প্রচ্ছদ

মীনা কুমারীকে অনুকরণ করেছি: আলিয়া

সঞ্জয় লীলা বানসালি পরিচালিত ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াবাড়ি’ ছবিটি অবশেষে আজ রুপালি পর্দায় মুক্তি পাবে। মুম্বাইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে সম্প্রতি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন আলিয়া। সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি। এই আলাপচারিতার শুরুতে উঠে এল ‘গাঙ্গুবাই’ ছবিতে তাঁর এই বিশেষ লুকের কথা।

কালো পাড়ের সাদা শাড়ি। লম্বা বেণিতে এক গুচ্ছ সাদা ফুল গোঁজা, কানে ভারী দুল—এই সাজে সেদিনের ফাগুনের তপ্ত দুপুরকে স্নিগ্ধ করে তুলেছিলেন অভিনেত্রী আলিয়া ভাট। কলকাতা থেকে কন্যাকুমারিকা—এখন সর্বত্র তিনি সাবেকি সাজে ধরা দিচ্ছেন। আলিয়ার পরনে কখনো সাদা জামদানি, শিফন অথবা সিল্কের শাড়ি। গাঙ্গুবাই কাঠিয়াবাড়ির কারণেই এই নতুন সাজ তাঁর। ৭০ দশকে মুম্বাইয়ের অখ্যাত কামাতিপুরার যৌনকর্মী ‘গাঙ্গুবাই’ রূপে আসতে চলেছেন আলিয়া।
শুরুতে কথা হয় আলিয়ার নতুন লুক নিয়ে। নিজের নতুন লুক বিষয়ে আলিয়া বলেন, ‘ছবিতে

আমার বেশভূষা বা লুকের কৃতিত্ব কখনই আমি নেব না। আমার সমগ্র লুকের জন্য বিশেষ একটা দল ছিল। প্রীতি আর বানসালি স্যার আলাপ–আলোচনা করে আমার লুকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এ ছাড়া আমার মেকআপ টিম থেকে রাধিকা আর পুনিত এ ব্যাপারে সাহায্য করেছেন। তবে রোজ আমার মেকআপের পর স্যার (বানসালি) আসতেন। তিনি সর্বশেষ মতামত দিতেন।’

বিজ্ঞাপন

তিনি চাইতেন আমার মুখমণ্ডল যেন মীনা কুমারীর মতো গোলাকৃতি হয়ে ওঠে। আর এ জন্য সঞ্জয় স্যার আমাকে ভরপুর খেতে বলতেন। তিনি বলতেন, যারা নিয়মিত মদ্যপান করে, তাদের মুখ পরোটার মতো গোল হয়। গাঙ্গুবাই নিয়মিত মদ্যপান করতেন। স্যার আমাকে বলতেন যে মীনা কুমারী আর ওয়াহিদাজির (রহমান) গানের দৃশ্যগুলো ভালোভাবে দেখতে। পর্দায় তাঁদের অভিব্যক্তিতে গভীরতা, যন্ত্রণা যেভাবে প্রকাশ পেয়েছে, আমি তা যেন অনুকরণ করি। আমার

শরীরে, চলনে–বলনে যেন ওনাদের মতো দ্যুতি আর নারীসুলভ শক্তি প্রকাশ পায়। আমার লুকে মীনাজির এই দিকটাও তুলে ধরা হয়েছে।’

একটু থেমে আলিয়া বলেন, ‘জানেন, এই ছবিতে আমার বেশভূষা লতাজি দ্বারাও অনুপ্রাণিত। লতাজি সাদা শাড়ির সঙ্গে কপালে লাল বড় টিপ পরতেন। লতাজির এই দিকটা আমার লুকের মধ্যে অনেক সময় প্রকাশ পেয়েছে।’ গাঙ্গুবাইকে ভালো করে চেনা, জানার জন্য আলিয়া হুসেন জাইদির লেখা বই পড়েছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চিত্রনাট্যের পর আমি গাঙ্গুবাই কাঠিয়াবাড়ির ওপর লেখা হুসেন জাইদির বই পড়েছিলাম। আসলে আমি গাঙ্গুবাইকে গভীরভাবে জানতে চেয়েছিলাম। হুসেন জাইদির সঙ্গে আমি দেখাও করেছিলাম। কারণ, গাঙ্গুবাইয়ের সঙ্গে হুসেন জাইদির সাক্ষাৎ হয়েছিল। গাঙ্গুবাইয়ের শরীরী ভাষা, হাঁটাচলা সম্পর্কে বিস্তারিত আমি হুসেন জাইদির থেকে জানতে পেরেছিলাম। আমি এভাবে গাঙ্গুবাইকে আরও গভীরভাবে জানতে পারি।’ আলিয়া জানান, গাঙ্গুবাই চরিত্রে অভিনয় করা তাঁর জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।

তিনি বলেন, ‘গাঙ্গুবাইয়ের দুনিয়া আমার দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আমার কথা বলার ধরন ওনার থেকে একদম আলাদা। আর আমার মধ্যে গাঙ্গুবাইয়ের মতো আত্মবিশ্বাস নেই। সমাজের সঙ্গে ওনার এক বড় লড়াই ছিল। আমাকে কখনো এ ধরনের সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়নি।’

শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত মান্ডি ছবিতে আলিয়ার মা তথা অভিনেত্রী সোনি রাজদানকে যৌনকর্মীর চরিত্রে দেখা গিয়েছিল। আলিয়া কি গাঙ্গুবাই চরিত্রটি করতে কোনোভাবে তাঁর মা দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমাকে সঞ্জয় স্যার মান্ডি ছবিটি দেখার কথা বলেছিলেন। আমার শরীরী ভাষা কী রকম হবে, তা শেখার জন্য আরও বেশি করে এই ছবিটা দেখার কথা তিনি বলেছিলেন। মান্ডি ছবিতে একটা দৃশ্য ছিল যে মা এক বিশেষ ভঙ্গিতে দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন। আমি এই ছবিতে একদম সেই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে সীমা পাহওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। অনেকে মায়ের

সেই বিশেষ ভঙ্গির ছবির সঙ্গে আমার ছবি জুড়ে পাঠিয়েছেন। অনেকের মতে, আমাকে একদম আমার মায়ের মতো দেখতে লাগছে।’ বলিউডে দক্ষিণি তারকাদের দাপট ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে।

তাই বলিউডের জন্য কি এটা অশনিসংকেত, জবাবে আলিয়া বলেন, ‘আমরা ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের অংশ। আমি কখনই বলব না যে বলিউডের জন্য বিপদ ঘনিয়ে আসছে। সব ভাষার ছবিতে আমাদের সফল হতে হবে। যত অভিনেতা একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করবেন, আমাদের ইন্ডাস্ট্রি অতটাই উন্নতি করবে। আমরা সমগ্র দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ইন্ডাস্ট্রি হয়ে উঠতে পারি। আমাদের নিজেদের সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়া উচিত, যাতে হলিউড আমাদের ভয় পায়।’ অনেক কম বয়সে আলিয়া নাম, যশ, প্রতিপত্তি অর্জন করেছেন। আলিয়ার এখন বিশেষ ইচ্ছা কী—জবাবে স্মিত হেসে

তিনি বলেন, ‘আমাকে আরও পরিশ্রম করতে হবে। আর জীবনে সমতা বজায় রেখে এগোতে চাই। আমি নিজে করে আনন্দ পাই—এমন ছবিতে কাজ করতে চাই। আর সৃজনশীল ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে যেন তৃপ্ত করতে পারি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *