মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছেন তিন বন্দি।
রোববার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনটি কার্যতালিকাভুক্ত রয়েছে।
আবেদনে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে আবদ্ধ রাখা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।
এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় আবেদনকারীদের কনডেম সেল থেকে স্বাভাবিক সেলে স্থানান্তরের আবেদন করা হয়েছে।
একইসঙ্গে দেশের সব জেলের কনডেম সেলে থাকা সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রাখার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে (সুযোগ, সুবিধা) কারা মহাপরিদর্শককে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
০২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার আদালতে রিট আবেদনটি করেছেন চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এসব আসামির আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।
আবেদনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন সচিব, আইজিপি, আইজি প্রিজন্স,চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লার সিনিয়র জেল সুপারকে বিবাদী করা হয়েছে।
শনিবার এসব তথ্য জানিয়েছেন আবেদনকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
তিনি জানান, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনগত ধাপ অতিক্রম করতে হয়। প্রথমত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারামতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। একইসঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকারবলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল দায়ের করতে পারেন। তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে বিভিউ আবেদনের আইনগত সুযোগ রয়েছে। সর্বোপরি, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯ এর অধীন রাষ্ট্রপতির নিকট ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি উক্ত ক্ষমার আবেদন না মঞ্জুর করলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আইনগত বৈধতা লাভ করে।
কিন্তু বাংলাদেশে বিচারকি আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামি হিসেবে বন্দি রাখা হয়।
শিশির মনির আরও জানান, ১৮ জুন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় ‘ডেথ রেফারেন্স জটে বছরের পর বছর কনডেম সেলে আসামিরা’ শিরোনামে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। রিপোর্টে দেখা যায়, হাইকোর্ট বিভাগে চলতি বছরে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি চলছে। অর্থাৎ, ২০২১ সালে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি হবে ২০২৬ সালে। ২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন ডেথ রেফারেন্সের সংখ্যা ৭৭৫ টি। বর্তমানে এই সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের ৩ টি বেঞ্চ ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি করছে।
উল্লেখ্য, দেশের কারাগারগুলোতে ২ হাজার ৫ জন ফাঁসির আসামি কনডেম সেলে বন্দি রয়েছেন।
/জেড এইচ