ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু বাংলা: আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের জন্য প্রযোজ্য একটি নতুন ভ্যাকসিন নীতিমালায় সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গতকাল সোমবার তিনি এই নীতিমালায় সই করেন। এতে চীন ও ভারতসহ ইউরোপের বেশিরভাগ দেশের ওপর থেকে বিমান ভ্রমণ সংক্রান্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, আগামী ৮ নভেম্বর থেকে এই নতুন নীতিমালা কার্যকর হবে।
২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলার জন্য নজিরবিহীন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
বাইডেনের সইকৃত বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে এমন একটি নীতিমালা চালু করা উচিত, যেখানে মূলত ভ্রমণকারীদের ভ্যাকসিন গ্রহণের বিষয়টিকে বিবেচনায় নিয়ে নিরাপদে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু করা যাবে।
হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে যে, ১৮ বছরের কমবয়সী শিশু এবং বিশেষ কিছু রোগী এই নীতিমালার আওতার বাইরে থাকবেন। মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের কম মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন, এরকম প্রায় ৫০টি দেশের ‘পর্যটক নয়’ এরকম ভ্রমণকারীরাও এই নীতিমালায় ছাড় পেতে পারেন।
তবে যারা এই ছাড় পাবেন, তাদেরকে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ৬০ দিনের মধ্যে ভ্যাকসিন নিতে হবে। কিন্তু অন্য দেশের কেউ ভ্যাকসিন না নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না।
ছাড়ের আওতায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে আছে নাইজেরিয়া, মিশর, আলজেরিয়া, আর্মেনিয়া, মিয়ানমার, ইরাক, নিকারাগুয়া, সেনেগাল, উগান্ডা, লিবিয়া, ইথিওপিয়া, জাম্বিয়া, কঙ্গো, কেনিয়া, ইয়েমেন, হাইতি, চাঁদ ও মাদাগাস্কার।
গত ২০ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউস প্রথম জানায় যে, তারা নভেম্বরের শুরুতে ৩৩টি দেশের ভ্যাকসিন নেওয়া সম্পন্ন হয়েছে এরকম ভ্রমণকারীদের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, ‘পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধবরা আবারও একে অপরের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন, পর্যটকরা আমাদের অসাধারণ ল্যান্ডমার্কগুলো দেখতে পারবেন। এই নীতিমালা আমাদের অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে আরও সহায়তা করবে।’
বাইডেন প্রশাসন বিমান সংস্থার জন্যও বিস্তারিত নির্দেশনা প্রকাশ করেছে। এসব নির্দেশনা অনুসরণ করে নিশ্চিত হতে হবে যে, বিদেশি ভ্রমণকারীরা উড়োজাহাজে ওঠার আগে ভ্যাকসিন নিয়েছেন।
তবে মাত্র ২ সপ্তাহের মধ্যে নতুন এসব নির্দেশনা বিদেশি ভ্রমণকারীদের জানানোর বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তা ও বিমান সংস্থাগুলোর মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এমনকি ভ্যাকসিন নেননি এরকম মার্কিন নাগরিকরাও ভ্রমণে সমস্যায় পড়তে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এ মাসে জানায়, তারা মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত যেকোনো ভ্যাকসিন গ্রহণ করবে এবং এ ক্ষেত্রে ভ্রমণকারীরা মিশ্র ভ্যাকসিন ডোজ নিলেও সমস্যা নেই।
এই তালিকায় স্থান পায়নি রাশিয়ার স্পুটনিক ভ্যাকসিন, যেটি ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে।
তবে বাইডেন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা গতকাল সোমবার জানান, তালিকার বাইরের কিছু বহুল ব্যবহৃত ভ্যাকসিনের ওপর নিরীক্ষণ চালানো হবে এবং উপযোগিতার তথ্য পাওয়া গেলে একটি নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেগুলোকে অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সিডিসি আরও জানায়, ধর্মীয় কারণে কোনো আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীকে ভ্যাকসিন নেওয়ার নির্দেশনার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে না।
বিদেশি ভ্রমণকারীদের একটি ‘আনুষ্ঠানিক উৎস’ থেকে পাওয়া ভ্যাকসিন সংক্রান্ত কাগজ জমা দিতে হবে এবং বিমান সংস্থাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, শেষ ডোজটি কমপক্ষে ফ্লাইটের ২ সপ্তাহ আগে নেওয়া হয়েছে।
ভ্রমণকারীদের নির্ধারিত ফ্লাইটের আগের ৩ দিনের মধ্যে করা করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট জমা দিতে হবে। তবে হোয়াইট হাউস জানায়, ভ্যাকসিন না নেওয়া মার্কিন ও বিদেশি নাগরিকদের ভ্রমণের ১ দিন আগে করা নেগেটিভ রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
এ ছাড়াও, বাইডেন প্রশাসন এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ স্থল সীমান্ত দিয়েও বিদেশি নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের বিধিনিষেধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ৮ নভেম্বর থেকে এই বিধিনিষেধগুলোও প্রত্যাহার করা হবে।
আরো পড়ুন: