ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: যুক্তরাষ্ট্রে আজ সোমবার শুরু হচ্ছে অর্থনীতিবিষয়ক রোড শো। ১০ দিনের এই শোতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা, বিনিয়োগ, বাণিজ্য, বাংলাদেশি পণ্য ও সেবা, শেয়ারবাজার এবং বন্ড মার্কেটকে তুলে ধরা হবে।
অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তির বিবেচনায় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এই দেশটিতে বাংলাদেশকে তুলে ধরে বিদেশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ আকর্ষণই এই আয়োজনের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে প্রবাসীরা যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে, সে বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
পুরো প্রোগ্রামের নাম দেওয়া হয়েছে ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার : পটেনশিয়াল অব বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট’। সকাল সাড়ে ৯টায় নিউইয়র্কের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই প্রোগ্রামের উদ্বোধন হবে। পর্যায়ক্রমে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ আরও তিন শহর ওয়াশিংটন ডিসি, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং সানফ্রান্সিসকোতে রোড শো চলবে। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) শোর আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক বাজারে বন্ড ছাড়ার ঘোষণা দেবে বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি ‘নগদ’।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ফিন্যান্স ডিভিশনের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল নজরুল ইসলাম, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস প্রেসিডেন্ট লরেন্স হেনরি সামার্স, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবিএম রুহুল আজাদ এবং বিএসইসির কমিশনার ড. মিজানুর রহমান। প্রোগ্রামে স্পন্সর হিসাবে রয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক, নগদ ও ওয়ালটন। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও কামরুল আনাম খান উপস্থিত থাকবেন।
বিএসইসির চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ১০ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঈর্ষণীয় অগ্রগতি হয়েছে। অর্থনীতির সব সূচকে আমরা এগিয়েছি। সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করলে আগামী দিনে বাংলাদেশের অর্থনীতির সম্ভাবনা বিশাল। কিন্তু আমাদের অর্থনীতির যে অর্জন ও সম্ভাবনা রয়েছে, উন্নত দেশগুলোর বিনিয়োগকারীদের কাছে তা তুলে ধরা হয়নি। যে কারণে আমাদের দেশে ওইভাবে বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। এ কারণে আমরা এ ধরনের রোড শোর উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, এর আগে আমরা দুবাইয়ে একটি রোড শো করেছি। সেখানে ব্যাপক সাড়া মিলেছে। পর্যায়ক্রমে সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন দেশে এ ধরনের আরও আয়োজন থাকবে।
অনুষ্ঠানের মূল উপস্থাপনায় বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুসারে ২০৫০ সালে বিশ্বের ২৩তম অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। সংস্থাটির তথ্য অনুসারে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হলো বাংলাদেশ। একই পূর্বাভাস দিয়েছে আরেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হংকং সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশন (এইচএসবিসি)। ১০ বছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ। আর মোট জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ৩১ শতাংশ। প্রবৃদ্ধিকে সাপোর্ট দিতে ২০২০ সালে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। ২০১১ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৮৬০ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা ২ হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে।
এছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। করোনার মধ্যেও ২০২০ সালে প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস অনুসারে করোনার মধ্যে ২৩ দেশ অর্থনৈতিকভাবে ইতিবাচক অবস্থানে থাকবে। সংস্থাটি বলছে, এর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে মোট শ্রমশক্তি ৭ কোটি। এর মধ্যে সাড়ে ৫ কোটিই বয়সে তরুণ।
নিউইয়র্কে ২৬ জুলাই অনুষ্ঠানের প্রথম দিনে ২টি সেশন রাখা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম সেশনে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে প্রবাসী বিনিয়োগকারী সম্মেলন এবং একই দিনে দ্বিতীয় সেশনে বিদেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী সম্মেলন। ২৮ জুলাই ওয়াশিংটনে দ্য রিটজ কার্লটনে অনুষ্ঠিত হবে স্টেকহোল্ডার্স মিটিং বা অংশীজন বৈঠক। ৩০ জুলাই লস অ্যাঞ্জেলেসের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত হবে বিনিয়োগকারী সম্মেলন। সর্বশেষ ২ আগস্ট সানফ্রান্সিসকোর হোটেল হায়াত রিজেন্সিতে অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ সম্মেলন।
এসব সম্মেলনে বাংলাদেশের সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তা, বেসরকারি উদ্যোক্তা, অনিবাসী বাংলাদেশি এবং বিদেশি উদ্যোক্তারা অংশ নেবেন। আয়োজকদের ধারণা, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি নতুন করে পরিচিতি পাবে।