খেলাধুলা

যে কোনো সময় ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সাকিব

ক্রীড়া প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: রান পাচ্ছিলেন না গত কিছুদিন। কাল শেষে হাসল তার ব্যাট, সেটা এমন দিনে যেদিন তিনি না দাঁড়ালে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে ম্যাচ জেতা। সাকিব আল হাসানের অপরাজিত ৯৬ রানের ওপর ভর করে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।

অনেকেই তার ব্যাটিং নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তবে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল একটুও নন। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগের দিনও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সম্প্রতি সাকিব আল হাসানের ব্যাট হাতে তেমন কিছু করতে না পারার প্রসঙ্গ উঠতেই বলে দিয়েছিলেন, ‘সাকিবের পর্যায়ের ক্রিকেটাররা যেকোনো ম্যাচে, যেকোনো পর্যায়েই’

ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’ সাকিব পারলেনও। তাও আবার কোন সময়ে? যখন সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দলের টপ ও মিডল অর্ডারের অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় দলের হারের আশঙ্কা তৈরি হলো এবং হারলে যেখানে আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগে মূল্যবান ১০টি পয়েন্ট হারানোর পাশাপাশি জিম্বাবুয়েও সিরিজে চলে আসে সমতায়, তখনই এক প্রান্ত আগলে দাঁড়িয়ে গেলেন সাকিব। একের পর এক সঙ্গীকে হারাতে হারাতে যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থা, তখন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত দলকে জয়ের তীরও দেখালেন। দেখতে পাচ্ছিলেন নিজের দশম ওয়ানডে সেঞ্চুরিও। তবে সে জন্য ঝুঁকিও নিলেন না একদম। জয় নিশ্চিত রাখার ভাবনায় রয়েসয়ে খেলা সাকিবের তাই সেঞ্চুরিই আর পাওয়া হলো না। তবে শেষ ওভারের প্রথম বলে ব্লেজিং মুজারাবানিকে বাউন্ডারি মেরে ৫ বল বাকি থাকতেই দলকে ৩ উইকেটের জয় এনে দেওয়া সাকিব অপরাজিত থেকে গেলেন ৯৬ রানে।

এর আগে বল হাতেও ৪২ রানে ২ উইকেট নেওয়া সাকিবের ব্যাটে আসা জয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতে সিরিজও জেতা হয়ে গেল বাংলাদেশের। সফরকারীরা ২০ জুলাইয়ের শেষ ম্যাচটিও জিততে চায়। কারণ এই সিরিজ থেকে ওয়ানডে সুপার লিগের জন্য যে পুরো ৩০ পয়েন্টই চাই তামিমদের। এর আগে কালকের জয়ে জিম্বাবুয়ের মাটিতে প্রায় এক যুগ পর ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। এর আগে সবশেষ সিরিজ জেতার ঘটনা ২০০৯ সালে। ২০১৩ সালের সবশেষ সফর থেকে ২-১ এ ওয়ানডে সিরিজ হেরে ফিরতে হয়েছিল এবারের বিজয়ীদের। এবার শেষ ম্যাচটিও সিরিজ ভাগ্য নির্ধারণী হয়ে উঠে কি না, সেই সংশয় জাগার ম্যাচেই সাকিব রানে ফিরলেন। তার সহযোগীর ভূমিকায় উত্তীর্ণ অলরাউন্ডার সাইফ উদ্দিনও। সপ্তম উইকেটে সাকিবের সঙ্গে তার অবিচ্ছিন্ন ৬৯ রানের পার্টনারশিপেই বিসর্জনে যায় স্বাগতিকদের জয়ের স্বপ্ন। ৩৪ বলে ২৮ রান করে অপরাজিত থাকেন সাইফ। ৮ বাউন্ডারিতে সাজানো ১০৯ বলের ইনিংসে দুবার জীবন পাওয়াই হয়তো সাকিবকে শেষদিকে সাবধানী ব্যাটিংয়ে আরো উৎসাহী করে থাকবে। তাই শেষ পর্যন্ত সেঞ্চুরি না করেও হতে পারলেন জয়ের নায়ক। অসাধারণ ইনিংসে দিনটিকে বানিয়ে নিলেন নিজেরই।

অবশ্য এমন নয় যে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাই শুধু উইকেট ছুড়ে আসার মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। এর আগে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়েও দেখা গেছে একই চিত্র। বিশেষ করে দারুণ ছন্দে থাকা অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেলরই (৪৬) শট খেলার পর শ্যাডো করতে গিয়ে হয়েছেন হিট উইকেট। তার বিদায়ে খেই হারানো দল কিছুটা পথের দিশা খুঁজে পায় ওয়েসলি মাধভেরে (৫৬) এবং সিকান্দার রাজার (৩০) ষষ্ঠ উইকেটে গড়া ৬৩ রানের পার্টনারশিপে। মাধভেরেকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন ৪৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করা শরীফুল ইসলাম। শুরুতে টেলরের ব্যাটে বেদম মার খেয়েও মনোবল না হারিয়ে তরুণ এই পেসার ডেথ ওভারে দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন। সঙ্গী ছিলেন আরেক পেসার সাইফ উদ্দিনও। তিন পেসার মিলে ৬ উইকেট নেওয়ার দিনে জিম্বাবুয়েকে সাধ্যের বাইরে যেতে না দেওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রাখেন সাকিবও। কিন্তু অন্য ব্যাটসম্যানরা উইকেট বিলানোর প্রতিযোগিতায় মাতায় ব্যাটিংয়েও তাঁর রানে ফেরাটা জরুরি হয়ে পড়ে।

অথচ ২৪১ রানের লক্ষ্যে বাংলাদেশের শুরুটা বেশ সাবধানীই ছিল। অধিনায়ক তামিমের সঙ্গে নির্বিঘ্নেই পাওয়ার প্লে পার করে দিচ্ছিলেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান লিটন কুমার দাস। কিন্তু পাওয়ার প্লে শেষ ওভারেই বিপত্তি। পয়েন্টে ডাইভ দিয়ে সিকান্দার রাজার দুর্দান্ত ক্যাচে তামিম (২০) বিদায় নেন। কিছুক্ষণ পর বড় শট খেলার তাড়ায় থামেন লিটনও (২১)। আগের ম্যাচের ভুল থেকে শিক্ষা না নেওয়া মোহাম্মদ মিঠুনও (২) বাজে শটে দ্রুত অনুসরণ করেন তাঁকে। তাই বিনা উইকেটে ৩৯ থেকে হঠাৎই ৫০ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। বিপদ আরো বাড়িয়ে যান অপ্রয়োজনীয় ঝুঁকি নিয়ে রানআউটের খাড়ায় কাটা পড়া মোসাদ্দেক হোসেনও (৫)। তবে সেখান থেকে মাহমুদ উল্লাহকে নিয়ে ৫৫ রানের জুটিতে বিপদ অনেকটাই সামলে নিয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু মুজারাবানির লাফিয়ে ওঠা বলে মাহমুদও (২৬) উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে আবারও চাপে পড়ে বাংলাদেশ। যে চাপ আরো বাড়িয়ে যাওয়ার দায় দুই তরুণ মেহেদী হাসান মিরাজ (৬) ও আফিফ হোসেনের (১৫)। অফস্পিনার মাদভেরেকে অযথাই স্লগ সুইপে ওড়ানোর চেষ্টায় ধরা পড়েন সীমানায়। তবু যখন রান রেটের চাপ ছিল না এবং এক-দুই করে নিয়ে ভালোই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ, তখনই আরেক অফস্পিনার সিকান্দার রাজাকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে মারার নেশায় পেয়ে বসল আফিফকে। এর মাশুলও গুনলেন। তখনো জয় থেকে ৬৮ রান দূরে বাংলাদেশ। বল বাকি ছিল ৬৯। সেখান থেকে সাকিবকে যোগ্য সঙ্গ দেওয়ার কাজটি করলেন সাইফও।     

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *