এশিয়ার নোবেলখ্যাত ম্যাগসেসে পুরস্কার পেয়েছেন বাংলাদেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী। মঙ্গলবার এ পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
বিশ্বব্যাপী মর্যাদাসম্পন্ন এ পুরস্কারটি আরও পেয়েছেন পাকিস্তানের আমজাদ সাদিক, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্টিভেন মানসি।
ফেরদৌসী কাদরী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ইমিউনোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
উন্নয়নশীল দেশের শিশুদের মধ্যে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ড. ফেরদৌসী কাদরীর প্রচেষ্টা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। কলেরা মহামারি থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের টিকা নিয়ে যারা কাজ করেছেন ড. ফেরদৌসী তাদের মধ্যে অন্যতম। ২০২০ সালে তিনি ল’রিয়েল-ইউনেসকো ফর ওমেন ইন সায়েন্স অ্যাওয়ার্ড পান।
এক নজরে ড. ফেরদৌসী কাদরী
ফিরদৌসী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও আণবিক জীববিদ্যা বিভাগ থেকে ১৯৭৫ সালে বি.এসসি ও ১৯৭৭ সালে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮০ সালে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন/প্রতিষেধকবিদ্যা বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। আইসিডিডিআর,বি’র প্রতিষেধকবিদ্যা বিভাগ থেকে পোস্টডক্টোরাল গবেষণা শেষ করার পর, তিনি একই প্রতিষ্ঠানে ১৯৮৮ সালে সহযোগী বিজ্ঞানী হিসেবে যোগ দেন। পরে তিনি একই প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী এবং মিউকোসাল ইমিউনোলজি এবং ভ্যাকসিনোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ পান।
গবেষণায় অবদান
ফিরদৌসীর প্রধান গবেষণার বিষয় হলো অন্ত্রের রোগ। বিশেষ করে ইমিউনোলজি, জিনোমিক্স, প্রোটোমিক প্রযুক্তি এবং ডায়াগনস্টিকস এবং ভ্যাকসিনে উন্নতি সাধন। তিনি বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের জন্য নতুন ধরণের সস্তা কলেরা টীকা উন্নয়নে কাজ করেছেন। তিনি ব্যয়বহুল ‘ডকোরাল’ টিকার পরিবর্তে ‘শানকল’ নামক একটি টিকা ঢাকায় ব্যবহার করে সফলতা লাভ করেন। পরবর্তীতে টিকাটি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য বিশেষ করে রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
সম্মান ও পুরস্কার
২০০৮ সালে ফিরদৌসী বাংলাদশ বিজ্ঞান একাডেমির গোল্ড মেডেল প্রাপ্ত হন। তিনি ২০০২ সালে উন্নয়নশীল দেশে সংক্রামক আন্ত্রিক রোগ গবেষণার জন্য ক্রিস্টোফ মেরিএউক্স পুরস্কার পান।
২০১৩ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্য বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমীর বার্ষিক সি. এন. রাও পুরস্কার পান, যেটা তাওস থেকে দেওয়া হয়। জাতিসংঘের প্রস্তাবিত একটি প্রযুক্তি ব্যাংক এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের সাপোর্টিং ব্যবস্থাসমূহ সাংগঠনিকভাবে আরো কর্মক্ষম করে তুলেতে ২০১৪ সালে তাকে উচ্চ পর্যায়ের একটি প্যানেলের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
উন্নয়নশীল দেশে শিশুদের সংক্রামক রোগ চিহ্নিতকরণ ও বিশ্বব্যাপী এর বিস্তার রোধে প্রাথমিক চিকিৎসা কার্যক্রম এবং টিকাদান কর্মসূচি জোরদারে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ২০২০ সালে তিনি ‘লরিয়েল-ইউনেস্কো উইমেন ইন সায়েন্স অ্যাওয়ার্ড’ (এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল) লাভ করেন।
২০১৩ সালে অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার পান। এছাড়া ২০২১ সালে, সিঙ্গাপুর ভিত্তিক বিজ্ঞান সাময়ীকিতে এশিয়ার শ্রেষ্ঠ ১০০ বিজ্ঞানীর তালিকায় তিনি অন্তর্ভুক্ত হন।
/জেড এইচ