নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর ডটকম: মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে নতুন বিধিমালা করছে মন্ত্রণালয়। মৎস্য ও মৎস্যপণ্য (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০২০ এর আওতায় এই বিধিমালা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, ‘মৎস্য ও মৎস্যপণ্য (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৩’ শিরোনামে খসড়া তৈরি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। খসড়ার বিষয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও বিভাগের মতামত চাওয়া হয়েছে।

আগামী ৯ এপ্রিলের মধ্যে মতামত পাঠাতে বলেছে মন্ত্রণালয়। এরপর বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে। নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত হলে ‘মৎস্য ও মৎস্যপণ্য (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ১৯৯৭’ রহিত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (আইন) মৃনাল কান্তি দে বলেন, মৎস্য ও মৎস্যপণ্য (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০২০ অনুযায়ী আমরা মৎস্য ও মৎস্যপণ্য (পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালার খসড়া তৈরি করেছি। এ খসড়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার মতামত চাওয়া হয়েছে। মতামত পাওয়ার পর আমরা আবার বসব।

তিনি আরও বলেন, মতামত দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। ৯ এপ্রিলের পর এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হবে। এরপর এটি চূড়ান্ত করা হবে।

কী আছে নতুন বিধিমালায়?

মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানির জন্য মান নির্ধারণ পদ্ধতি; আমদানি ও স্থানীয় বাজারে বিপণনের জন্য মান নির্ধারণ পদ্ধতি; কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স পদ্ধতি; উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কার্যাবলী ও ক্ষমতা; লাইসেন্সের জন্য আবেদন দাখিল, লাইসেন্স প্রস্তুত, জারি; লাইসেন্স হস্তান্তর, লাইসেন্সের মেয়াদ ও নবায়ন; চুক্তিভুক্ত মৎস্যপণ্য উৎপাদনকারীর লাইসেন্স; কারখানা, বাজার, ইত্যাদি পরিদর্শন ও প্রশাসনিক জরিমানা; আমদানি করা মৎস্য ও মৎস্যপণ্য পরিদর্শন, নমুনা সংগ্রহ, পরীক্ষণ ও ছাড়করণ; মৎস্য খামার নিবন্ধন; মৎস্য খামারে ঔষধ ও রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার; কারখানা বা স্থাপনায় কর্মরত কর্মচারী বা শ্রমিকের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণের বিষয়ে বিধিমালায় বিস্তারিত বলা হয়েছে।

এছাড়া বিধিমালায় মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক, অণুজীব, হেভি মেটাল, কীটনাশক, রঞ্জক পদার্থ, এডিটিভস, স্টেরয়েড, হরমোন এবং অন্য কোনো ক্ষতিকারক পদার্থের অনুমোদিত মাত্রা; আমদানি অনাপত্তিপত্রের জন্য আবেদন দাখিল, অনাপত্তিপত্র প্রস্তুত; রপ্তানির ক্ষেত্রে বিশেষ বিধান; বৈধ আমদানি বা রপ্তানি নিবন্ধন ব্যতীত রপ্তানি ও আমদানি নিষিদ্ধ; বাজেয়াপ্তযোগ্য মৎস্য, মৎস্যপণ্য ও সাজসরঞ্জাম; পচা মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের নিষ্পত্তি; জাতীয় রেসিডিউ কন্ট্রোল প্ল্যান প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন; প্রশাসনিক আপিল; মৎস্য সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তার এখতিয়ার, ফি নির্ধারণ ও আরোপ ও আদায়; মৎস্য ও মৎস্যপণ্য ব্যবহারের জন্য স্থাপিত বরফকলের লাইসেন্স ও পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণের শর্তাবলির বিষয়েও বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়েছে।

মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানির জন্য মান নির্ধারণ পদ্ধতি

মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানির জন্য মান নির্ধারণ পদ্ধতির বিষয়ে বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রপ্তানির জন্য উৎপাদন, পরিবহণ, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ বা প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষেত্রে আমদানিকারক দেশ যে পদ্ধতি, মান ও শর্ত নির্দিষ্ট করে দেবে তা যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য প্রতিটি আমদানিকারক দেশের জন্য পৃথকভাবে বা সামগ্রিকভাবে বা কার্যক্রমভিত্তিক বা মৎস্যপণ্যভিত্তিক এক বা একাধিক নির্দেশিকা (গাইডলাইন) প্রস্তুত এবং প্রয়োজনে তা সংশোধন করে প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে কার্যকর করবেন।

আমদানি করা মৎস্য ও মৎস্যপণ্য পরিদর্শন, নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা

আমদানি করা মৎস্য ও মৎস্যপণ্য পরিদর্শন, নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষার বিষয়ে বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, আইন বা এ বিধিমালা যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার উদ্দেশ্যে পরিদর্শনকারী কর্মকর্তা যে কোনো সময়ে যে কোনো মৎস্য বিক্রয়ের অভ্যন্তরীণ বাজার, প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা, সকল প্রকার স্থাপনা, মৎস্য আহরণে নিয়োজিত নৌযান, মৎস্য ও মৎস্যপণ্য পরিবহনে নিয়োজিত এয়ারক্রাফটসহ যে কোনো যানবাহন, বরফকল, মৎস্যচাষ খামার, জলাশয় ও কারখানায় মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি, স্থাপনায় মৎস্য হ্যান্ডলিং পদ্ধতি স্বপরীক্ষণ পদ্ধতি ও সংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গিক কাগজপত্র যাচাই করতে পারবেন।

মৎস্য খামার নিবন্ধন

বিধিমালার খসড়ায় মৎস্য খামারের মালিককে নিবন্ধন করতে বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে খসড়ায় বলা হয়েছে, মৎস্য খামারের মালিককে খামারের নিবন্ধন পাওয়ার জন্য সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার বা উপজেলা মৎস্য অফিসার বরাবরে নির্দিষ্ট ফরমের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।

নিবন্ধনের জন্য শর্তাবলি

মৎস্য খামারের জমির মালিক বা লিজগ্রহীতা বছরের যে কোনো সময় নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে, নিবন্ধনের জন্য বেশ কয়েকটি শর্তাবলির কথা বিধিমালার খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- লিজগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে জমির মালিকের সঙ্গে সরকার নির্ধারিত মূল্যের স্ট্যাম্পে চুক্তিনামা থাকতে হবে, মৎস্য খামারে নিষিদ্ধ ঘোষিত মৎস্য প্রজাতি চাষ করা যাবে না, মৎস্য খামারে উত্তম মৎস্যচাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে মানসম্পন্ন নিরাপদ মৎস্য উৎপাদন করতে হবে, সরকারি নদী বা খাল বন্ধ করে ও নদীর পাড়কে মৎস্য খামারের বাধ হিসেবে ব্যবহার করে মৎস্য খামার নির্মাণ করা যাবে না, সরকারি বা খাস জমি বা জলাশয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি বা অনুমোদন ছাড়া মৎস্য খামার স্থাপন করা যাবে না, মৎস্য খামারের কারণে খামারের পার্শ্ববর্তী জমিতে বা স্থাপনায় বা সরকারি রাস্তায় কোনো ধরনের জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করা যাবে না, মৎস্য খামার করার ক্ষেত্রে খামার মালিককে ঘেরের চারদিকে নিজ খরচে বাঁধ বা পাড় তৈরি করতে হবে এবং ভাঙ্গন রোধের ব্যবস্থা থাকতে হবে, মৎস্য খামারের বাঁধের সঙ্গে সরকারি রাস্তা থাকলে খামারের বাঁধের উচ্চতা সরকারি রাস্তা থেকে কম করতে হবে।

কারখানায় কর্মরত কর্মচারী বা শ্রমিকের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ

বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কারখানা বা স্থাপনায় কর্মরত কর্মচারী বা শ্রমিকের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য এ বিধি প্রকাশের ৬০ দিনের মধ্যে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণের জন্য ছক প্রস্তুত করে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে কার্যকর করবেন। প্রত্যেক কারখানার মালিক প্রকাশিত ছক মোতাবেক রেজিস্টার সংশোধন করে হালনাগাদ করবেন।

নিবন্ধন ব্যতীত রপ্তানি ও আমদানি নিষিদ্ধ

মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে অনাপত্তিপত্র পাওয়ার জন্য আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ দপ্তর থেকে বৈধ আমদানি বা রপ্তানি নিবন্ধিত হতে হবে।

বাজেয়াপ্তযোগ্য মৎস্য, মৎস্যপণ্য ও সাজসরঞ্জাম

সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পচনশীল দ্রব্য মৎস্য ও মৎস্যপণ্য আটক করে তা বর্ণনা ও পরিমাণ উল্লেখ করে একটি আটক তালিকা প্রস্তুত করবেন। উপস্থিত ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর গ্রহণ করবেন। এ আটক মৎস্য ও মৎস্যপণ্য খাদ্য হিসেবে উপযুক্ত হলে নিলামের মাধ্যমে তা বিক্রয় করবেন। অন্যথায় বিধি মোতাবেক ধ্বংস করবেন।

এ অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারখানা বন্ধ রাখার আদেশ দেবেন এবং স্থাপনার যন্ত্রপাতি, উপকরণ, আধার, পাত্র, মোড়ক ইত্যাদি আটক তালিকা প্রস্তুত করে নিজের দায়িত্বে সংরক্ষণ করবেন বা অন্য কোনো দায়িত্বসম্পন্ন ব্যক্তিকে জিম্মায় দেবেন। আটক তালিকা মামলায় উল্লেখ থাকতে হবে এবং মামলার রায়ে বা আদেশে আদালত যেভাবে আদেশ দেবেন সেভাবে নিষ্পন্ন করবেন।

পচা মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের নিষ্পত্তি

পচা মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের নিষ্পত্তির বিষয়ে বিধিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, স্থানীয় উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শনকালে স্থানীয় বাজার বা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর বা পরিবহন বা প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় আনা মৎস্য গ্রহণকালে বা কনটেইনারে, প্যাকেট বা স্ট্যাকের সম্পূর্ণরূপে বা আংশিকভাবে দ্রুত পচনশীল পর্যায়ে রয়েছে বা পচে গেছে তা আটক করবেন এবং আটকের কারণ উপস্থিত মালিক বা তার প্রতিনিধিকে অবহিত করবেন।

দ্রুত পচনশীল পর্যায়ে রয়েছে বা পচে গেছে এমন আটক মৎস্য বা মৎস্যপণ্য ব্যবহার, হস্তান্তর বা অন্য কোনো প্রকারে বিলি-বন্দোবস্ত না করে নিরাপদ স্থানে এক বা একাধিক মাটির গর্তে পুঁতে ধ্বংস করবেন। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রণকারী স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।

প্রশাসনিক আপিল

সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্মকর্তা ক্ষেত্রমতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত আবেদন হার্ড কপি বা ই-মেইলে জমা দিতে পারবেন এবং কারণ উল্লেখসহ আবেদনের সঙ্গে যে আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ সে আদেশের কপি সংযুক্তি হিসাবে প্রদান করবেন।

কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্মকর্তা ক্ষেত্রমতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবেদন পাওয়ার পর যার আদেশের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ তার সিদ্ধান্ত প্রদান সংক্রান্ত নথি তলব করতে এবং আবেদনকারীর শুনানি গ্রহণের জন্য নোটিশের মাধ্যমে অবহিত করে উপস্থিত হতে আদেশ দিতে পারবেন। শুনানি গ্রহণ করা হোক বা না হোক কেন্দ্রীয় উপযুক্ত কর্মকর্তা ক্ষেত্রমতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সিদ্ধান্ত লিখিতভাবে আপিল আবেদনকারী এবং সংশ্লিষ্ট সবাইকে অবহিত করবেন।

এমএইচডি/আইকেজে 

আরো পড়ুন:

পাবলিক প্লেসে ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *