জাতীয়

মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির একজন খালাস, দুজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন

দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত পৃথক তিনটি হত্যা মামলায় মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির মধ্যে একজনকে খালাস এবং দুজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ। খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা না থাকলে অবিলম্বে তাকে মুক্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দু’জনকে যত দ্রুত সম্ভব কনডেম সেল থেকে বের করে সাধারণ সেলে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চ বুধবার পৃথক পৃথক রায়ে এ আদেশ দেন। খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তির পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট হেলালউদ্দিন মোল্লা। আপর দুজনের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাইমেন বকস্ (কল্লোল বকস্) ও এস এম আমিনুল ইসলাম শানু। রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ।

স্ত্রী হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত গাজীপুরের কালিগঞ্জ থানার শাইলদিয়া গ্রামের আবদুল আউয়াল খানকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আর সদ্য তালাক দেওয়া স্ত্রীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত একই জেলার শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্বখন্ড গ্রামের মো. কাজিম উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর প্রতিবেশী এক নারীকে হত্যার দায়ে বরিশালের হিজলা থানার বড়জামিয়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাক মাতবরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো একবছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দু’জনের সাজাভোগের ক্ষেত্রে রেয়াদ সংক্রান্ত আইনের সকল সুবিধা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্ত্রী হত্যা মামলায় স্বামী খালাস

গাজীপুরের কালিগঞ্জ থানার শাইলদিয়া গ্রামের আবদুল আউয়াল খানের স্ত্রী নার্গিস বেগম ২০০৪ সালের ১৬ জুলাই ভোর চারটার দিকে খুন হয়। এ ঘটনায় নার্গিসের পিতা মো. ইব্রাহিম দেওয়ান অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। ওইদিন শশুর (মামলার বাদী) ও অন্যান্য আত্মীয়সহ আবদুল আউয়াল থানায় হাজির হলে পুলিশ তাকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তাকে রিমান্ডে নেয়। এ মামলায় পুলিশ ওইবছরের ১২ অক্টোবর আউয়ালের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়। এরপর এ মামলায় বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২০ আগস্ট গাজীপুর অতিরিক্ত দায়রা আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এই রায়ের পর তাকে কনডেম সেলে নেওয়া হয়। এরপর নিম্ন আদালত থেকে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স ও কারাবন্দি আসামির আপিল আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে আউয়ালের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এরপর আসামি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল আবেদন দাখিল করেন। এ আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে তাকে খালাস দিয়ে রায় দেন আপিল বিভাগ। রায়ে ৬ বিচারপতির মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তাকে খালাস দেওয়া হয়।

সাবেক স্ত্রী হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্বখন্ড গ্রামের মো. কাজিম উদ্দিন তার স্ত্রী খোদেজা বেগমকে ২০০২ সালের ৩ আগস্ট আদালতের মাধ্যমে তালাক দেয়। এর এক সপ্তাহ পর একই উপজেলার ইয়াসমীন স্পিনিং মিলের সামনে ওই বছরের ১০ আগস্ট খোদেজা বেগমকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করে টেম্পুর হেলপার কাজিম উদ্দিন। এই হত্যাকাণ্ডের সময় স্থানীয় জনতা তাকে হাতেনাতে ধরে গণপিটুনি দেয়। জনতা তাকে মৃত ভেবে ফেলে যায়। কিন্তু সে বেঁচে যায়। এরপর পালিয়ে ভারতে যাবার উদ্দেশ্যে যশোরের বেনাপোল সীমান্তে যায়। তবে ভারতে না যেয়ে গাজীপুরে ফিরে এসে ২৪ আগস্ট থানায় আত্মসমর্পন করে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ মামলায় বিচার শেষে গাজীপুরের আদালত ২০০৮ সালের ১২ আগস্ট এক রায়ে কাজিম উদ্দিনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এরপর নিম্ন আদালত থেকে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স ও কারাবন্দি আসামির আপিল আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর এক রায়ে কাজিম উদ্দিনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এরপর কারাবন্দি আসামি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল আবেদন দাখিল করেন। এ আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে সর্বসম্মত রায় দেন আপিল বিভাগ।

প্রতিবেশী নারী হত্যায় যাবজ্জীবন

বরিশালের হিজলা থানার বড়জামিয়া গ্রামের আবদুর রাজ্জাক মাতবর ২০০৭ সালের ৭ জুলাই দুপুরে প্রতিবেশী মনোয়ারা বেগমকে (৫৫) হত্যা করেন। এরপর স্থানীয় জনতা কিছুক্ষণের মধ্যে তাকে নিজ ঘরের মধ্যে বন্দী করে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ এসে তাকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় নিহতের কলেজ পড়ুয়া ছেলে হাবিবুল্লাহ তালুকদার বাদী হয়ে মামলা করেন। এ মামলায় বরিশালের আদালত ২০০৮ সালের ২১ অক্টোবর আবদুল রাজ্জাক মাতবরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। এরপর নিম্ন আদালত থেকে পাঠানো ডেথ রেফারেন্স ও কারাবন্দি আসামির আপিল আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ২০ জানুয়ারি এক রায়ে আবদুর রাজ্জাক মাতবরের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এরপর কারাবন্দি আসামি এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল আবেদন দাখিল করেন। এ আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে সর্বসম্মত রায় দেন আপিল বিভাগ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *