খোকন কুমার রায়:
শতাব্দীর ভয়াবহ সংক্রামক জীবাণু করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা অবগত রয়েছি এবং এর নিরাময়ক আবিষ্কার করতে পুরো বিশ্ব উঠেপড়ে লেগেছে। শীঘ্রই টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হবে বলে আমরা আশা করছি। ইতিমধ্যে জীবাণুটি আমাদের দেশেও ব্যাপকভাবে প্রসার ঘটিয়ে মানুষকে ভোগাচ্ছে এবং প্রাণহানি ঘটাচ্ছে।
কিন্তু ভয়াবহ এই করোনাভাইরাসের চাইতেও ভয়ঙ্কর ব্যাধিতে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ অনেক আগে থেকেই আক্রান্ত। আর তা হলো দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট।
এই দুর্নীতি ও লুটপাটকারী দানবেরা করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর ভাইরাসে পরিণত হয়ে রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। দুর্নীতির কালস্রোত প্রিয় জন্মভূমির বুকে প্রবল বেগে প্রবাহমান। যেভাবেই হোক এই স্রোতকে থামাতে হবে।
কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দুর্নীতির এই কালস্রোত প্রতিরোধে দুর্নীতি দমন কমিশন ও কিছু সংখ্যক ন্যায়পরায়ণ প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ আপ্রাণ চেষ্টা করেও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছেন না। পারবেনই বা কিভাবে? যেখানে সরকারি অনেক দপ্তরের স্তরে স্তরে দুর্নীতির সুসজ্জিত দুষ্ট কাঠামো অদৃশ্যভাবে বিদ্যমান, সেখানে কিভাবে এই দুর্নীতির ভাইরাস দূর হবে? অবস্থাটি এমন যে, সর্বাঙ্গে ব্যথা, ওষুধ দিব কোথা? কিন্তু এই রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হলে, মানুষের কল্যাণ করতে হলে, প্রয়োজনে দুর্নীতির দুষ্ট চক্রের সমগ্র স্তর ভেঙে দিতে হবে, দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে যেন নতুন দুর্নীতিবাজের জন্ম না হয়।
অবাক হয়ে যাই, বর্তমান মহামারীর সময়ে যেখানে মানুষের বাঁচামরার প্রশ্ন, সেখানেও চিকিৎসাসামগ্রী ও অন্যান্য অতি প্রয়োজনীয় কেনাকাটার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় অর্থ আত্মসাতের ভয়াবহ চিত্র দেখে। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বরাদ্দের টাকা যথাযথভাবে ব্যয় না করে আরো ভয়ঙ্কর লুটপাটকারী ভাইরাসদের হস্তগত হচ্ছে যার ফল ক্রমশই মারাত্মক রূপ নিচ্ছে।
এই দুর্নীতিবাজরা কোনোভাবেই ক্ষমার যোগ্য নয়। এদেরকে চিহ্নিত করে যত দ্রুত সম্ভব বিচার করে কঠিন শাস্তি দিতে হবে। যেমনটা আমরা দেখেছি ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের ক্ষেত্রে সরকারের কঠোর অবস্থানের ক্ষেত্রে। অনেক ত্রাণচোর ধরা পড়েছে এবং শাস্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবসময় আপোসহীন। যখনই উনার নজরে এসেছে আমরা ত্বরিৎ পদক্ষেপ দেখেছি। কিন্তু একজন প্রধানমন্ত্রী আর কত দিকে নজর দেবেন?
কয়েকদিন আগে একটি সংবাদে আমাদের চোখ আটকে গেল। সুইস ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে বাংলাদেশীদের প্রায় ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সেখানে জমা রয়েছে। এছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশেও বিপুল পরিমাণ অর্থ সঞ্চিত রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে এ টাকাগুলো কার এবং কিভাবে তারা টাকার পাহাড় বানিয়ে বিভিন্ন দেশে গচ্ছিত রেখেছে? অনুসন্ধান করলে হয়ত দেখা যাবে, এইসব টাকা আমাদের দেশের দুর্নীতিবাজ ও লুটপাটকারীদের টাকা যা দেশের জনগণের কাজে না লাগিয়ে বিদেশীদের কল্যণে কাজে লাগাচ্ছে এবং টাকার পাহাড়ের সুখস্মৃতিতে বিভোর হয়ে এ দেশে বসে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছে।
যাহোক, এই দুর্নীতি ও লুটপাটের ইতিহাস বলে শেষ করা যাবে না। কিন্তু করোনার চেয়েও ভয়ঙ্কর এই দুর্নীতিবাজ ও লুটপাটকারীদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে যে কোনো মূল্যে।
কাজেই আসুন, আমরা সবাই মিলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিবিরোধী তৎপরতায় অংশ নিই, দুর্নীতিবাজ ও লুটপাটকারীদের উৎখাত করি এবং ক্রমে ক্রমে সভ্য ও সুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করি।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, ধূমকেতুডটকম।