ডেস্ক নিউজ, সুখবর ডটকম: গত মাসে মস্কোতে মিলিত হন চীনা নেতা শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তখন পারমাণবিক যুদ্ধ এড়াতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পারমাণবিক হুমকির বিষয়ে রাশিয়াকে তিরস্কারমূলক বার্তা প্রেরণ করে চীন।

পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি প্রদান করা পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা সম্বলিত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, কিংবা বলা যায় মাত্র কয়েক ঘন্টার জন্য এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা মেনে নেন।

শি মস্কো ত্যাগের পরপরই পুতিন চুক্তিটি অস্বীকার করে প্রতিবেশি দেশ বেলারুশে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের ঘোষণা করেন।

চীনও দ্রুত এ বিষয়ের প্রতিক্রিয়া জানায়। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টার দিকে সকলের মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।

পুতিন ইউক্রেনকে রাশিয়ার অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ হিসেবে দেখছেন এবং তাই ইউক্রেনকে ধ্বংস করার দিকে মনোনিবেশ করেছেন।

মস্কো সম্মেলনের এক মাস আগেই চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইউক্রেনের জন্য একটি ১২ দফা শান্তি পরিকল্পনা জারি করে। চীন বিশেষ করে ঘোষণা করে যে, সকল দেশের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা কার্যকরভাবে সমুন্নত রাখতে হবে।

মস্কোতে, শি কিংবা পুতিন দুইজনেই সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে চুপ ছিলেন।

চীনের শান্তি পরিকল্পনার প্রতি পুতিনের প্রতিক্রিয়াও বিবেচ্য। তিনি এ পরিকল্পনা অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করেন। তবে তিনি জানান, চীনের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার অনেক ধারাই রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এটি দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ মীমাংসার ভিত্তি তৈরি করতে পারে।

তবে তিনি জানান প্রথমে পশ্চিমা বিশ্ব এবং কিয়েভকে এ চুক্তিতে সম্মত হতে হবে, তারপরেই রাশিয়া এ বিষয়ে সম্মত হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কিয়েভ উভয়েই এ চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে।

চীন-রাশিয়ার শীর্ষ সম্মেলনের আগে, অনেকেই ধারণা করেছিল এ সম্মেলনে ইউক্রেনকে নিয়ে আলোচনা হবে। মার্কিন সরকার অবশ্য উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছিল যে, সম্মেলনে রাশিয়ায় অস্ত্র সরবরাহের ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারে চীন।

তবে এই দুই ধারণাই ভুল প্রমাণিত হয়। যদিও সম্মেলনে ইউক্রেনকে নিয়ে আলোচনা করা হয়, তবে তা মুখ্য বিষয় ছিল না।

২৪ মার্চ, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নয় অনুচ্ছেদের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ইউক্রেনের কথা মাত্র একবার উল্লেখিত ছিল। শি এ ব্যাপারে নিরপেক্ষ অবস্থানের কথা জানান। অন্যদিকে পুতিন একবারের জন্যেও ইউক্রেনের উল্লেখ করেন নি।

কিছু পর্যবেক্ষকের মতে, যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে শিয়ের কোন তাড়া নেই। বরং মিত্রতার বেশে রাশিয়ার কাছ থেকে তেল আদায় করছে চীন।

স্লোভাকিয়ায় অবস্থিত সেন্ট্রাল ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউট অফ এশিয়ান স্টাডিজের গবেষক মার্টিন সেবেনা জানান, ইউক্রেনের যুদ্ধ থেকে লাভবান হতে পারে চীন।

মূলত ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার যুদ্ধ চীনের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে এসেছে। গত এক বছরে রাশিয়ায় চীনা রপ্তানির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়েছে। রাশিয়া থেকে কমমূল্যে জীবাশ্ম জ্বালানি ক্রয় করছে চীন। গত বছর রাশিয়ার বৃহত্তম আমদানিকারক হিসেবে জার্মানিকে প্রতিস্থাপন করেছে চীন।

৩১ মার্চ, ৪২ পৃষ্ঠার বৈদেশিক নীতি ইশতেহার জারি করেছেন পুতিন, যেখানে তিনি পশ্চিমা আধিপত্যের বিরোধিতাকারী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক জোরদার করার পরিকল্পনা ব্যক্ত করেন।

চীনের পাশাপাশি ভারতকে তিনি প্রধান সম্ভাব্য অংশীদার হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে, ভারতও কমমূল্যে রাশিয়া থেকে পেট্রোলিয়াম ক্র‍য় করে এবং জাতিসংঘে রাশিয়ার বিরোধিতা করতেও আপত্তি জানায়। গত বছর রাশিয়া থেকে তেল আমদানি প্রায় দশগুণ বাড়িয়েছে ভারত।

এমএইচডি/আইকেজে 

আরো পড়ুন:

পুতিনের হাতেই গেল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নেতৃত্ব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *