ধর্ম ও জীবন ডেস্ক, সুখবর ডটকম: মসজিদ শব্দটি আরবি। যার অর্থ হল “সিজদা করার স্থান”। হজরত হুযাইফাতুল ইয়ামান রাজি হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আমাদের তথা উম্মতে মুহাম্মদীকে তিনটি বিষয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে যথা-
১. আমাদের কাতার ফেরেশতাদের কাতারের ন্যায় বানানো হয়েছে।
২. আমাদের জন্য সব জমিনকে নামাজের জায়গা বানানো হয়েছে।
৩. আমাদের জন্য জমিনের মাটিকে পবিত্র বানানো হয়েছে (তায়াম্মুমের জন্য), যদি আমরা পানি না পাই।’ (মুসলিম-৫২২)
আগের যুগের উম্মতদের ইবাদতের জন্য স্থান নির্দিষ্ট ছিল। মনে চাইলেই তারা যে কোনো স্থানে ইবাদত করতে পারতেন না। অথচ আমরা কত খোশ নসিব আলহামদুলিল্লাহ! রাব্বে কারিম আমাদের জন্য পুরো জমিনকে এমনভাবে তৈরি করে দিয়েছেন, যেখানে আমরা ইবাদত করতে চাই সেখানেই ইবাদত করতে পারি। অর্থাৎ এক কথায় পুরো জমিনকে তিনি যেন সালাত আদায়ের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন।
পাঠকদের মনে রাখতে হবে। মসজিদ আল্লাহতায়ালার এমন প্রিয় একটি ঘর, যেখানে আল্লাহর জিকির-আজকার, ইবাদাত-বন্দেগি ও আল্লাহর বড়ত্ব-মহিমা বর্ণনা করা হয়। তাঁর তাওহিদ ও রুবুবিয়াতের আলোচনা হয়।
মসজিদ নির্মাণ অত্যন্ত পুণ্যের কাজ। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের পর কুবাতে অবস্থানকালে সর্বপ্রথম একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন। যে মসজিদটি আজও মসজিদে কুবা নামে অবস্থিত।
প্রিয় পাঠক চিন্তা করে দেখুন? মসজিদ নির্মাণ কত গুরুত্বপূর্ণ কাজ। তাছাড়া মসজিদ নির্মাণ এমন একটি পুণ্যময় ইবাদত, যার সওয়াব দুনিয়াতেই পাওয়া যায় এবং মৃত্যুর পরও তা অব্যাহত থাকে। যত দিন সেই মসজিদে আল্লাহর ইবাদত হবে, তত দিন নির্মাণকারী এর সওয়াব পেতে থাকবেন। তা সাদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে।
ভাগ্যবান ব্যক্তিরাই মসজিদ নির্মাণে অংশগ্রহণ করে থাকেন। ধন-সম্পদ থাকলেই যে এত বড় নেয়ামতের অধিকারী হওয়া যায়, তা কিন্তু নয়। বরং আল্লাহ যাকে তৌফিক দেন সেই এত বড় নিয়ামত অর্জনের অধিকারী হতে পারেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যখন কোনও ব্যক্তি মারা যায়, তখন তার আমলের (সকল/সব) পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল বন্ধ হয় না। প্রথমত, সদকায়ে জারিয়া, দ্বিতীয়ত, ওই ইলম যা দ্বারা অন্যরা উপকৃত হয়, তৃতীয়ত, নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করে।’ (সহিহ মুসলিম : ১৬৩১, সুনানে আবু দাউদ : ২৮৮০)।
হাদিস বিশারদদের মতে, মসজিদের জন্য জায়গা দেওয়া, মসজিদ নির্মাণ করা, মসজিদের জন্য অনুদান দেওয়া ইত্যাদি সকল কর্ম সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত এবং এটা অনেক বড় একটা সদকায়ে জারিয়া। মসজিদ আবাদ অনেক বড় ফজিলতের বিষয়। মসজিদ আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা এবং দিনরাত তাঁর রহমত নাজিলের ক্ষেত্র।
এই প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলা হচ্ছে, ‘আল্লাহর মসজিদ তো আবাদ করে তারাই, যারা আল্লাহ ও পরকালে ইমান এনেছে এবং নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। এরূপ লোকদের সম্পর্কে আশা আছে যে, সঠিক পথ অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা তাওবা : ১৮)।
হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় স্থান মসজিদ আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থান হল বাজার।’ (সহিহ মুসলিম : ৬৭১) মসজিদের সঙ্গে অন্তরের সম্পর্ক করা শুধু মানবিক প্রয়োজনই নয়, হালাল পন্থায় হালাল কর্ম অবলম্বন ইসলামের এক ফরজ বিধান। এই কর্মব্যস্ততার মধ্যেও যদি মসজিদের সঙ্গে অন্তরের সম্পৃক্ততা থাকে, তবে তা অত্যন্ত মর্যাদার বিষয়।
হাদিসে আরও এসেছে, ‘সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তাঁর (আরশের) ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন, যেদিন তাঁর (আরশের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না। ন্যায়পরায়ণ ইমাম (বাদশাহ)। ওই যুবক, যে তার প্রতিপালকের ইবাদতে লালিত-পালিত হয়। ওই ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে (এখান থেকে বেরোবার পর থেকে আবার ফেরা পর্যন্ত)’। (সহিহ বুখারি : ৬৬০; সহিহ মুসলিম : ১০৩১)।
এম এইচ/ আই. কে. জে/
আরও পড়ুন: