প্রচ্ছদ

মাত্র চারদিনেই আফগানিস্তান দখল করে ফেলল তালেবানরা? চিন্তিত বিশ্ব

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: ২০ বছর আগে আফগানে যখন মার্কিন সেনাবাহিনী ঢুকে তখন ক্ষমতায় ছিল তালেবান। দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন তালেবান নেতা মোল্লা ওমর। সেই যুদ্ধের ফয়সালা ছাড়াই আফগানিস্তানে তাদের অবস্থানের ইতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী মাসে মার্কিন সৈন্য যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত যাওয়ার কথা। কিন্তু তার আগেই রক্তপাত ছাড়াই ক্ষমতা নিল তালেবান। গতকাল রবিবার রাজধানী কাবুল দখল করেছে তালেবান। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি গতকালই ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন।

তালেবান আদতে কারা :

তালেবান আদতে পশতু শব্দ। পশতু ভাষায় যার অর্থ ছাত্র। ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে উত্তর পাকিস্তানে তালেবান আন্দোলনের জন্ম হয়। এই আন্দোলনে মূলত পশতুন অর্থাৎ পশতুভাষীদের প্রাধান্য। ধারণা করা হয়, মাদরাসাগুলোতে প্রথম এরা সংগঠিত হয়। এই মাদরাসাগুলো পরিচালিত হতো সৌদি অর্থে এবং সেখানে খুবই কট্টর সুন্নি মতাদর্শের ইসলামই প্রচার করা হতো। পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান এই দুই দেশের সীমান্তের দুই দিকেই আছে বিস্তীর্ণ পশতুন অধ্যুষিত অঞ্চল। ১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েতদের প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে সাহায্য করেছিলেন তালেবান নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমর, যিনি মুজাহিদীন কমান্ডার হন পরে। ১৯৯৬ সালে কাবুল ও কান্দাহার দখল করে তালেবানরা। এরপর তারা প্রেসিডেন্ট বুরহানউদ্দিন রাব্বানির সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে নিজেদের সরকার প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে মৌলবাদী ইসলামিক শক্তি হিসেবে শাসন করেছিল তালেবান। আফগানিস্তানকে নিজেদের কবজায় আনার পরই সে দেশে কঠোর ইসলামিক শাসন জারি করে তালেবানরা। অপরাধীদের প্রকাশ্যে হত্যা করার মতো কঠোর শাসন শুরু করে তালেবানরা। পুরুষদের দাড়ি রাখা, মহিলাদের বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। মেয়েদের স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে তারা। টেলিভিশন, সংগীত, সিনেমাও নিষিদ্ধ করে তারা। এরই প্রেক্ষাপটে তালেবানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। তালেবানদের একাধিক পদক্ষেপে নিন্দার ঝড় ওঠে আন্তর্জাতিক মহলে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন মুল্লুকে জঙ্গি হামলার ঘটনার মোস্ট ওয়ান্টেড ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছিল তারা। লাদেনকে হাতে পেতে আফগানিস্তানে আক্রমণ চালায় আমেরিকা। এরপর ২০ বছর আফগানিস্তানে শেকড় গাড়ে আমেরিকা। কিন্তু তালেবানমুক্ত করতে পারল না আফগানিস্তানে। এর মধ্যে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানের ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

পাকিস্তানের ভূমিকা :

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তারাই তালেবানের নেপথ্য কারিগর। কিন্তু এতে কোনো সন্দেহ নেই, শুরুর দিকে যে আফগানরা তালেবান আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন, তারা সবাই পাকিস্তানের বিভিন্ন মাদরাসায় পড়াশোনা করেছিলেন। যদিও পাকিস্তান সবসময় অস্বীকার করেছে এতে তাদের কোনো হাত নেই। তবে পাকিস্তান ছিল সেই তিনটি দেশের একটি, যারা তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর তালেবানকে অন্য যে দুটি দেশ স্বীকৃতি দেয় তারা ছিল সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। আর পাকিস্তান তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদও করেছিল সবার শেষে।

আবার প্রকাশ্য কর্মকান্ডে তালেবান :

২০১৩ সালে আফগানিস্তানে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা তৈরি হয়, যখন তালেবানরা কাতারে একটি অফিস খোলার ঘোষণা দেয়। এর আগে তাদের তেমন কার্যক্রম দেখা যায়নি। কিন্তু তারপরও উভয়পক্ষের মধ্যে অবিশ্বাস রয়েই যায় এবং সহিংসতা অব্যাহত থাকে। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে তালেবান স্বীকার করে যে তাদের নেতা মোল্লাহ ওমরের মৃত্যুর দুই বছর পর পর্যন্ত এ খবর তারা গোপন রেখেছিল।

 কল্পনার চেয়ে তালেবানের গতি দ্রুত :

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা জানিয়েছিল, আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা প্রত্যাহারের ছয় মাসের মধ্যে তালেবান রাজধানী শহর কাবুল দখল করবে। কিন্তু এখন তারা ভিন্ন কথা বলছে। কিন্তু গত বুধবার সেই বক্তব্য থেকে সরে এসে মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনী বলছে, মাত্র ৯০ দিনের মধ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবান রাজধানী শহর কাবুল দখল করে নেবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটল মাত্র চার দিনের মধ্যে। তালেবানের অবিশ্বাস্য সামরিক সাফল্যের দিকে আফগান সরকার তো বটেই, পুরো বিশ্বই এখন হাঁ হয়ে তাকিয়ে রয়েছে, এটা কীভাবে সম্ভব। এক মাসের মধ্যে গোটা দেশ তালেবানের দখলে। যেখানে আমেরিকান অস্ত্রে সজ্জিত আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা ৩ লাখের মতো। বিমান বাহিনীও রয়েছে তাদের। অন্যদিকে তালেবানে যোদ্ধার সংখ্যা ৬০ থেকে ৮০ হাজারের মতো। কোনো ইউনিফর্ম নেই, সিংহভাগ যোদ্ধার পায়ে জুতা পর্যন্ত নেই। কিন্তু তাদের চাপে তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ছে আফগান বাহিনীর প্রতিরোধ। তালেবানের এই সামরিক সাফল্যে হতচকিত হয়ে পড়েছে খোদ যুক্তরাষ্ট্র।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *