ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক পর্যায়ে পড়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা স্যাট। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের আগে স্যাট পরীক্ষায় বসে গণিতে ৮০০ তে ৮০০ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রিফাত আলবার্ট বারী অপূর্ব। এই ফল দিয়ে অপূর্ব এখন পড়তে পারবেন এমআইটি কিংবা হার্ভার্ডে। ৮ বারের চেষ্টায় এমন ফল পেয়েছেন অপূর্ব। শুনিয়েছেন তার এই অর্জন এবং মেধাবী পরিবারের গল্প।
রিফাত আলবার্ট বারী। বাবা-মায়ের কাছে অপূর্ব নামেই বেশি পরিচিত। অপূর্ব এবার সত্যিই অপূর্ব এক ঘটনা ঘটিয়েছেন। স্যাট পরীক্ষায় পেয়েছেন গণিতে ৮০০ তে ৮০০ নম্বর। অপূর্বের বাবা রাশীদুল বারীও বাংলাদেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত নাম। লিখেছেন ১৩টি বই। আছে ‘বারী সায়েন্স ল্যাব’ নামে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। যদিও রাশীদুল বারী এটি পরিচালনা করেন দুই ছেলে রিফাত আলবার্ট বারী অপূর্ব এবং সুবর্ণ আইজ্যাক বারীকে নিয়ে। রাশীদুল বারী যুক্তরাষ্ট্রের ইয়র্ক কলেজের গণিতের লেকচারার। বাবার কাছেই অপূর্বের গণিতে হাতেখড়ি। ছোটবেলা থেকেই বাবা নিজের স্বপ্নের বীজ বুনে দিয়েছেন সন্তানদের মাঝে। সেই স্বপ্নের ডানায় চড়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তাদের দুই সন্তান। অপূর্বের এ ফল অনেকটা চাপা পড়ে যায় তার ছোট ভাইয়ের মেধার কাছে! ইতোমধ্যে ছোট ভাই সুবর্ণ আইজ্যাক বারী বিশ্বজুড়ে খুদে আইনস্টাইন নামে ঝড় তুলেছেন।
গণিতে ৮০০ তে ৮০০
যুক্তরাষ্ট্রে স্নাতক পর্যায়ে পড়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা স্যাট। যে কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের জন্য কতটুকু প্রস্তুত, এ পরীক্ষার মাধ্যমে তা যাচাই করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনের সঙ্গে স্যাট স্কোর জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এ পরীক্ষার মোট সময় ৩ ঘণ্টা। আর অপশনাল হিসেবে থাকা Essay সেকশনে অংশ নিলে মোট সময়ের সঙ্গে আরও ৫০ মিনিট যোগ হয়। আগে Essay সেকশন বাধ্যতামূলক থাকলেও নতুন স্যাটে এটি অপশনাল। মূল স্যাট ১৬০০ নম্বরের আর রচনায় তিনটি সেকশনে মোট ২৪ নম্বরের। এই দুটি একসঙ্গে হিসাব করা হয় না। দ্বিতীয়ত, অনেক বিশ্ববিদ্যালয় Essay চায় এবং অনেক বিশ্ববিদ্যালয় চায় না। স্যাটে সর্বনিম্ন ৪০০ এবং সর্বোচ্চ ১৬০০ নম্বর পাওয়া সম্ভব। পরীক্ষার্থীরা গড়ে ১০৬০ পেয়ে থাকেন। ম্যাথমেটিকস সেকশনে অধিকাংশ প্রশ্নই এমসিকিউ ধরনের। ভুল উত্তরের জন্য নম্বর কাটে না। এর মধ্যে প্রথম ভাগে আসা ২০টি প্রশ্নে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যায় না। তবে পরের প্রশ্নগুলোতে সায়েন্টেফিক ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যায়। পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতি-সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানজনিত প্রশ্ন মানে অঙ্কে ভালো হলে এখানে অনেকটাই এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। আর গণিতে ৮০০ নম্বরের পুরোটা পাওয়া তো অসম্ভব। সেই অসম্ভবকে এবার সম্ভব করেছেন অপূর্ব। গণিতে পেয়েছেন ৮০০ তে ৮০০ নম্বর।
একবার না পারিলে দেখ ৮ বার!
প্রথম চেষ্টায় সফল না হলে বারবার চেষ্টা করতে হয়। বাবার এই মন্ত্রে চেষ্টা চালিয়ে যান রিফাত। একবার-দু’বার নয়; একে একে অষ্টমবারে এসে পেয়েছেন ৮০০-এর দেখা। মজা করে তাই বলেছি, নবম বার দিলে ৯০০ নম্বর পেয়ে যেতে পারেন। অপূর্ব লাজুক হাসি দিয়ে বলেন, ‘আসলে আমার একটা জেদ ছিল- স্যাট পরীক্ষায় গণিতে ৮০০ পেতেই হবে। সেই জেদ আর বাবার উৎসাহে অষ্টম বারে এসে পেয়েছি সাফল্য।’ এই ফল পুঁজি করে অপূর্ব এখন চাইলেই পড়তে পারবেন যুক্তরাষ্ট্রের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় এমআইটি কিংবা হার্ভার্ডের মতো নামি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী অধ্যাপক
অপূর্বের ছোট ভাই সুবর্ণ আইজ্যাক বারী যুক্তরাষ্ট্রের ‘বিস্ময় বালক’ হিসেবে পেয়েছেন খ্যাতি। সুবর্ণ গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, সন্ত্রাসবিরোধী ক্যাম্পেইন ও নিজের লেখা ‘দ্য লাভ’ বইয়ের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে চাইল্ড প্রডিজি হিসেবে পান ব্যাপক পরিচিতি। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় সুবর্ণ বারীকে একজন অধ্যাপক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০১২ সালের ৯ এপ্রিল নিউইয়র্কে জন্ম সুবর্ণের। পিএইচডি স্তরের গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের সমস্যা অনায়াসে সমাধান করে ৮ বছর বয়সেই বিশ্বে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের সবচেয়ে কম বয়সী এই অধ্যাপককে বিশেষ সম্মাননা জানিয়েছেন নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো। কুমো বলেন, “সুবর্ণ এমন এক ব্যক্তি, যিনি খুব অল্প বয়সেই বিশ্বে ইতিবাচক পার্থক্য তৈরি করেছেন। গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান, সন্ত্রাসবিরোধী ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন। গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে তার অর্জন প্রশংসাযোগ্য। নিউইয়র্কবাসীর পক্ষ থেকে আমি আপনার প্রশংসা করছি। কারণ, ‘দ্য লাভ’ গ্রন্থের মাধ্যমে আপনি সব ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতি এবং সহনশীলতা দেখিয়েছেন। অভিনন্দন আপনাকে। আপনার সাফল্য অব্যাহত থাকুক। আপনার জন্য শুভকামনা।”
২০২০ সালের ১৭ অক্টোবর গভর্নরের পক্ষ থেকে সাড়ে ৮ বছর বয়সী বিজ্ঞানী সুবর্ণ আইজ্যাক বারীকে স্বীকৃতিপত্রটি দেন অ্যান্ড্রু কুমো। ২০১৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাকে স্বীকৃতি দেয় বিজ্ঞানী হিসেবে। নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী দিল্লিতে তাকে বিজ্ঞানী হিসেবে ‘গ্লোবাল চাইল্ড প্রডিজি অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেন।
আগামীর স্বপ্ন
অপূর্ব হার্ভার্ডে পড়বেন, না এমআইটিতে- সে সিদ্ধান্ত এখনও নিতে পারেননি। তবে তিনি গণিত নিয়েই পড়তে চান। এমন মেধাবী পরিবারের রিফাত ৮০০ পাওয়ার অধিকার যেন জন্মগতভাবেই রাখেন! তবে নিজের সাফল্যের পেছনের কথা বলতে গিয়ে অপূর্ব বলেন, ‘আমি নিয়মিত গণিত চর্চা করি। যে কোনো সমস্যায় বাবার সহযোগিতা নিই। তবে এই সাফল্যের পেছনে পরিবারের সহযোগিতা এবং আমার নিরলস পরিশ্রমই কাজ করেছে। আসলে যে কোনো কাজে সফলতা একবারেই আসবে- এমন কোনো কথা নেই! আর বারবার চেষ্টার ফলে যে সাফল্য আসে, তাতে আনন্দটা যেন একটু বেশিই!’
দেশ নিয়েও অপূর্বের ভাবনার শেষ নেই। বাবার মতো তিনিও স্বপ্ন দেখেন দেশের জন্য কিছু করার। তবে দেশে শিক্ষার্থীদের গণিতভীতি কী করে কাটানো যায় সেই চিন্তায় কাজ করছেন ‘বারী সায়েন্স ল্যাব’-এ। কেউ চাইলে barisciencelab.tech লিংক ধরে যুক্ত হতে পারেন বারী সায়েন্স ল্যাবের সঙ্গে। দেখতে পারেন এই মেধাবী পরিবারের কর্মকাণ্ড!