ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু বাংলা: পারমাণবিক চুক্তি নবায়নের উদ্দেশ্যে আগামী ২৯ নভেম্বর অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা ফের শুরু করতে যাচ্ছে ইরান।
ইরানের পারমাণবিক আলোচনার মুখ্য সঞ্চালক উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাগেরি কানি আল জাজিরাকে এ খবর নিশ্চিত করে বলেন, এই আলোচনার মূল উদ্দেশ্যই হবে ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ডের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া।
পারমাণবিক আলোচনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকছেন এনরিকে মোরা। আল বাগেরি জানান, গত বুধবার তার সঙ্গে এক ফোনালাপে আগামী বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অংশগ্রহণকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু চুক্তিতে ফিরে আসার ব্যাপারে আলোচনা করবেন। একইসঙ্গে এই চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের পথও তারা নির্ধারণ করবেন।’
আল বাগেরি বলেন, ‘অনৈতিক, অমানবিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে আমরা আগামী ২৯ নভেম্বর সব পক্ষ মিলে সমঝোতা বৈঠকে বসছি।’
ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র অর্জন করতে না পারে সেজন্য তেহরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বের ৬ শক্তিধর দেশ। কিন্তু ওবামার আমলে সম্পাদিত চুক্তিটিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘বাজে চুক্তি’ উল্লেখ করে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নেয়।
এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে গেলেও ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন, জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন মনে করে, এখনও এই চুক্তির গুরুত্ব আছে। কারণ এই পরমাণু চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে আন্তর্জাতিক তদারকিতে রাখা।
২০১৮ সালের পর ইরানের পারমাণবিক কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা বন্ধ থাকলেও ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ক্ষমতায় আসার পর সেই আলোচনা নিয়ে ফের তোড়জোড় শুরু করেছে ইরান। গত জুনে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির নতুন প্রশাসনের স্বীকৃতির বিষয়ে এই বছর জুনে চীন, রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ছয় ধাপে আলোচনা শেষ করেছে ইরান।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইরান চুক্তির বিষয়ে পরোক্ষ আলোচনায় গুরুত্বারোপ করলে পারমাণবিক চুক্তিটি নবায়ন হবে।
সম্প্রতি ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান বেনি গ্যান্টজ বলেছেন, পরমাণু অস্ত্র বানানোর সক্ষমতা থেকে ইরান আর মাত্র ২ মাস দূরে আছে। জাতিসংঘের পরমাণু তদারক সংস্থাও সম্প্রতি ইরানের পরমাণু অস্ত্র নিয়ে ভয়ঙ্কর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এই মুহূর্তে ইরানকে পরমাণু চুক্তিতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। এ লক্ষ্যে গত মে মাস থেকে ইরানের সঙ্গে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় অন্তত ৬ দফা বৈঠকও করেছে। কিন্তু আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি।
মার্কিন উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয় হুড কোনো অনুমান করা থেকে বিরত থেকে বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেনসহ যুক্তরাষ্ট্র সরকার এ বিষয়ে খুবই স্বচ্ছ। আমরা ইরানকে পরমাণু অস্ত্র বানাতে দেব না। এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সকল মিত্র এবং মধ্যপ্রাচ্য এলাকাও একমত। মার্কিন এই মন্ত্রী ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফেরার আহ্বান জানান।
সম্প্রতি ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, তেহরান আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা করতে আগ্রহী নয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।
আরো পড়ুন: