পর্যটন ও পরিবেশ

মানুষ বানাচ্ছে বাবুই-চড়ুই-দোয়েলের ঘর!

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: রজনীকান্ত সেনের ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতায় বাবুই আর চড়ুই পাখির আলাপ মনে আছে? কুঁড়েঘরে রোদ, ঝড়, বৃষ্টিতে কষ্ট পেলেও “নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা” নিয়ে কতোই না গর্ব বাবুই পাখির!

তবে এই গর্বের সঙ্গে কষ্টটাও আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে আছে। গ্রীষ্মের খরতাপ, বর্ষার অভিঘাত কিংবা শীতের রুক্ষতা, এগুলো কি একেবারেই তুচ্ছ? হয়তো নয়। তবুও প্রতিবছর এসব প্রতিকূলতাকে জয় করেই বাবুই পাখিরা জীবনকে এগিয়ে নেয়। সংগ্রামের এপর্বে পাখিরা যেমন অন্যের সহযোগিতা চায় না, তেমন পায়ও না।

আরও পড়ুন: পলিথিনখেকো ব্যাকটেরিয়ার সন্ধান মিলেছে! ধূমকেতু পরিবেশের জন্য

বন-বাদাড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাখিদের জন্য এবার ঘর বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার সামাজিক ও মানবিক সংগঠন ‘স্বপ্ন’। সংগঠনটির উদ্যোগে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় পাঁচশটি মাটির তৈরি পাতিলকে (হাড়ি) পাখিদের জন্য বাস উপযোগী করে স্থাপন করা হচ্ছে।

সংগঠনের চেয়ারম্যান সুমথ বড়ুয়া বলেন, “সম্প্রতি রামু উপজেলার মধ্যে চলমান বিভিন্ন প্রকল্প, যেমন: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন, রামু চত্বর থেকে চৌমুহনী পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ, রামু-ক্যান্টনমেন্ট-মরিচ্যা সড়ক সংস্কার প্রভৃতি কারণে প্রচুর বৃক্ষনিধন করা হয়েছে। এতে পাখিদের বাসস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা সে ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।”

রামু উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুমত বড়ুয়া আরও জানান, “কালবৈশাখী ঝড়ের কারণে এবং বর্ষাকালে বৃষ্টির ফলে প্রতিনিয়তই পাখির মৃতদেহ চোখে পড়ে। এবছরও ঝড়ের মৌসুম শুরু হয়েছে। তাই সংগঠনের প্রায় ৩০ জন সদস্যকে নিয়ে আমরা পাখিদের জন্য ঘর বানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করি।”

রামু বাইপাস, উপজেলা পরিষদ এলাকা, হাইটুপিসহ বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যে মাটির তৈরি পাতিল বা হাড়ি স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

“পাখিদের জন্য ভালোবাসা” শিরোনামে এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আরও কিছু এলাকায় হাড়ি স্থাপন করা হবে জানান সংগঠনের সদস্যরা। এতোদিন যে মানুষ পাখিদের ধরে খাঁচায় বন্দি করেছে, বন্দি পাখির মধ্যে আনন্দ অনুসন্ধান করেছে, সেই মানুষই আজ উন্মুক্ত প্রান্তরে পাখিদের জন্য ঘর তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এ যেন জীবনানন্দের “যে-জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের— মানুষের সাথে তার হয়নাকো দেখা” কথাটিকে ভুল প্রমাণ করে। বাবুই-চড়ুই-দোয়েল-ফড়িং সবাই আজ মানুষের সঙ্গে পাশাপাশি জীবন রচনা শুরু করেছে। মানুষই এ সুযোগ করে দিয়েছে। সূত্র: একাত্তর টিভি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *