ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু বাংলা: ফেসবুকের নাম পরিবর্তনে সম্পদ ব্যয় না করে মার্ক জাকারবার্গের উচিত প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানো। এ কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মী ফ্রান্সেস হাউগেন।ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ অনেক নথি গণমাধ্যমে ফাঁস করে আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতাদের সামনে শুনানিতে অংশ নেন, তুলে ধরেন ফেসবুকের মৌলিক সমস্যাগুলো।
পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে গতকাল সোমবার শুরু হয়েছে ওয়েব সামিট। সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে হাজারো দর্শকের সামনে হাউগেন বলেন, ‘মার্ক জাকারবার্গ যদি সিইও থাকেন, তবে প্রতিষ্ঠানটি বদলাবে বলে আমার মনে হয় না।’
জাকারবার্গের পদত্যাগ করা উচিত কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে হাউগেন সে মন্তব্য করেন। সঙ্গে যোগ করেন, ‘হয়তো অন্য কারও ক্ষমতা গ্রহণের এটাই সুযোগ…নিরাপত্তায় জোর দিতে ইচ্ছুক, এমন কারও নেতৃত্বে ফেসবুক আরও শক্তিশালী হবে।’
মুহুর্মুহু করতালিতে হাউগেনকে সমর্থন জানান ইউরোপের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দর্শকেরা।
ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ৩০০ কোটি ছুঁই ছুঁই। গত সপ্তাহে জাকারবার্গ ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান ফেসবুক ইনকরপোরেটেডের নাম পরিবর্তন করে মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকরপোরেটেড করার ঘোষণা দেন।
ফেসবুক-ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সেবাগুলোকে মেটাভার্সের ভার্চ্যুয়াল জগতে যুক্ত করার ইচ্ছা থেকেই এমন উদ্যোগ নেন তিনি। যেখানে প্রত্যেকের আভাটার থাকবে, ত্রিমাত্রিক জগতে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ-কাজকর্ম সারা যাবে। জাকারবার্গ মেটাভার্সকে ফেসবুকের ভবিষ্যৎ বলছেন।
মার্ক জাকারবার্গ সশরীর উপস্থিত, অন্যজন যোগ দিয়েছেন দূরে কোথাও থেকে, অথচ দিব্যি তারা ফেন্সিংয়ের মতো খেলায় অংশ নিয়েছেন।
তবে মেটাভার্স নিয়ে যারা আগে থেকেই কাজ করছেন, তারা ফেসবুকের ব্র্যান্ড পুনর্গঠনকে বিদ্যমান ধারণাকে নতুন করে উপস্থাপন করে অর্থ আয়ের কৌশল হিসেবেই দেখছেন। কারণ, মেটাভার্স জাকারবার্গ বা ফেসবুকের উদ্ভাবন নয়, বরং ফেসবুক সম্প্রতি যে দুর্নাম আর কেলেঙ্কারির সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে, তা থেকে উতরে যাওয়ার চেষ্টা হিসেবেই ফেসবুকের নামবদল বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ফেসবুকের রিব্র্যান্ডিং কৌশলের ব্যাপারে হাউগেন বলেছেন, ব্যবহারকারীর তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যাগুলোর জরুরিভিত্তিতে সমাধান বাদ দিয়ে রিব্র্যান্ডিংয়ের যৌক্তিকতা তিনি খুঁজে পান না।
ফেসবুকের নাম পরিবর্তনের ঘোষণা এমন সময়ে এল, যখন বিশ্বব্যাপী আইনপ্রণেতাদের তীব্র সমালোচনার মুখে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে ব্যবসা পরিচালনার ধরন—বাজারে আধিপত্য, ভুয়া তথ্য ও হিংসা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়তে বাধা না দেওয়া নিয়ে আপত্তি তোলেন তারা।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির নিয়ন্ত্রণ জাকারবার্গের পাশাপাশি অল্পকিছু বিনিয়োগকারীর হাতে সীমিত। প্রতিষ্ঠানটি দুই ধরনের শেয়ার ইস্যু করে বলে সিংহভাগ বিনিয়োগকারীরা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে পারেন না।
হাউগেনের তথ্য ফাঁসের পর ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যে নথিগুলো ফাঁস করা হয়েছে, সেগুলো ভুলভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
গত মাসে ব্রিটিশ ও মার্কিন নীতিনির্ধারকদের হাউগেন বলেন, অ্যালগরিদমে পরিবর্তন না আনলে বিশ্বব্যাপী আরও সহিংসতা ছড়াবে ফেসবুক। সঙ্গে যোগ করেন, প্রতিষ্ঠানটির মৌলিক সমস্যাগুলোর একটি হলো, প্ল্যাটফর্মটির নিরাপত্তার ভিত্তি বিভিন্ন ভাষার কনটেন্ট মনিটর করা। তবে ফেসবুক পরিচালিত হয়, এমন সব দেশে সে নিয়ম তারা আমলে নেয় না।
আরো পড়ুন: