ডেস্ক প্রতিবেদন, ধূমকেতু বাংলা: কোভিডের আবির্ভাব হওয়ার পর থেকে দুই বছর কেটে গেছে। টিকাও বিতরণ শুরু হয়েছে এক বছর হলো। সর্বশেষ চলতি শীতে মহামারি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার যে আশা জেগেছিল, ওমিক্রন ধরনের উদ্ভবে এক মাস আগে তাও শেষ হয়ে গেছে। সিএনএনের এক নিবন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির সাবেক পরিচালক ডা. টম ফ্রায়েডেন লিখেছেন, ২০২১ থেকে সাতটি জীবন রক্ষাকারী পাঠ এই মহামারি শেষ করার কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে।
রিয়েল টাইম ডাটার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত :ডাটা বা উপাত্ত হলো জনস্বাস্থ্যের প্রাণ। রিয়েল টাইম ডাটার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরায়েল এবং যুক্তরাজ্য দ্রুত মহামারির সঙ্গে সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠা এবং বিশ্বকে টিকা, নতুন ধরন, মাস্ক এবং আরও অনেক কিছু সম্পর্কে অবহিত করার সুযোগ দিয়েছে। অনেক জায়গায় ভুল করা হয়েছে- যেমন তড়িঘড়ি অনেক কিছু উন্মুক্ত করে দেওয়া, মাস্ক না পরা, দ্রুত টিকা না দেওয়া। কিন্তু সবচেয়ে বড় ভুল হলো ডাটা দ্রুত না পাওয়া এবং একে কাজে না লাগানো। সব দেশকে ডাটা সিস্টেমে উন্নত করতে হবে। বিশ্বব্যাপী সঠিক এবং দ্রুত পরীক্ষাগার নেটওয়ার্ক দ্বারা সমর্থিত শক্তিশালী নজরদারি ব্যবস্থা অপরিহার্য।
কার্যকর যোগাযোগ : তথ্য-ভিত্তিক সুপারিশ প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সময়ে রাজনীতিকরণ, তথ্যের অভাব এবং ভুল তথ্য জনগণের চোখ ও কানকে প্রতিনিয়ত জ্বালাতন করছে। যেসব নেতা কার্যকর ও সফলভাবে যোগাযোগ করেছেন তারা জনগণকে তাদের নিজেদের ঝুঁকি বুঝতে এবং যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সক্ষম করতে সফল হয়েছেন। যেমন নিউজিল্যান্ড, সেনেগাল এবং ভারতীয় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ আস্থা তৈরি করেছে। এতে জনগণের বোঝাপড়া বেড়েছে যা প্রশমন ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্যতা করে তুলেছে। এতে তারা ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন।
নির্দলীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে আস্থা তৈরি :একটি দেশের জনস্বাস্থ্যের পরিকাঠামো যতই ভালোভাবে প্রস্তুত করা হোক না কেন খারাপ রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেই সক্ষমতা নষ্ট করতে পারে। এ কারণেই ভুল তথ্য প্রতিরোধে সুশাসন, প্রমাণ-ভিত্তিক নীতির দ্বারা সমর্থিত এবং স্পষ্ট যোগাযোগ কার্যকর সাড়াদানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ আস্থা টিকার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়। যেমন আফ্রিকার সিডিসির শক্তিশালী নেতৃত্ব এর একটি ভালো উদাহরণ।
স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা : দুঃখজনকভাবে এবং অগ্রহণযোগ্যভাবে ২০২১ সালে স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ার একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা দেখা গেছে। তাদের অনেকেই কোভিডে মারা যাচ্ছে। নিম্ন বেতন, দুর্বল সংক্রমণ প্রতিরোধ পদ্ধতি, ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের ঘাটতি, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা এবং আইনি বা মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার অভাব আগামী দশকে বিশ্বে ১ কোটি ৮০ লাখ স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। দৈনন্দিন স্বাস্থ্যসেবার জন্যও আমাদের শক্তিশালী স্বাস্থ্যকর্মী বাহিনীর প্রয়োজন। তাই স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সুরক্ষার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে।
বিশ্বব্যাপী টিকাদান : আমাদের কাছে পুরো এক বছর ধরে অত্যন্ত নিরাপদ এবং কার্যকর কোভিড টিকা রয়েছে। তা সত্ত্বেও আফ্রিকার জনসংখ্যার ১০ ভাগেরও কম টিকা পেয়েছেন। বিপরীতে উচ্চ আয়ের দেশগুলোর বেশিরভাগ মানুষ এখন সম্পূর্ণরূপে টিকাপ্রাপ্ত। যদিও শুধু টিকাই মহামারি শেষ করবে না। তবে এটি ছাড়া মহামারি শেষও হবে না। যত দ্রুত সম্ভব বিশ্বের অনেক মানুষকে টিকা দিতে হবে।
দ্রুত হুমকির সন্ধান এবং তা দমন : বিশ্বব্যাপী এমন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যাতে প্রতিটি দেশ প্রতিটি নতুন সন্দেহভাজন প্রাদুর্ভাব উদ্ভূত হওয়ার সাত দিনের মধ্যে শনাক্ত করতে পারে। এরপর তার তদন্ত শেষে এক দিনের মধ্যে রিপোর্ট করতে পারে এবং একটি কার্যকরী সাড়াদান করতে পারে। এ জন্য বিশ্বব্যাপী প্রয়োজনীয় আর্থিক, প্রযুক্তিগত এবং রাজনৈতিক বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে।
বিশ্বকে নিরাপদ করা : কোভিডই বিশ্বের শেষ স্বাস্থ্য হুমকি নয়। বিশ্বের যে কোনো স্থানে অনিয়ন্ত্রিত রোগ ছড়ানো সব জায়গার মানুষের জন্যই হুমকিস্বরূপ। কোভিড ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাপী এক কোটির বেশি লোককে হত্যা এবং অর্থনীতিকে পঙ্গু করেছে। এতে খরচ হয়েছে অন্তত ১৫ ট্রিলিয়ন ডলার। কিন্তু বিশ্ব মহামারির জন্য অপ্রস্তুত এবং অরক্ষিত রয়ে গেছে।
প্রাদুর্ভাব শনাক্ত করতে বর্তমানে গড়ে ১১ দিনের বেশি সময় লাগে। অথচ প্রতি বছর শুধু আফ্রিকাতেই ১০০ টিরও বেশি স্বাস্থ্য হুমকি সৃষ্টি হয়। মহামারি প্রতিরোধ করার জন্য বিশ্বের প্রয়োজন আরও শক্তিশালী জনস্বাস্থ্য সংস্থা এবং অতিরিক্ত তহবিল। পাশাপাশি এই তহবিল দিয়ে রিয়েল টাইম উন্নতির জন্য প্রযুক্তিগত এবং ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতার প্রয়োজন। ২০২২ সালে আমরা যদি প্রস্তুতির ব্যাপক উন্নতি না করতে পারি তাহলে আমাদের জীবদ্দশায়ও তা করার সম্ভাবনা নেই।
আরো পড়ুন: