নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়াতে খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রে নানা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করছে জেলা প্রশাসন। ফলে বদলে যাচ্ছে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের রূপ। আগামীতে আলুটিলায় বিনোদনের পাশাপাশি বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬০০ ফুট ওপরে পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলার অবস্থান। এই পর্যটন কেন্দ্র থেকে খাগড়াছড়ি শহর, নদী, সর্পিল রাস্তা, পাহাড় ও সবুজ গাছপালা দেখে যায়। পর্যটন এলাকায় রয়েছে প্রাকৃতিক গুহা ও ঝরনা। ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়িকে জেলা ঘোষণার পর শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠে। এটির দেখাশোনা করছে জেলা প্রশাসন। এই পর্যটন কেন্দ্রে প্রতি মাসে গড়ে ৫০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেন। ইতোমধ্যে আলুটিলার প্রবেশমুখে ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে স্বর্ণের আদলে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। পর্যটকরা আলুটিলা ভ্রমণ করে দর্শনীয় স্থান দেখলেও বিনোদন থেকে বঞ্চিত হতেন এতদিন। কারণ, এখানে রাতযাপনের গেস্টহাউজ কিংবা খাবারের হোটেল এবং শিশুদের বিনোদন কেন্দ্র ছিল না। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন হলেও এবার সবচেয়ে বড় বাজেটের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে প্রশাসন। মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে চলতি বছর প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে ঝুলন্ত সেতু, নন্দনকানন পার্ক, এএমপি থিয়েটার ও খুমপুই রেস্টহাউজ। চলতি বছরের জুন মাস প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ঝুলন্ত সেতু, নন্দনকানন পার্ক ও রেস্টহাউজের কাজ শেষের দিকে। তবে এএমপি থিয়েটারের কাজ শেষ হতে সময় লাগবে।

চলমান প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হলে পর্যটকরা রাতযাপন, বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর ঐতিহ্যময় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয়, থাকা-খাওয়া ও বিনোদনের অত্যাধুনিক সুযোগ পাবেন। দীর্ঘদিন পর হলেও আলুটিলাকে আকর্ষণীয় করতে প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পর্যটকরা।

কুমিল্লার লাকসাম থেকে আসা দলিলুর রহমান মানিক, আবু হানিফ বাবলু, ঢাকা থেকে আসা সৈয়দা রাবেয়া বসরি, আঞ্জুমানয়ারা বেগম এবং চট্টগ্রামের খুলশি এলাকার বাসিন্দা হরিপদ শর্মা জানান, আগেও তারা আলুটিলাসহ খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণ করেছেন। তখন বিনোদনের অনেক কেন্দ্র ছিল না। দীর্ঘদিন পর আলুটিলার উন্নয়নে অনেক প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ হলে আলুটিলার সৌন্দর্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। নেপালের মতো আলুটিলাকে ঘিরে মাউন্টেন ট্যুরিজম গড়ে তোলা সম্ভব বলেও জানান তারা।

পর্যটকদের মতামতের সঙ্গে একমত খাগড়াছড়ি হোটেল মালিক সমিতির সভাপতি কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক এস অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা ও হোটেল অরণ্য বিলাসের মালিক স্বপন চন্দ্র দেবনাথ।

তারা জানিয়েছেন, খাগড়াছড়ির প্রধান পর্যটন কেন্দ্র আলুটিলাকে ঘিরে মাউন্টেন ট্যুরিজমের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। দীর্ঘদিন পর হলেও আলুটিলাকে ঘিরে অনেক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে পাহাড়ের পর্যটনকেন্দ্রিক অর্থনীতি আরও বিকশিত হবে।

জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, খাগড়াছড়িতে শিল্পকারখানা গড়ে না ওঠায় পর্যটনই অর্থনীতির প্রধান খাত। তাই পর্যটন অর্থনীতির বিকাশের স্বার্থে আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নকাজ চলছে। চলমান প্রকল্পগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হলে আলুটিলায় পর্যটক সমাগম আরও বাড়বে।

এই পর্যটন কেন্দ্রে প্রতি মাসে গড়ে ৫০ হাজার পর্যটক ভ্রমণ করেন

তিনি বলেন, আলুটিলা পর্যটনের উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করে নির্মাণকাজ চলছে। পাহাড়ের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে নির্মাণ করা হচ্ছে এএমপি থিয়েটার। দর্শক গ্যালারিতে বসে কমপক্ষে ৫০০ পর্যটক একসঙ্গে পাহাড়ের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। অনেক পর্যটক সাজেক বেড়াতে এসে শহরে রাতযাপন করেন। পর্যটকরা যাতে প্রাকৃতিক পরিবেশে আলুটিলা পাহাড়ে রাতযাপন করতে পারেন, সে জন্য দুই কোটি টাকা ব্যয়ে খুমপুই রেস্টহাউজ নির্মাণ করা হয়েছে। বিনোদনের জন্য এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে ঝুলন্ত সেতুসহ আরও কিছু স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।

ঝুলন্ত সেতু নির্মাণের ঠিকাদার বিল্লাল হোসেন বলেন, সেতুর কাজ শেষ। আগামী জানুয়ারি মাসে খুলে দেওয়া হবে। এএমপি থিয়েটারের দর্শক গ্যালারির কাজ শেষ হতে আগামী জুন মাস পর্যন্ত সময় লাগবে। পার্কে বসার স্থান, গাড়ি পার্কিংয়ের কাজ শেষের দিকে। একেকটির কাজ শেষে খুলে দেওয়া হবে। আগামী জুন নাগাদ সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।

আরো পড়ুন:

দীর্ঘ আট মাস বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু হল ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *