প্রচ্ছদ

মহাবিদ্রোহীর প্রয়াণ দিবস আজ



শোষিত-নিপীড়িত মানুষের বঞ্চনার ক্ষোভ দীপ্ত শিখার মতো জ্বলে উঠেছিল যার কণ্ঠে; সাম্প্রদায়িকতার পরিবর্তে অসাম্প্রদায়িকতা তথা মানবতার বাণী শুনিয়েছিলেন যিনি- সেই কবি কাজী নজরুলের ৪৫তম প্রয়াণ দিবস আজ।

১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার চুরুলিয়ায় যে কবির আবির্ভাব ঘটেছিল ‘জ্যৈষ্ঠের ঝড়’ হয়ে; সে ঝড় চিরতরে থেমে গিয়েছিল ঢাকার পিজি হাসপাতালের (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়) কেবিনে, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্রে। অঙ্কের হিসাবে তার জীবনকাল ৭৭ বছরের; তবে সৃষ্টিশীল ছিলেন মাত্র ২৩ বছর। নজরুলের এই ২৩ বছরের সাহিত্যজীবনের সৃষ্টিকর্ম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক। দারিদ্র্যের কারণে মাত্র ১০ বছর বয়সেই পরিবারের ভার বহন করতে হয়েছে তাকে। ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর পেশা হিসাবে বেছে নেন সাংবাদিকতা।

সাম্রাজ্যবাদবিরোধী এ কবি তৎকালীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন। কারাবন্দি থাকা অবস্থায় তিনি রচনা করেন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’। বন্দিদশায় তার হাতে সৃষ্টি হয়েছে গান, কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস, ছোট গল্পসহ অসংখ্য রচনা।

১৯৭২ সালের ২৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তাকে দেওয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধিতে ভূষিত করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি একুশে পদকে ভূষিত করা হয় কবিকে।

জাতি আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করবে এ কবিকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত কবির সমাধি ছেয়ে যাবে ফুলে ফুলে।

কর্মসূচি : মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে আজ সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা থাকছে। মাজারে ফুলেল শ্রদ্ধার পাশাপাশি দোয়া, ফাতেহা পাঠ। সকাল ১০টায় নজরুল ইনস্টিটিউটের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে ভার্চুয়াল আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বেলা সাড়ে ১১টায় বিএসএমএমইউর যে কক্ষে ৪৫ বছর আগে নজরুলের চিকিৎসাধীন ছিলেন সেই কক্ষের স্মৃতি নিয়ে আলোচনার আয়োজন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। এটি বিএসএমএমইউর শহীদ ডা. মিলন হলে অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলা একাডেমি নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সকাল সাড়ে ৭টায় কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, বিকাল ৪টায় অনলাইনে নজরুল বিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক পর্বে নজরুলের কবিতা থেকে আবৃত্তির পাশাপাশি শিল্পীরা পরিবেশন করবেন জাতীয় কবি রচিত গান।

মিলনে বিরহে নজরুল শিরোনামের আয়োজনের মধ্য দিয়ে নজরুলকে স্মরণ করবে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। নাচ, গান, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজনে সাজানো থাকবে ছায়ানটের এ আয়োজন। রাত ৯টায় সংগঠনটির ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে এ আয়োজন। ‘আমার দেবো না ভুলিতে’ শিরোনামের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ। ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে এই আয়োজনে পরিবেশিত হবে কবির বিভিন্ন সময়ের গান ও কবিতা।

/জেড এইচ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *