নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: দেশে মোবাইল ফোন সেটের বৈধতা যাচাই কার্যক্রম পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলো। ভার্চ্যুয়াল এক অনুষ্ঠানে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) ব্যবস্থা চালু হলেও এ প্রক্রিয়ায় গ্রাহকের হাতে থাকা একটি মোবাইল ফোন সেটও বন্ধ হবে না। তবে নতুন কেনার ক্ষেত্রে যাচাই করে কিনতে হবে।
অনুষ্ঠানে মোস্তাফা জব্বার বলেন, মানুষ যাতে নিরাপদে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারেন, সেটাই এই কার্যক্রমের চাওয়া। মন্ত্রী গত ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে যেসব মুঠোফোন চালু ছিল, সেগুলোর নিবন্ধন সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে বলেন, কোনোভাবেই যেন কোনো গ্রাহক হয়রানির শিকার না হন।
বৃহস্পতিবার আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে এই কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানান বিটিআরসির মহাপরিচালক (তরঙ্গ) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শহিদুল আলম। তিনি জানান, মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে মুঠোফোনের তথ্য স্থানান্তর হয়েছে। এর ফলে ৩০ জুনের মধ্যে নেটওয়ার্কে চালু থাকা সব মুঠোফোনের নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।
বিটিআরসি মুঠোফোন বৈধ না অবৈধ, তা যাচাই করতে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) নামের এই ব্যবস্থা চালু ও পরিচালনার জন্য দরপত্র আহ্বান করে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। প্রযুক্তিগত সমাধান পেতে সংস্থাটি সিনেসিস আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গত নভেম্বরে চুক্তি করে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন মাস পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবস্থাটি চালানো হবে। তিনি বলেন, এই কার্যক্রম চালু হলে অবৈধ সেট শনাক্ত করা যাবে। গ্রাহকের অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ সেট ব্যবহার করতে পারবেন না। চুরি করা সেট ব্যবহার করা যাবে না। সব মিলিয়ে সরকারের রাজস্ব ও নিরাপত্তা বাড়বে।
দেশে ২৫-৩০ শতাংশ স্মার্টফোন অবৈধভাবে আমদানি করা হয়। এর কারণে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারায় সরকার।
নিবন্ধন করবেন যেভাবে
বিটিআরসি জানিয়েছে, এনইআইআরের কার্যক্রম ১ জুলাই থেকে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হলে গ্রাহকের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও সিম নম্বরের সঙ্গে ব্যবহৃত মুঠোফোনের আইএমইআই সম্পৃক্ত করে নিবন্ধন করা হবে। ১ জুলাই থেকে নতুন যেসব মুঠোফোন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হবে, তা প্রাথমিকভাবে নেটওয়ার্কে সচল করে এনইআইআরের মাধ্যমে বৈধতা যাচাই করা হবে। বৈধ হলে মুঠোফোনটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে নেটওয়ার্কে সচল থাকবে।
বিটিআরসি বলছে, যেসব মুঠোফোন বৈধ নয়, সেগুলো সম্পর্কে গ্রাহককে খুদে বার্তা বা এসএমএসের মাধ্যমে জানানো হবে। এরপর পরীক্ষাকালে তিন মাসের জন্য নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রাখা হবে। এরপর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেনার আগে করণীয়
মুঠোফোন কেনার আগে করণীয় কী, তা-ও জানিয়েছে বিটিআরসি। সংস্থাটি বলছে, ১ জুলাই থেকে যেকোনো মাধ্যম (বিক্রয়কেন্দ্র, অনলাইন বিক্রয়কেন্দ্র, ই-কমার্স সাইট ইত্যাদি) থেকে মুঠোফোন কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই মুঠোফোনের বৈধতা যাচাই ও রসিদ সংরক্ষণ করতে হবে।
বৈধ কি না, তা যাচাইয়ের পদ্ধতি হলো, মুঠোফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে KYD<space>১৫ ডিজিটের IMEI নম্বরটি লিখুন। ১৬০০২ নম্বরে পাঠান। ফিরতি খুদে বার্তায় বৈধতা সম্পর্কে জানতে পারবেন।
বিদেশ থেকে আনলে
বিটিআরসি জানিয়েছে, বিদেশ থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে বৈধভাবে কেনা বা উপহার পাওয়া মুঠোফোন সেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নেটওয়ার্কে সচল হবে। এরপর ১০ দিনের মধ্যে অনলাইনে তথ্য/দলিল জমা দিয়ে নিবন্ধন করার জন্য ব্যবহারকারীকে খুদে বার্তা পাঠানো হবে। নিবন্ধন সম্পন্ন করলে মুঠোফোনটি বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। নিবন্ধন না করলে মুঠোফোন বৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে না এবং সেগুলো সম্পর্কে গ্রাহককে খুদেবার্তার মাধ্যমে জানিয়ে পরীক্ষার সময়ের জন্য নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রাখা হবে। এরপর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নিবন্ধনের পদ্ধতি হলো: neir.btrc.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট নিবন্ধন করুন। Special Registration সেকশনে গিয়ে মুঠোফোনের আইএমইআই নম্বরটি দিন। প্রয়োজনীয় নথির ছবি/স্ক্যান করা অনুলিপি (যেমন পাসপোর্টের ভিসা/ ইমিগ্রেশনের তথ্যাদি, ক্রয় রসিদ প্রভৃতি) আপলোড করুন ও সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন।
মুঠোফোনটি বৈধ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধিত হবে। বৈধ না হলে খুদে বার্তার মাধ্যমে গ্রাহককে জানিয়ে পরীক্ষার সময়ের জন্য নেটওয়ার্কে সংযুক্ত রাখা হবে। পরীক্ষামূলক সময় শেষ হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহক সেবাকেন্দ্র বা কাস্টমার কেয়ার সেন্টারের গিয়েও এ বিষয়ক সেবা নেওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, বিদ্যমান ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে শুল্কবিহীন সর্বোচ্চ দুটি ও শুল্ক দিয়ে আরও ছয়টি মুঠোফোন সঙ্গে নিয়ে আসতে পারেন।
নিবন্ধন বাতিলের প্রক্রিয়া
বিটিআরসি জানিয়েছে, পরীক্ষামূলকভাবে এইআইআর ব্যবস্থা চলাকালে তিন মাস নিবন্ধন বাতিল ছাড়া একজন ব্যক্তি তার মুঠোফোন আরেক জনকে দিয়ে দেওয়া ও বিক্রি করতে পারবেন। একজন গ্রাহক নিজের নামে নিবন্ধন করা যেকোনো সিম দিয়ে মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারবেন। পরীক্ষামূলক সময় পেরোনোর পর নিবন্ধন বাতিল বা ডি-রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।
যাচাই করুন নিজের মুঠোফোন
গ্রাহকেরা এখন যেসব ফোন ব্যবহার করছেন তার বর্তমান অবস্থা যাচাই করতে পারবেন। মুঠোফোন থেকে *১৬১৬১# নম্বরে ডায়াল করুন। মুঠোফোনের পর্দায় ভেসে ওঠা Status Check অপশন বাছাই করুন। স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি বক্স আসবে যেখানে মুঠোফোন সেটের ১৫ ডিজিটের আইএমইআই নম্বরটি লিখে পাঠাতে হবে। এরপর হ্যাঁ/না অপশন-সংবলিত একটি অটোমেটিক বক্স এলে হ্যাঁ বাছাই করে নিশ্চিত করুন। ফিরতি খুদে বার্তার মাধ্যমে মুঠোফোনের হালনাগাদ অবস্থা জানানো হবে।
neir.btrc.gov.bd লিংকের মাধ্যমে বিদ্যমান সিটিজেন পোর্টাল অথবা মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ার সেন্টারে গিয়েও এসব সেবা নেওয়া যাবে।
বিটিআরসি বলছে, এনইআইআর-সম্পর্কিত যেকোনো বিষয়ে জানার ক্ষেত্রে সংস্থাটির হেল্পডেস্ক নম্বর ১০০ অথবা মোবাইল অপারেটরদের কাস্টমার কেয়ার নম্বর ১২১-এ ডায়াল করে এবং অপারেটরদের কাস্টমার কেয়ার সেন্টার থেকে জানা যাবে।