মন ভালো রাখতে
শারীরিক সুস্থতা ও কায়িক পরিশ্রম দিয়েই একজন মানুষ সবসময় ভালো থাকতে পারে না, যদি তার আত্মিক বা মানসিক স্বাস্থ্য ভালো না হয়। মন ভালো রাখার কিছু উপায় জেনে নিন:
ক্ষমা
ধরুন আপনার সঙ্গে একজনের খারাপ সম্পর্ক আছে। আপনার মনের মধ্যে তার ছবি কল্পনা করে ও আপনার উচ্চ সত্তা থেকে ভালোবাসার শক্তি নামিয়ে এনে আপনি উপরোক্ত কথাগুলো বার বার বলে চলুন। এক পর্যায়ে আপনি মনে মনে চিন্তা করতে থাকুন যে এই সমস্যাটা ঠিক হয়ে গেছে এবং আপনি লোকটিকে ক্ষমা করতে পেরেছেন।
দ্বিতীয়বার যখন আপনি এটি করতে যাবেন দেখবেন আপনার মধ্যে লোকটির প্রতি একটু হলেও ভালোবাসা এসেছে। আর যদি ভালোবাসা নাও আসে তবে আবার আপনি একইভাবে এটি করতে থাকুন। একসময় দেখবেন সত্যিই আপনি তাকে ক্ষমা করতে পেরেছেন। যে কোনো বিষয়ে আপনি এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারেন।
শান্ত থাকার যোগ
আমরা বেশির ভাগ সময় আমাদের নিজেদের কামনা-বাসনা নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ি। সবসময় আমাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা কাজ করে: ‘আমার কী হবে? আমি এটি পাব কি পাব না? এটি পেতে আমার কী করা উচিত বা অনুচিত?’ কিন্তু এটা না করে স্থির থাকুন। নিজেকে আট বছরের বালক বা বালিকা ভাবুন। নিজের দোষ-গুণ সম্পর্কে নিজেকে নিরপেক্ষ কিন্তু নরমভাবে প্রশ্ন করুন। নীরবতাকে মনের মধ্যে আহ্বান করুন এবং বলতে থাকুন:‘নীরবতা এসো’,‘শান্ত হও’। একটু পরেই দেখবেন আপনার মন শান্ত হয়ে গেছে। যখনই অশান্ত হয়ে পড়বেন তখনই এটি করতে থাকবেন।
স্থির হওয়ার ব্যায়াম
একটি চেয়ারে বসুন ও পা দুটিকে মেঝেতে রাখুন। চোখ বন্ধ করুন ও মনে মনে চিন্তা করুন যেন আপনার মেরুদর শেষ প্রান্তে, যোগের ভাষায় যাকে কু-লী বলে, সেখানে একটি বৈদ্যুতিক তার লাগানো রয়েছে। এই বৈদ্যুতিক তার আপনার মাথার ওপরের শান্ত সাগরের মতো পৃথিবীর ঠিক মাঝখান থেকে ঝরনাধারার মতো নেমে এসেছে। এটি আপনার দেহে ঢুকে আপনার দেহের সকল বর্জ্যপদার্থ ও খারাপ কিছু চুষে নিচ্ছে। আপনি নিজেকে খুব হালকা বোধ করছেন। প্রথম প্রথম এটি করতে শান্ত জায়গার প্রয়োজন হবে। পরে, আপনি এটি আয়ত্ত করতে পারলে যে কোনো স্থানে বা জায়গায় যেমন- অফিসে, রাস্তায়, লোকালয়ে করতে পারবেন। মন শান্ত রাখার জন্য এটি একটি মহাষৌধ। এটির উপকারিতা আপনি প্রতি মুহূর্তে বুঝতে পারবেন।
তিন চক্রকে সক্রিয় রাখা
বিশুদ্ধ চক্র, অনাহত চক্র ও মণিপুর চক্রের মধ্যে দিব্য আলো, আনন্দ, চেতনা খেলা করতে থাকে। তাই এই চক্রগুলো সক্রিয় রাখা খুব জরুরি। কণ্ঠ, হৃদয় ও প্লীহার ওপরে চাপড়াতে থাকুন। এতে এই চক্রগুলো সক্রিয় হবে। দিনে দু মিনিট করে আপনি এটি করতে থাকুন।
স্নায়ু উত্তেজক ব্যায়াম
জড়তা কোনো ভালো জিনিস নয়। এটিকে যোগের ভাষায় ‘তামসিক ভাব’ বলা হয়ে থাকে। স্নায়ু উত্তেজিত করতে ও জড়তা দূর করতে আপনি বিভিন্ন যোগ ব্যায়াম করতে পারেন। যেমন, আপনার এক হাতের তালুর একটু ওপরে অন্য হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিন। আস্তে আস্তে আঙ্গুলগুলো দিয়ে বুড়ো আঙ্গুলের দিকে নামিয়ে আনুন। পনের বার এটা করুন। এতে আপনার জড়তা দূর হবে।
‘কি ফো’ ব্যায়াম
কি ফো নিতে মাত্র দু মিনিট লাগবে। আপনার দু হাত হালকাভাবে মুঠো করুন এবং আপনার সম্পুর্ণ দেহের ওপর চাপড়াতে থাকুন। মাথা থেকে আরম্ভ করে খুলি, মগজ ও ঘাড় ছাড়িয়ে সম্পুর্ণ দেহে এটা করতে থাকুন। এতে আপনার রক্তচলাচল বেড়ে গিয়ে আপনার দেহে শক্তি উৎপন্ন করতে সাহায্য করবে। আমাদের মাথা চিন্তা করার স্থান। মন সবসময় কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে চিন্তা করেই চলেছে এবং একটি সমাধানে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে, তা সে ভালো হোক বা খারাপ।
পানিতে সাঁতার
আমাদের সম্পুর্ণ দেহের ওপর একটি বলয় আছে যেটিকে ‘সূক্ষ্ম দেহ’ বলে। এই সূক্ষ্ম দেহ অলৌকিক আভা দিয়ে তৈরি, যেটি আমাদের দৈহিক ও আত্মিক সুস্থতা প্রকাশ করে থাকে। সুযোগ পেলে নিয়মিত সাঁতার কাটুন।
রং-তুলি ব্যবহার
ছোট শিশু মানেই নিষ্পাপ ও পবিত্র। ছোট শিশুদের মতো রং-পেন্সিল নিয়ে আঁকতে আরম্ভ করুন। চোখ বন্ধ রেখে কিছুক্ষণ ধ্যান করে মন শান্ত করুন। এরপর, আপনার মস্তিষ্ক সচল করার জন্য কাগজের ওপর একটি বৃত্ত আঁকুন এবং এটিকে আট ভাগে ভাগ করুন। এই আট ভাগে আপনার ইচ্ছামতো রঙ দিয়ে বৃত্তটি পূরণ করুন। ছবি আঁকার পদ্ধতি সম্পর্কে আপনি জানুন বা না জানুন এসব নিয়ে কোনো চিন্তা করবেন না।
গাছ লাগানো
গাছ লাগানো ও গাছের পরিচর্যা আপনাকে প্রকৃতির কাছে নিয়ে যাবে, প্রকৃতিপ্রেমিক করে তুলবে, প্রকৃতির মতো উদার হতে সাহায্য করবে। বাড়িতে করা বাগান থেকে আপনি সতেজ বাতাস পাবেন। আপনি তাজা সবজি আর ফলও পাবেন।
এছাড়াও মনোবিজ্ঞানীরা সকলকে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট প্রাণ খুলে হাসার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়াও আরও কিছু উপায়ে হয়তো আপনি আনন্দে থাকতে পারেন। যেমন- শত ব্যাস্ততার মাঝেও অন্তত সপ্তাহের একটি দিন বা একটি ঘণ্টা প্রিয়জনের সঙ্গে কাটান। তাদের নিয়ে বেড়াতে যান কোনো পছন্দের জায়গায়।
অবসরের সময়গুলোতে পরিবারের সকলকে নিয়ে টিভিতে পছন্দের কোনো অনুষ্ঠানও দেখতে পারেন। রাতে ভালো কোনো গল্পের বইও পড়তে পারেন। সিনেমা হলে গিয়ে স্বপরিবারে বা বন্ধুদের নিয়ে দেখে আসতে পারেন ভালো কোনো চলচ্চিত্র।
সর্বোপরি হতাশা আর দুঃশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে মনে রাখতে হবে আপনি যেমনই হন না কেন আপনার মত পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কেউ কোথাও নেই। পৃথিবীকে দেবার মতন আপনার কাছে এখনও অনেক কিছুই বাকি। তাই নিজেকে অহেতুক অন্যের চেয়ে ছোট না ভেবে নিজের মত করে বাঁচুন এবং আনন্দে থাকুন।