষা ও দীক্ষায় পূর্ণতা লাভ করে এবং রমজানের কল্যাণ ও বরকতে অবগাহন করে। ব্যক্তিগত পর্যায়ে ইতিকাফ করা মুস্তাহাব এবং সামাজিক পর্যায়ে সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কেফায়া।

কোনো সমাজের কেউ ইতিকাফ না করলে এলাকার সবাই সুন্নত পালন না করার জন্য গুনাহগার হবে।

নবীজি (সা.)-এর প্রিয় আমল ইতিকাফ : ইতিকাফ মহানবী (সা.)-এর প্রিয় আমলগুলোর একটি। তিনি আমৃত্যু ইতিকাফ করেছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর তাঁর সহধর্মিণীরাও (সে দিনগুলোতে) ইতিকাফ করতেন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৬)

ইতিকাফ শুধু বৃদ্ধদের জন্য?: বর্তমান সমাজের সাধারণ প্রবণতা হলো সাধারণত বৃদ্ধরাই শুধু ইতিকাফ করেন। বহু মসজিদ এমন আছে, যেখানে স্বেচ্ছায় কেউ ইতিকাফ করতে রাজি হন না, তখন সমাজের পক্ষ থেকে গরিব ও অসহায় মানুষকে অর্থের বিনিময়ে ইতিকাফে বসানো হয়। সমাজের এই চিত্র সন্দেহাতীতভাবে দুঃখজনক।

প্রকৃতার্থে ইতিকাফ মুমিনের জীবনে যে শৃঙ্খলা ও সংযম নিয়ে আসে তা কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধ সবার জন্য অপরিহার্য। বিশেষত মসজিদের সঙ্গে যুবকদের একটি সুন্দর সম্পর্ক গড়ে দিতে পারে ইতিকাফ। তাই ইতিকাফের ব্যাপারে সমাজের উদাসীনতা সত্যিই দুঃখজনক। ইমাম জুহরি (রহ.) বলেন, আশ্চর্য! মানুষ কিভাবে ইতিকাফ ছেড়ে দিয়েছে। রাসুল (সা.) কোনো কোনো আমল করতেন এবং তা ছেড়েও দিতেন। কিন্তু মদিনায় আগমনের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি কখনো ইতিকাফ ছেড়ে দেননি। ’ (রামাদান য়ুবনিল কিয়ামা, পৃষ্ঠা ৪৪)

ইতিকাফের জন্য প্রস্তুতি কেন প্রয়োজন : আতা (রহ.) বলেন, ইতিকাফকারীর দৃষ্টান্ত হলো সেই ব্যক্তির মতো, কোনো বড় ব্যক্তির কাছে যার প্রয়োজন থাকে। ফলে সে তার দরজায় বসে থাকে এবং বলে, আমার প্রয়োজন পূরণ না করা পর্যন্ত আমি সরব না। তেমনিভাবে ইতিকাফকারী আল্লাহর দরজায় বসে থাকে এবং বলে, আমাকে ক্ষমা না করা পর্যন্ত আমি সরব না। ’ (রামাদান য়ুবনিল কিয়ামা, পৃষ্ঠা ৪৪)

অর্থাৎ ইতিকাফ হলো আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা ও কল্যাণ লাভ করার মোক্ষম সুযোগ। আর তা সম্ভব হবে যদি ব্যক্তি পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণের পর ইতিকাফ শুরু করে এবং সময়ের যথাযথ ব্যবহারে সক্ষম হয়।

যেভাবে নেব ইতিকাফের প্রস্তুতি : যেহেতু ইতিকাফকারী ব্যক্তি শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া মসজিদ ত্যাগ করতে পারে না এবং দীর্ঘ সময় মসজিদে অবস্থান করতে হয়, তাই যুক্তির দাবি হলো ইতিকাফকারীরা পূর্ব থেকেই ইতিকাফের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করবে। নিম্নে এমন কিছু প্রস্তুতির কথা বলা হলো—

১. মানসিক প্রস্তুতি : ইতিকাফকারীকে প্রথমেই ইতিকাফের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা মসজিদে অবস্থানের কারণে তার স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় যে সামান্য পরিবর্তন আসবে তা মেনে নিতে হবে। বিশেষত ইতিকাফের সময়টুকু ইবাদতে পরিণত করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে।

২. নিয়তের বিশুদ্ধতা : ইতিকাফ পূর্ব থেকেই তার নিয়ত শুদ্ধ করে নেবে। ইতিকাফের পারিপার্শ্বিক কোনো কারণও যদি থেকে থাকে, তবে তা মন থেকে মুছে ফেলে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে অগ্রাধিকার দেবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা শুধু সে আমলই গ্রহণ করেন, যা একনিষ্ঠ হয়ে শুধু তাঁর জন্য করা হয় এবং যার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়। ’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩১৪০)

৩. মসজিদ নির্বাচন : পুরুষের জন্য যেকোনো জামে মসজিদে ইতিকাফ করা বৈধ। যেন ব্যক্তির পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমার জামাত ছুটে যাওয়ার ভয় না থাকে। তবে মসজিদ নির্বাচনের সময় মসজিদের অবস্থানের সুবিধা-অসুবিধা, নিরাপত্তাব্যবস্থা, খাবার সরবারহ ও সংগ্রহের সুযোগ, অজু-গোসলের ব্যবস্থাগুলো বিবেচনা করা যেতে পারে। যেন আনুষঙ্গিক কারণগুলো ইবাদতে মগ্ন থাকার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি না করে।

৪. ব্যস্ততা পরিহার : ইতিকাফের সময়গুলো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কাজেই ব্যয় হওয়া প্রয়োজন। তাই ইতিকাফের আগে ব্যক্তিগত ও সাংসারিক ব্যস্ততাগুলো শেষ করা উচিত। যেন ইতিকাফ শুরু করার পর অন্যমনষ্ক হতে না হয়।

৫. প্রয়োজনীয় আসবাব সংগ্রহ : ইতিকাফের সময় ব্যক্তি মসজিদে অবস্থান করে। তাই সেখানে অবস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবগুলো আগে থেকে প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। যেমন ঘুমের জন্য বিছানা-বালিশ, প্রয়োজনীয় কাপড়, টয়লেট টিস্যু, সাবান, পানির পাত্র, প্লেট-গ্লাস, মূল্যবান জিনিস সংরক্ষণের জন্য তালা দেওয়া যায়—এমন ব্যাগ বা লাগেজ ইত্যাদি।

৬. অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য সতর্কতা : ইতিকাফের আগে অসুস্থ ব্যক্তিরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করবে। সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ইতিকাফ করলে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করবে। যারা নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করেন, তাঁরা ইতিকাফের আগে প্রয়োজনীয় ওষুধ সংগ্রহ করে নেবেন।

৭. সময়সূচি নির্ধারণ করা : মসজিদে অবস্থানের সময়টুকু ফলপ্রসূ করতে ইতিকাফকারী প্রতিদিনের আমলের একটি সময়সূচি নির্ধারণ করে নিতে পারেন। যার ভেতরে থাকতে পারে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির ও তাসবিহ পাঠ, তাহাজ্জুদ ও নফল নামাজ, শরিয়তের বিধি-বিধান সংক্রান্ত গ্রন্থাদি পাঠ ইত্যাদি।

সর্বোপরি ইতিকাফের আগে অবশ্যই নিজের পাপ-পঙ্কিলতাগুলো থেকে তাওবা করতে হবে। যেন আল্লাহ ইতিকাফের মাধ্যমে একটি নির্মল জীবন দান করেন। আল্লাহ সবাইকে যথাযথভাবে ইতিকাফ করার তাওফিক দিন। আমিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *