নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: দুর্জয় ও অবন্তিকা- দুই ভাইবোন কখনও মায়ের পিছু পিছু হাঁটছে, আবার কখনও নিজেরাই খেলায় ব্যস্ত। ২ মাস ২৩ দিন আগে মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার টগর-বেলী দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেয় তারা। শুধু বাঘ নয়, করোনা মহামারির এই বন্ধে চিড়িখানায় বাচ্চা দিয়েছে হরিণ, ময়ুর, গন্ডার, জেব্রা ও জিরাফও। তবে তাতে খুব একটা খুশি হতে পারছে না চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ, বাড়তি এই প্রাণির থাকার জায়গা এবং লালন-পালনের খরচ মেটাতে ‘বিড়ম্বনায়’পড়েছেন তারা।
করোনাকালে দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকায় নিরিবিলি পরিবেশ পেয়ে এসব বন্যপ্রাণি খাঁচায় বন্দি থেকেও বাচ্চা দিয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বন্যপ্রাণি খাঁচায় বন্দি থাকলে বাচ্চা দেওয়ার প্রবণতা খুবই কমে যায়। যার কারণে চিড়িয়খানায় খুব কম পশুপাখিই বাচ্চা দেয়। করোনা মহামারির কারণে গেলে বছর থেকে দফায় দফায় চিড়িয়াখানায় দর্শনাথী প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। কোলাহল মুক্ত পরিবেশ এবং বাড়তি যত্নে বন্যপ্রাণিগুলো রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। আর এ কারণে তাদের প্রজনন সক্ষমতা যেমন বেড়েছে, তেমনি বাচ্চা দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাঘ বাচ্চা দিয়েছে দুটি, জেব্রা দুটি, আফ্রিকার ঘোড়া তিনটি, ইমু পাখি ২৩টি, ওয়াক পাখি ১৮০টি, কানি বক ১৫০টি, নীল ময়ুর ১০০টি, সাদা ময়ুর ২৫টি এবং কবুতর ৩০টি। এছাড়া জলহস্তি, ইমপালা, হরিণ, জিরাফও বাচ্চা দিয়েছে।
চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, এটা আমাদের জন্য আনন্দের যে এতগুলো প্রাণি বাচ্চা দিয়েছে। বন্যপ্রাণিকে খাচায় বন্দি রেখে বাচ্চা পাওয়া সহজ কাজ নয়। করোনায় দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ থাকায় এ সুফল আমরা পেয়েছি। তবে বন্য এসব প্রাণির প্রসব ও বাচ্চা বড় করাও চ্যালেঞ্জ। নার্সিং করে বড় করার চেষ্টা করছি। আমাদের কর্মীরা প্রাণিগুলোর বাড়তি যত্ন নিতে পেরেছে।
তবে এসব প্রাণি বাচ্চা দেওয়ায় ‘চিন্তা’ও বেড়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের। খাঁচার ধারণক্ষমতার তুলনায় পশু-পাখির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তাদের রাখার জায়গা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংকট। এছাড়া এসব প্রাণিদের খাবার জোগানেও বেড়েছে ব্যয়। অতিরিক্ত প্রাণির দেখাশোনার জন্যও বাড়তি জনবলের প্রয়োজন হবে। এ কারণে হরিণ ও ময়ুর বিক্রি করছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এছাড়া অন্যান্য প্রাণি দেশি-বিদেশি চিড়িয়াখানার সঙ্গে বিনিময় করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি জাতীয় চিড়িয়াখানা হরিণ বিক্রয় করে ৩৬ লাখ টাকা আয় করেছে। সামনে বিক্রি করা হবে ময়ুর। এছাড়া কিছু পাখি মুক্ত পরিবেশে অবমুক্ত করা হবে। ডা. মো. আব্দুল লতিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সরকার বিক্রির অনুমতি দিয়েছে, তাই হরিণ ও ময়ুর বিক্রি করা হবে। এক জোড়া হরিণ কিনতে চিড়িয়াখানাকে দিতে হবে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এক জোড়া ময়ুর কিনতে দিতে হবে ৫০ হাজার টাকা।
চিড়িয়াখানায় যে শেডে জেব্রা রাখা হয় সেখানে ধারণক্ষমতা পাঁচটির কিন্তু বর্তমানে আছে সাতটি আছে। জলহস্তি আটটি রাখার জায়গা আছে, অথচ আছে ১৪টি, আবার হরিণ আছে ৩৫০টি, কিন্তু ধারণক্ষমতা ১৭০টির। ময়ুর ৮০টি রাখা যায়, সেখানে রাখা হচ্ছে ২০০টির বেশি।
চিড়িয়াখানার পরিচালক বলেন, পশুপাখির বাচ্চা যেমন আনন্দ দিয়েছে, তেমনি আবার আমাদের চিন্তাও বেড়েছে। এতো পশু-পাখি রাখার জায়গাতো আমাদের নেই। আমরা এজন্য দেশি-বিদেশি চিড়িয়াখানার সঙ্গে বিনিময় করার উদ্যোগ নিয়েছি। যেমন- রংপুর চিড়িয়াখানায় বাঘ ও সিংহ দেওয়া হবে, বিদেশ থেকেও আমাদের সঙ্গে অনেক চিড়িয়াখানা যোগাযোগ করছে। আমরা তাদের সঙ্গেও বিনিময় করবো।
১৯৬৪ সালে হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে প্রথম চিড়িয়াখানা হয়। এরপর ১৯৭৪ সালে মিরপুরে ২১৩ দশমিক ৪১ একর জায়গায় চিড়িয়াখানা স্থানান্তর হয়। যদিও পরবর্তীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাঁধের জন্য ৬ দশমিক ৬৫ একর, কেন্দ্রীয় মুরগির খামারের জন্য ২০ দশমিক ১৩ একর জায়গা ছেড়ে দিতে হয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে। বর্তমানে ১৮৬ দশমিক ৬৩ একর জায়গায় রয়েছে চিড়িয়াখানাটির। আর এতে ৬৯৩টি বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণি ও ১ হাজার ২৯২টি পাখি রয়েছে। এছাড়াও অ্যাকুরিয়ামে ১১৪টি মাছ রয়েছে জাতীয় চিরিখানায়।