জীবন ও পরিবার

যুবদের স্বাবলম্বী করে তুলছে যুব উন্নয়ন অধিদফতর

 নিখিল মানখিন, ধূমকেতু বাংলা: যুবদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, মেধা ও প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে মূলধন সরবরাহের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে চলেছে যুবউন্নয়ন অধিদফতর। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন এই অধিদফতর ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করে দিয়েছে। এতে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে অসংখ্য যুব। গত তিন বছরে ৯ লাখ ২ হাজার ৪৮৩ জনকে প্রশিক্ষণ এবং ১ লাখ ১৭ হাজার ৩৮২ জনকে আত্মকর্মসংস্থানের প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করা হয়েছে। সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মসূচী ও সেবার বিষয়ে জানার জন্য প্রবেশ করতে হবে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের এই ওয়েবসাইটে www.dyd.gov.bd. অধিদফতরটির ওয়েবসাইটে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

যুবউন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আজহারুল ইসলাম খান ধূমকেতু বাংলাকে জানান, যুবদের উন্নয়নে বহুমাত্রিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে সরকার। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন আনয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। বেকার যুবসমাজকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার লক্ষে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। জেলা পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ আবাসিক ও অনাবাসিক ভিত্তিতে প্রদান করা হয় বলে জানান মহাপরিচালক।

জেলা পর্যায়ের আবাসিক  প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহ :  

যুবউন্নয়ন অধিদফতর জানায়, জেলা পর্যায়ে যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিচালিত আবাসিক প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহের মধ্যে রয়েছে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগী পালন, প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য চাষ ও কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ, মৎস্য চাষ,  দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণ, চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষ, বিপণন ও বাজারজাতকরণ প্রশিক্ষণ, ছাগল ও ভেড়া পালন এবং গবাদি পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ, মহিষ পালন ও গবাদি পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ, মুরগী পালন ব্যবস্থাপনা, মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন প্রশিক্ষণ, উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্যজীবিদের জন্য দায়িত্বশীল মৎস্য আহরণ প্রশিক্ষণ, মাশরুম ও মৌ চাষ প্রশিক্ষণ কোর্সঃ লাইভস্টক এ্যাসিসটেন্ট প্রশিক্ষণ, প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইন বিষয়ক প্রশিক্ষণ,  ডাটাবেজ বিষয়ক প্রশিক্ষণ এবং নেটওয়াকিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ কোর্স।

জেলা পর্যায়ে পরিচালিত অনাবাসিক প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহঃ 

যুবউন্নয়ন অধিদফতর জানায়, জেলা পর্যায়ে পরিচালিত অনাবাসিক প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহের মধ্যে রয়েছে ওভেন সিউইং মেশিন অপারেটিং প্রশিক্ষণ, ট্যুরিস্ট গাইড প্রশিক্ষণ, পোশাক তৈরী প্রশিক্ষণ, ব্লক, বাটিক ও স্ক্রিন প্রিন্টিং  প্রশিক্ষণ, মডার্ন অফিস ম্যানেজমেন্ট এন্ড কম্পিউটার এ্যাপ্লিকেশন প্রশিক্ষণ, মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণ, ফ্যাশন ডিজাইন প্রশিক্ষণ, সেলসম্যানশীপ/ফ্রন্ট ডেস্ক ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণ,কম্বল তৈরি প্রশিক্ষণ কোর্সঃ হস্তশিল্প (ব্যাগ তৈরি) প্রশিক্ষণ, ফ্রিল্যান্স/আউট সোর্সিং প্রশিক্ষণ, ক্যাটারিং প্রশিক্ষণ এবং          আরবী ভাষা শিক্ষা প্রশিক্ষণ কোর্স।

জেলা পর্যায়ে পরিচালিত বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহঃ

জেলা পর্যায়ে পরিচালিত বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহের মধ্যে রয়েছে   ডিপেস্নামা ইন কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, বেভারেজ সার্ভিস (ক্যাটারিং সার্ভিস/ হাউজকিপিং এ- লন্ড্রি অপারেশনস) প্রশিক্ষণ, হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ এবং বিউটিফিকেশন এ- হেয়ার কাটিং প্রশিক্ষণ কোর্স।

উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণ

ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহের মেয়াদ ৭ দিন থেকে ২১ দিন। এটি অনাবাসিক প্রশিক্ষণ এবং এ প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য কোনও ফি দিতে হয় না। ইউনিট থানা ও উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে এ প্রশিক্ষণ কোর্স পরিচালনা করা হয়ে থাকে।

 দারিদ্র্য বিমোচন ও ঋণ কর্মসূচিঃ

যুবউন্নয়ন অধিদফতর জানায়, সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে বেকার যুবরা দারিদ্রের মধ্যে বসবাস করে। তাদের নিজস্ব কোনও সম্পদ ও কর্মসংস্থান না থাকায় তাদের পক্ষে খাদ্য, পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মত মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করা সম্ভব হয় না। দক্ষতাবৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে মানবেতর অবস্থা নিরসন এবং বেকার যুবদের জন্যে একটি সুখকর জীবনের ব্যবস্থা করা দারিদ্র্য বিমোচন ও ঋণ কর্মসূচির মুখ্য উদ্দেশ্য। বাংলাদেশের সকল উপজেলাতেই এ কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

পরিবারভিত্তিক কর্মসংস্থান কর্মসূচিঃ         

যুবউন্নয়ন অধিদফতর জানায়, পরিবারভিত্তিক ঋণ কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো পরিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে বেকার দরিদ্র জনগোষ্ঠির আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য দক্ষতাবৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে স্ব-কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। দেশের মোট ৩১০টি উপজেলায় ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের অনুমোদন থাকলেও জনবলের অভাবে ২৩৬টি উপজেলায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

এ কর্মসূচির আওতায় পরিবারের ঐতিহ্যগত পেশাকে কাজে লাগিয়ে বেকারত্ব নিরসন ও পারিবারিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য সমুন্নত রেখে কার্যক্রম সম্প্রসারণ, জীবনযাপনের মান ধাপে ধাপে উন্নয়নকল্পে পরিবারে সঞ্চয় অভ্যাস গড়ে তোলা এবং নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য-পরিচর্যা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং পরিবেশ উন্নয়নে জনগোষ্ঠিকে উদ্বুদ্ধ করা হয়। পরিবারভিত্তিক ঋণ কার্যক্রমের আওতায় একই পরিবারের অথবা নিকট আত্মীয় বা প্রতিবেশী পরিবারের পরস্পরের প্রতি আস্থাভাজনদের নিয়ে ৫ সদস্যের গ্রুপ গঠন করা হয়। একই গ্রামের স্থায়ী নিবাসী এরূপ ৮ থেকে ১০টি গ্রুপ নিয়ে একটি কেন্দ্র গঠিত হয়। কেন্দ্রের প্রত্যেক সদস্যকে ১ম, ২য়, ৩য়, দফায় যথাক্রমে সর্বোচ্চ ১২ হা্জার টাকা, ১৬ হাজার টাকা ও ২০ হাজার টাকা টাকা হারে ঋণ প্রদান করা হয়।

এছাড়া ৩য় দফা পর্যন্ত সফল ঋণ পরিশোধকারীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে একটি কেন্দ্র হতে সর্বোচ্চ ৫ জনকে আত্মকর্ম ঋণের নীতি পদ্ধতি অনুসরণ করে এন্টারপ্রাইজ ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। অধিদপ্তরের কর্মচারীগণ গ্রাম পর্যায়ে ঋণ বিতরণ এবং কেন্দ্র থেকে ঋণের কিস্তি সংগ্রহ করে। গ্রেস পিরিয়ড অর্থাৎ ঋণ পরিশোধের প্রস্তুতি সময় অতিক্রম করার পর সাপ্তাহিক কিস্তিতে ঋণের অর্থ আদায় করা হয়।

কোনও উপকারভোগীকে ঋণ গ্রহণ ও কিস্তি পরিশোধের জন্য অফিসে আসার প্রয়োজন হয় না। মূলধনের উপর ৫ শতাংশ  (ক্রমহ্রাসমান) সার্ভিস চার্জ আদায় করা হয়। এখানে সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধিত আসলের উপর পরবর্তীতে আর কোনও সার্ভিস চার্জ আদায় করা হয় না বিধায় মেয়াদ শেষে গড় সার্ভিস চার্জের হার প্রকৃত হিসেবে ২.৫ শতাংশ দাঁড়ায়। যারা সময়মত সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধ করেন তারাই সার্ভিস চার্জের ক্ষেত্রে বর্ণিত ২.৫ শতাংশের সুযোগ পেয়ে থাকেন। এ ঋণ প্রাপ্তির জন্যে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। তবে মনোনীত সদস্যদের ৫দিনব্যাপী আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ঋণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির উপর গ্রাম পর্যায়ে কেন্দ্রভিত্তিক ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা  করা হয়। পরিবারভিত্তিক ঋণ কার্যক্রমের ক্রমপুঞ্জিত ঋণ আদায়ের হার ৯৭ শতাংশ।

যুব প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচিঃ

যুব প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় দেশের ৬৪টি জেলা ও ৪৯৬টি উপজেলায় (১০টি মেট্রোপলিটন ইউনিট থানাসহ) কার্যক্রম রয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় জেলা সদরে উপ-পরিচালকের কার্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে। এসব প্রশিক্ষণ কোর্সের মেয়াদ ১ মাস হতে ৬ মাস পর্যন্ত। এছাড়া স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন ট্রেডে স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য ৪৯৬টি উপজেলায় স্বল্প মেয়াদি অপ্রাতিষ্ঠানিক ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।

দেশব্যাপি পরিচালিত যুবদের আত্মকর্মসংস্থান ও আয় সঞ্চারণমূলক কর্মকাণ্ড বেকার সমস্যা সমাধান এবং দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। এ কর্মসূচির আওতায় প্রশিক্ষিত বেকার যুবদেরকে আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক/অপ্রাতিষ্ঠানিক ট্রেডে একক (ব্যক্তিকে) ঋণ প্রদান করা হয়। প্রাতিষ্ঠানিক ট্রেডে একজন প্রশিক্ষিত যুবক/যুবমহিলাকে ৬০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক ট্রেডে ৪০ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ প্রদান করা হয়।

জেলা ও উপজেলায় দুটি কমিটির মাধ্যমে যথাক্রমে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ অনুমোদন করা হয়। ঋণ প্রাপ্তির জন্য একজন ঋণ গ্রহিতাকে ২ জন জামিনদার নিশ্চিত করতে হয় এবং প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক ট্রেডে প্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক। গ্রেস পিরিয়ড অর্থাৎ ঋণ পরিশোধের প্রস্তুতি সময় অতিক্রম করার পর বিভিন্ন ট্রেডের জন্য নির্ধারিত মেয়াদে মাসিক কিস্তিতে ঋণের অর্থ আদায় করা হয়।

মঞ্জুরকৃত ঋণ পাওনার উপর ৫ শতাংশ (ক্রমহ্রাসমান) হারে সার্ভিস চার্জ আদায় করা হয়। এখানে মাসিক কিস্তিতে পরিশোধিত আসলের উপর পরবর্তীতে আর কোন সার্ভিস চার্জ আদায় করা হয় না বিধায় মেয়াদ শেষে গড় সার্ভিস চার্জের হার প্রকৃত হিসেবে ২.৫ শতাংশে দাঁড়ায়। তবে মনে রাখা প্রয়োজন যারা সময়মত মাসিক কিস্তি পরিশোধ করেন তারাই সার্ভিস চার্জের ক্ষেত্রে বর্ণিত ৫ শতাংশের সুযোগ পেয়ে থাকেন। এ কর্মসূচির ক্রমপুঞ্জিত ঋণ আদায়ের হার ৯৫ শতাংশ।

আরো পড়ুন:

বাল্যবিয়ে হলেও স্কুল ছাড়েনি তারা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *