লেখালেখি

মানসিক অবসাদ কাটাতে বই

নবনীতা দত্ত তিথি :

ইংরেজি সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক ফ্রান্সিস বেকনের মতে, “Reading maketh a full man.” বই পড়ার মাধ্যমে একজন মানুষ পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। মাথায় প্রশ্ন আসতে পারে, কী করে বই একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ গঠন করতে পারে? পূর্ণাঙ্গ মানুষই আবার কি?

বই পড়ার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করি। বই আমাদের একইসাথে জ্ঞান এবং মানসিক প্রশান্তি প্রদান করে। অর্থাৎ একইসাথে মস্তিস্ক এবং আত্মার খাদ্যের জোগান দেয় বই।

আমার মতে, একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ যে পৃথিবীর বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণা রাখে, যে মানবকল্যাণে তার জ্ঞানকে প্রয়োগ করে এবং যে মানবকল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়।

Ray Bradbury এর মতে, “You don’t have to burn books to destroy a culture. Just get people to stop reading them.” সুতরাং দেখা যাচ্ছে বই কিভাবে সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। যখন মানুষ বই পড়া বন্ধ করে দিবে তখনই ধ্বংসের দোরগোড়ায় এসে দাঁড়াবে সংস্কৃতি।

বই মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু ইত্যাদি ইত্যাদি তো আমরা ছোটবেলা থেকেই পড়ছি। কিন্তু বাস্তবে যদি এসব প্রয়োগই না করি তাহলে আর এসব উক্তি পড়ে লাভ ই বা কি হলো!!

Life is not a bed of roses.. এটাও আমরা জানি এবং মানিও। কণ্টকাকীর্ণ এ জীবনকে ফুলের মতো সুন্দর করে দিতে পারে বই পড়ার অভ্যাস।

কী ভাবছেন? বইয়ের এত ক্ষমতা!! বইয়ের ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে গেলে বই পড়েই দেখুন একবার। বইয়ের জগতে ডুবে গেলে এ জাগতিক সব দুঃখ কষ্ট তুচ্ছ মনে হবে নিজের কাছে।

লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অবসাদে ভুগছিলাম আমি। তারপর নিজেকে ডুবিয়ে দিলাম বইয়ের দুনিয়ায়। রবীন্দ্র, শরত, হুমায়ূনে ডুব দিয়ে মানসিক অশান্তি, মন খারাপ যে কোন রাস্তা দিয়ে পালিয়েছে ধরতেই পারিনি। আমি নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই সবাইকে বলব মানসিক অবসাদ কাটাতে বই পড়ার জুড়ি মেলা ভার।

বই পড়া শুরু করবেন কী করে কিংবা কোন বই দিয়ে আগে শুরু করবেন এমন চিন্তা থাকে অনেকের। আমি বলব, আপনার রুচি অনুযায়ী যে কোনো বই দিয়েই শুরু করুন পড়া। আমরা ছোট থেকেই বিভিন্ন লেখকের টুকিটাকি লেখার সাথে পরিচিত হয়েছি বাংলা বই পড়ার মাধ্যমে। ইতিমধ্যে কোনো কোনো লেখক আপনার প্রিয় হয়েও উঠেছেন। শুরু করুন সেই প্রিয় লেখকের যে কোনো বই দিয়ে। যারা কবিতা পড়তে ভালোবাসেন তারা কবিতার বই পড়তে পারেন, যারা গল্প পড়তে ভালোবাসেন তারা পড়তে পারেন, ছোটগল্প কিংবা উপন্যাসের বই। প্রতিটি অঞ্চলেই ছোট বড় লাইব্রেরি রয়েছে। সেখান থেকে সংগ্রহ করে নিতে পারেন আপনার পছন্দমতো বই। কিংবা বইপ্রেমী কারো কাছ থেকে ধার করে নিতে পারেন বই, নয়তো অনলাইনে পিডিএফ ফাইলস কিংবা বিভিন্ন বই পড়ার অ্যাপস তো আছেই।

তাছাড়াও আপনি যুক্ত হতে পারেন বই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গ্রুপের সাথে। পড়ে নিতে পারেন বিভিন্ন বই সম্পর্কে পাঠকদের অনুভূতি। এসব জিনিস আপনাকে বই নির্বাচনে বেশ সাহায্য করবে।

আরেকটা জিনিস মাথায় রাখা উচিত, বই পড়ার কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই। যেমন কেউ ফেলুদার বই শেষ করেছে স্কুল জীবনেই, আমি পড়েছি গ্র‍্যাজুয়েশন শেষ করে। আমি এখনো রূপকথার গল্প পড়ি, ঠাকুরমার ঝুলি পড়ি। মোট কথা, যে বই আপনাকে আনন্দ দেয় আপনি সেই বইটাই পড়বেন।

কিছু বই পড়ার পরেই আপনি লক্ষ্য করবেন আপনার মাঝে অদ্ভুতভাবেই অনেক পরিবর্তন এসেছে, আপনি আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন, আপনার মন খারাপগুলো উবে গেছে।

বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, বই পড়ার মাধ্যমে মানুষের স্মৃতিধারণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়াও ঘুম ভালো হয়। যারা বেশি বই পড়ে তাদের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে লেখার দক্ষতাও চমৎকার হয়। কথায় বলে, “পড়ালেখা”, পড়া এবং লেখা একে অপরের সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত। আপনি কোনো বিষয় সম্পর্কে না পড়ে ঐ বিষয় সম্পর্কে লিখতে পারবেন না।

তাই যারা যারা মন খারাপ নিয়ে বসে আছেন, আত্মবিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকেছে যাদের কিংবা যারা নিজেদেরকে একটু উন্নত করতে চাইছেন, একটু পরিবর্তন চাইছেন নিজের জীবনে, কিংবা যারা ঘুমহীন রাত কাটাচ্ছেন দিনের পর দিন, তারা আর দেরি না করে হাতে তুলে নিতে পারেন একটি বই।

বই আমার জীবন যেভাবে পাল্টেছে তার জন্য আমি বইয়ের কাছে কৃতজ্ঞ, আমি কৃতজ্ঞ সাহিত্য অঙ্গনে বিরাজমান সব লেখকদের প্রতি যাদের চিন্তাচেতনা এনেছে আমার জীবনে আমূল পরিবর্তন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *