পর্যটন ও পরিবেশ

ভূমিকম্পের প্রস্তুতিতে মহড়া ও প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: বড় ভূমিকম্পের জন্য মানসিক প্রস্তুতি তৈরিতে মহড়া এবং প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি পুরনো বিল্ডিংয়ে রেট্রোফিটিং করা এবং নতুন ভবন তৈরির সময় বিল্ডিং কোডের যথাযথ প্রয়োগের দিকে নজর দিতে জোর দেওয়ার কথাও উঠে এসেছে। জানা গেছে, ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকাজ চালাতে ক্রেনের মতো হেভি ইকুইপমেন্টের ওপর নির্ভর করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।
তবে ৭ থেকে ৮ মাত্রার তীব্র কম্পনের পর ঢাকার যা অবস্থা হবে তাতে এসব ইকুইপমেন্ট কতটা কাজে লাগবে তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া ভূমিকম্পে ঢাকার কোন এলাকায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বা কোন এলাকায় দ্রুত উদ্ধারকাজ পরিচালনা করতে হতে পারে এমন কোনো ধারণা কর্তৃপক্ষের নেই বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেশের তরুণ প্রজন্মকে বড় দুর্যোগের জন্য প্রশিক্ষিত করতে স্মার্টফোন কেন্দ্রিক এপ্লিকেশন বা গেম তৈরির পরামর্শ দিয়েছেন ভূ-তত্ত্ববিদ প্রফেসর ড. সৈয়দ হুমায়ূন আখতার। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের প্রস্তুতি নিয়ে গেম বা অ্যাপস তৈরি করা যায় যেটা হবে ডিজাস্টার অ্যাওয়ারনেস্, প্রিপেয়ার্ডনেস এন্ড সার্ভাইভাল ট্রেনিং। সেখানে শুধু ভূমিকম্প না, সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে খেলা থাকবে। ভূমিকম্পের আগে কী করা উচিত, হলে কোথায় আশ্রয় নেবে, বজ্রপাতের সময় বাইরে থাকলে কী করবে, ঘরে থাকলে কী করবে, বন্যা হলে কী করবে, পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের সময় কী করা লাগবে ইত্যাদি শিখবে।
ঢাকায় কম্পনের সামগ্রিক চিত্র পাওয়ার উপায় সম্পর্কে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, বছর দশেক আগে আমি এ নিয়ে দুইটি মোবাইল কোম্পানির সঙ্গে কথা বলেছিলাম। এর মধ্যে একটা কোনো রেসপন্সই করেনি। অন্যটা কিছু রেসপন্স করেছিল। স্মার্টফোনের মাধ্যমে প্রতিবার কম্পনের সঙ্গে সঙ্গে সেই অবস্থান থেকে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ কয়েকটা বাটনের মাধ্যমে পাঠানো যেত। একটা সেন্ট্রাল সার্ভার দরকার পড়বে এক্ষেত্রে। মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্রেস করে সব তথ্য সার্ভারে ইনপুট দেবে। তখন একটা চিত্র ফুটে উঠবে যে এই এলাকায় সবচাইতে বেশি সমস্যা।
পুরনো ভবনে রেট্রোফিটিং করা এবং নতুন ভবন তৈরিতে বিল্ডিং কোড যথাযথভাবে প্রয়োগের কথা উল্লেখ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স এন্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রফেসর ড. জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, দেশের মানুষের প্রবণতা হচ্ছে অল্প খরচে রাজমিস্ত্রি দিয়ে ভবন বানিয়ে ফেলা। নির্মাণশ্রমিক এবং ক্ষেত্রবিশেষে ইঞ্জিনিয়ারদেরও প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ছোটখাটো ভূমিকম্পের পর আমরা দু’একটি সেমিনার করেই থেমে যাই। এতে কোনো কাজ হয় না। আমাদের প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। সাধারণ মানুষকে মহড়ার মাধ্যমে প্রশিক্ষিত করতে হবে। ব্যাপক প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব না হলে অন্তত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দিতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের তরফ থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। বছরে একবার করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মহড়া হলে আগামী ৫০ বছরে অন্তত দুটি প্রজন্ম ভূমিকম্পের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে যাবে।
ভূমিকম্পের প্রস্তুতি সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপপরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, বড় একটা ভূমিকম্প আসবে তা আমরা জানি। এজন্য উদ্ধারকাজের প্রস্তুতি হিসেবে ক্রেনসহ অন্যান্য হেভি ইকুইপমেন্ট আমরা সংগ্রহ করেছি। তাছাড়া ইতোমধ্যে সারাদেশে ৫০ হাজার ভলান্টিয়ারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আরও কয়েক হাজার ভলান্টিয়ারকে প্রস্তুত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রফেসর আখতার বলেন, ভূমিকম্প পরবর্তী উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য সরকার হেভি ইকুইপমেন্ট এনেছে। কিন্তু এই ইকুইপমেন্টগুলো যেসব বিল্ডিংয়ে আছে সেগুলো রেট্রোফিটিং করা হয়েছে কিনা নিশ্চিত না। ভূমিকম্পে যদি এগুলো আটকা পড়ে যায় তাহলে বের হবে কী করে। ভূমিকম্প পরবর্তী সেবাদান নিয়েও অনেক সমস্যা আছে। যেমন ঢাকা মেডিকেল অনেক পুরনো। ভূমিকম্পের পর এটার কী হবে? এটা রেট্রোফিটিং করতে হবে। সেবার জন্য বর্তমান হাসপাতালে কুলাবে না। ফিল্ড হাসপাতাল লাগবে মহল্লায় মহল্লায়। কিন্তু মহল্লাগুলোতে তেমন উন্মুক্ত জায়গা নেই।
ভূমিকম্পের সময় নাগরিকদের করণীয় সম্পর্কে প্রফেসর ড. আলী আকবর মল্লিকের পরামর্শ হলো- বহুতল ভবন থেকে বের হবেন না। সিঁড়ি দিয়ে বের হতে গিয়ে আহত-নিহত হতে পারেন। কম্পনের পর স্বচ্ছন্দে বের হতে বাসার সদর দরজাটা খুলে রাখুন। শর্টসার্কিট এড়াতে বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করুন। গ্যাসের চুলা বা লাইন বন্ধ করুন। শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন অন্যথায় ভিতরের দেয়ালের কাছে এবং বালিশ বা কুশনের সাহায্যে ভারি জিনিসের থেকে মাথাটা রক্ষা করুন।
ভূমিকম্পের পর করণীয় সম্পর্কে ড. মল্লিক বলেন, বাসার দরজা-জানালা বন্ধ কি না চেক করুন। প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন নগদ অর্থ, শুকনা খাবার, কাপড়-চোপড়, টর্চ লাইট, রেডিও ইত্যাদি সঙ্গে করে বাসা থেকে বের হন। লিফট ব্যবহার করা যাবে না, সিঁড়ি দিয়ে ধীরে নামুন। তাড়াহুড়া করার দরকার নেই বরং অন্যকে আগে যেতে দিন। প্যানিক সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকুন এবং খোলা জায়গায় বা কমিউনিটি সেন্টারে আশ্রয় নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *