ধর্ম ও জীবনসংস্কৃতি

মহাভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধাগণ

ধর্ম ও জীবন ডেস্ক, সুখবর ডটকম: মহাভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ যোদ্ধা কে? নিঃসন্দেহে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ!! কারণ তিনি স্বয়ং পরমব্রহ্ম ছিলেন। তাই তাকে এই তালিকায় রাখা হয়নি।

মহাভারত হিন্দুধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ। এই গ্রন্থকে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা পঞ্চম বেদ আখ্যা দিয়ে ধর্মগ্রন্থ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এই গ্রন্থের মূল-প্ররিক্রমা হচ্ছে ১৮ দিনব্যাপী ঘটে যাওয়া কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে মহাশক্তিশালী রথী-মহারথীরা যুদ্ধ করেছিলেন। আর তাদের মধ্যে এমন এমন সব যোদ্ধাগণও ছিলেন যারা এক বাণে পৃথিবী ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখতেন!

কিন্তু এরই মধ্যে একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। মহাভারতের ইতিহাসে সব থেকে শক্তিশালী যোদ্ধা কে? এই প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব আজকে।

মহাভারতের শীর্ষ ১০ জন শক্তিশালী যোদ্ধা

১.ভীষ্ম

গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম ছিলেন শৌর্যে, বীর্যে সবার থেকে সেরা। ইনিই ছিলেন সেই মহাবলী যোদ্ধা যার সাথে মহাভারতের অন্য কোনো যোদ্ধার তুলনা করা যায় না। তিনি তার অস্ত্রগুরু খ্যাত পরশুরামকে পর্যন্ত যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন। যুদ্ধবিদ্যা হোক বা ধর্ম, সবদিক দিয়ে পরিপূর্ণ ছিলেন পিতামহ ভীষ্ম। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে তাকে শ্রেষ্ঠ বলেছেন। তার কারণেই কুরুবংশ ও রাজ্যের উপর অন্য কোন রাজাগণ আক্রমণ করতে সাহস করতো না। তিনি ছিলেন কুরুবংশের এক অতন্দ্র প্রহরী (রক্ষাকারী)। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তিনি তার ব্যক্তিধর্ম রক্ষা হেতু কৌরব পক্ষ অবলম্বন করে দশদিন যুদ্ধ করেন। এই দশদিনে তিনি পান্ডব পক্ষের প্রায় অর্ধেক সেনা নিধন করে ফেলেন। তাকে বধ করার জন্য অর্জুনের বীরত্বও যথেষ্ট ছিল না। এর সাথে পিতার দেওয়া ইচ্ছামৃত্যুর বরদানের জন্য তার ক্ষমতার কোন শেষ ছিল না। যুদ্ধের দ্বাদশতম দিনে শিখন্ডীকে সম্মুখে রেখে অর্জুন ভীষ্মকে শরশয্যা প্রদান করেন। ভীষ্মকে যুদ্ধ থেকে না সরালে পান্ডব পক্ষ কখনোই যুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হতো না। তিনি নিঃসন্দেহে মহাভারতের সবথেকে শক্তিশালী যোদ্ধা।

কর্ণ ও অর্জুনের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ

কর্ণ ও অর্জুন একে অপরের সমকক্ষ যোদ্ধা ছিলেন। তবুও কিছু মানুষ মনে করেন অর্জুন শ্রেষ্ঠ। আবার কিছু মানুষ কর্ণকে অধিক শক্তিশালী বলে আখ্যায়িত করেন।

২. কর্ণ

সূর্যদেবের মানসপুত্র। সম্পর্কে ছিলেন পান্ডবদের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। পরশুরামের নিকট অস্ত্রবিদ্যা লাভ করেন তিনি। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তিনি কৌরব পক্ষ অবলম্বন করেছিলেন। প্রায় সমস্তরকম দিব্য অস্ত্র চালানোর ক্ষমতা ছিল তার মধ্যে। তার নিকট সুর্যদেবের দেওয়া কবচ ও কুন্ডল ছিল। যা ব্রহ্মাস্ত্রকেও গিলে ফেলার ক্ষমতা রাখতো। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে ভগবান ইন্দ্র এক ব্রাহ্মণের বেশ ধারণ করে কর্ণের নিকট থেকে কবচ ও কুন্ডল দান হিসেবে চেয়েছিলেন। অবশ্য কবচ ও কুন্ডল ছাড়াও তিনি ছিলেন অত্যন্ত শক্তিশালী। মহাভারতে কথিত আছে তিনি জরাসন্ধকেও মল্যযুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন।

৩.অর্জুন

দেবরাজ ইন্দ্রের বরপুত্র। মহাভারতের ইতিহাসে এক অন্যতম শ্রেষ্ঠ তীরন্দাজ ছিলেন অর্জুন। ভগবান শিবের সঙ্গেও দ্বন্দ্বযুদ্ধ করেছিলেন এই অব্যর্থ ধনুর্বিদ। দ্রোণের নিকট অস্ত্রশিক্ষাকালে তিনি অত্যন্ত অল্পবয়েসেই ব্রহ্মাস্ত্র ধারণ করার যোগ্য হয়েছিলেন। দ্রোণাচার্য যখন গুরুদক্ষিণা হিসেবে দ্রুপদের বন্দিত্ত্ব চান, তখন মূলত অর্জুনের বীরত্বেই তা সম্ভব হয়েছিল । কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে জয়দ্রথ, সুশমা ও কর্ণের মতো বহু মহাশক্তিশালী যোদ্ধাদের পরাজিত করেছিলেন তিনি।

৪. দ্রোণাচার্য

ভরদ্বাজ মুনির পুত্র। পরশুরামের কাছ থেকে শেখেন ধনুর্বিদ্যা । কৌরব ও পান্ডবদের অস্ত্রগুরু দ্রোণাচার্য ছিলেন এক মহাক্ষমতাশালী মহারথী । তিনি পরশুরামের নিকট একাধিক দিব্যাস্ত্র লাভ করেছিলেন । পিতামহ ভীষ্মের পর কৌরব পক্ষের সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই যোদ্ধা । তার রচিত চক্রব্যুহের জন্যই অভিমন্যুর মতো মহাবীরের বধ সম্ভব হয়েছিল ।

৫.অভিমন্যু

অর্জুন এবং সুভদ্রার পুত্র । মহাভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে কমবয়সী মহারথী ছিলেন অভিমন্যু । অভিমন্যু একাই কৌরব পক্ষের সাত মহাবীর যোদ্ধার (কর্ণ, দ্রোণ, দুর্যোধন, অশ্বত্থামা, দুঃশাসন, শকুনি, কৃপাচার্য) মোকাবিলা করেছিলেন ।

৬. অশ্বত্থামা

অশ্বত্থামা ছিলেন দ্রোণাচার্যের পুত্র । সীমাহীন শক্তির অধিকারী ছিলেন এই মহারথী । তার কাছে ব্রহ্মাস্ত্র, ব্রহ্মশীর ও নারায়ন অস্ত্র নামক তিনটি মহাশক্তিশালী বাণ ছিল । যার কারণে তার পরাজয় প্রায় অসম্ভব ছিল । কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ১৫ তম দিনে তিনি পান্ডবপক্ষীয় সমস্থ যোদ্ধাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে নারায়ণ অস্ত্র নিক্ষেপ করেন । এই অস্ত্রটির বিশেষত্ব হলো যার হাতে অস্ত্র থাকবে এই অস্ত্র তাকেই বধ করবে । এই বাণের প্রয়োগ করে তিনি পান্ডবপক্ষীয় সমস্ত যোদ্ধাদের অস্ত্র ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলেন ।

৭. ঘটোৎকচ

ভীম ও হিড়িম্বার পুত্র ঘটোৎকচ ছিলেন মায়াবী রাক্ষস । কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের ৩য় দিনে তিনি দুর্যোধনকে দৈরথ যোদ্ধে পরাজিত করেছিলেন । আর ১৪ তম দিনে তিনি দুর্যোধন ও কর্ণের অবস্থা প্রায় নাজেহাল করে দিয়েছিলেন। বহু দিব্যাস্ত্র প্রয়োগ করেও কর্ণ সেদিন ঘটোৎকচকে বধ করতে পারছিলেন না । অবশেষে উপায় না দেখে তিনি ইন্দ্রের দেওয়া একাঘ্নী অস্থ প্রয়োগ করেছিলেন । যেটা তিনি অর্জুনকে বধ করার জন্য রেখেছিলেন । একাঘ্নী অস্ত্রের আঘাতেই ঘটোৎকচকে বধ করা সম্ভব হয়েছিল । সুতরাং এ কথা বলাই যায় সেই রাতে কর্ণ যদি ঘটোৎকচকে বধ করতে না পারতেন তাহলে কৌরব পক্ষীয় বহু রথী-মহারথী তার হাতে মারা পড়ত ।

৮. ভীম

দ্বিতীয় পান্ডব ভীম ছিলেন বিশাল দেহ ও প্রবল শক্তির জন্যে বিখ্যাত। তার শরীরে এক সহস্র হাতির শক্তি ছিল। বনবাসে থাকাকালীন তিনি জরাসন্ধ ও কীচকসহ মহাপরাক্রমশালী বহু রাক্ষসকে বধ করেছিলেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তিনি দুর্যোধনসহ ধৃতরাষ্ট্রের বাকি ৯৯ জন পুত্রকে হত্যা করেছিলেন।

৯. দুর্যোধন

ধৃতরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন দুর্যোধন। এই দুর্যোধন ছিলেন ভয়ানক শক্তিশালী। স্বয়ং বলরামের নিকট গদাযুদ্ধ শিখেছিলেন তিনি। তিনি গদাযুদ্ধে এতটাই পারদর্শী ছিলেন যে তাকে (গদাযুদ্ধে) পরাজিত করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার ছিল। তার সবথেকে বড় শত্রু ছিল ভীম। আর শেষ পর্যন্ত ভীমসেনের হাতেই তার মৃত্যু হয়েছিল।

১০. ভগদত্ত

মহাভারতের যুগে ভগদত্ত ছিলেন প্রাগজ্যোতিষপুরের রাজা, নরকাশুরের পুত্র এবং সম্পর্কে দূর্যোধনের শ্বশুর। মহারথী ছিলেন তিনি। যুদ্ধে হাতীর পিঠে চড়ে শত্রুদের উপর ত্রাসের সঞ্চার করতেন এই যোদ্ধা। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তিনি অর্জুনের উপর অপ্রতিরোধ্য বৈষ্ণব অস্ত্র নিক্ষেপ করেছিলেন । এই অস্ত্রের বিশেষত্ব হলো এর আঘাত কেবল ভগবান বিষ্ণুই সহ্য করতে পারেন। সেদিন যদি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে এই অস্ত্র থেকে না রক্ষা করতেন, তাহলে অর্জুনের কি হতো বলা কঠিন!

সূত্র: হিন্দুডাটা

এসি/  

আরো পড়ুন:

দ্রৌপদীর পঞ্চ স্বামী হওয়ার কারণ কী ছিল?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *