নিজস্ব প্রতিবেদক, সুখবর ডটকম: যুদ্ধ থেমে শান্তি ফিরুক পৃথিবীতে—এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে এই আহ্বান জানানো হবে। সে কারণেই থিম নেওয়া হয়েছে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার পঙিক্ত থেকে, ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’। এই প্রতিপাদ্যে এবার সব মঙ্গল প্রতীকের নকশা করা হচ্ছে। করোনা মহামারির রেশ না কাটতেই যুদ্ধ-বিগ্রহে বিপর্যস্ত পুরো বিশ্ব। নতুন বছর ‘শান্তির বারি’ নিয়ে আসুক পৃথিবীর জন্য, যুদ্ধ বন্ধ হয়ে শান্তি ফিরুক—মানুষের মনে এই বারতা ছড়িয়ে দিতেই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
পহেলা বৈশাখে উৎসবে মেতে ওঠার আগেই উৎসব শুরু হয়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে। চলছে কর্মযজ্ঞ। কদিন বাদেই শুরু হচ্ছে নতুন বাংলা বর্ষ। পয়লা বৈশাখ উদযাপনে রাজধানীর সবচেয়ে বর্ণিল আয়োজন মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে আরো আগে থেকেই। এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেনের পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানে ২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন চারুকলার নতুন ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও।
মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য বিভিন্ন কাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এসবের মধ্যে বড় কাঠামো হবে মায়ের কোলে সন্তান, বাঘ, ময়ূর, মোরগ. ভেড়া, নীল গাই প্রভৃতি। এর পাশাপাশি একটি বৃহত্ কচ্ছপ নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানালেন আয়োজকেরা। এসবের পাশাপাশি মুখোশ, প্যাঁচাসহ হাজার বছরের লোকজ উপাদানগুলো মঙ্গল শোভাযাত্রায় নতুনভাবে ফুটিয়ে তোলা হবে।
এ প্রসঙ্গে চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে বিশ্বে সব থেকে বড় সমস্যা যুদ্ধ। যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বের মানুষের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়েছে। যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান ও মানুষের মঙ্গল কামনা করে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।
মঙ্গল শোভাযাত্রা উদযাপন কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক অচিন্ত্য সাহা রায় গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা চাই পৃথিবীতে যুদ্ধ নয়, বৃষ্টির মতো করে শান্তি বর্ষিত হোক। শোভাযাত্রায় মায়ের কোলে সন্তান থাকবে। এর মাধ্যমে আমরা তুলে ধরতে চাই—মায়ের কোলে সন্তান যেমন নিরাপদ, তেমনি এই পৃথিবী প্রতিটি মানুষের জন্য নিরাপদ আশ্রয় হয়ে উঠুক।
করোনা মহামারির কারণে দুটি বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা স্থগিত ছিল। আর গত বছর মেট্রোরেলের কাজ চলমান থাকায় মঙ্গল শোভাযাত্রা টিএসসি থেকে ফুলার রোডের মোড় পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। এবার চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয়ে শাহবাগ মোড় হয়ে ঢাকা ক্লাবের সামনে থেকে ঘুরে আবার চারুকলায় এসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
শাহবাগের চারুকলা অনুষদের গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে একদল শিক্ষার্থী বসে সরা আঁকছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ছবি আর সরা বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। জয়নুল গ্যালারির একটিতে এখন চলছে বড় মুখোশ বানানোর কাজ। ছাত্র-শিক্ষক সবাই একজোট হয়ে কাজ করছেন, দম ফেলার ফুরসত নেই কারো। চারুকলার তরুণ শিক্ষার্থীরা জাতিকে বর্ষবরণের উপলক্ষ্য এনে দিতেই প্রতিবারের মতো এবারও কাটাচ্ছেন নির্ঘুম রাত। সরা, ছবি আর মুখোশ বিক্রি করে উঠছে মঙ্গল শোভাযাত্রার খরচ। নতুন বছরকে বরণ করতে মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিতে কর্মযজ্ঞ চলছে শাহবাগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের পুরো চত্বরে। বর্ষবরণের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতিকে ঘিরে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ব্যস্ত সবাই। গেল বছরগুলোর তুলনায় আরো বর্ণিল উপস্থাপন কীভাবে করা যায়, তারই চেষ্টা সবার মধ্যে।
এম/
আরো পড়ুন: