প্রচ্ছদ

ভুবন চিল বা ব্লাক কাইট

ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু বাংলা: চিল নামেই এই পাখিকে আমরা চিনি। তবে এই পাখির আরও কিছু বাংলা নাম আছে। যেমন- ভুবন চিল, বাদামি চিল, গোদা চিল, ডোম চিল, চিলা। আর এই পাখিকে ইংরেজিতে বলা হয় ব্লাক কাইট।

অনেক উপরে আকাশে কোন পাখি উড়তে দেখলেই আমরা ভাবি এটা চিল। তবে এই চিল পাখির অনেক প্রজাতি আছে আমাদের দেশে। শুধু দুই মেরু আর দুই আমেরিকা মহাদেশ বাদে প্রায় পুরো পৃথিবী জুড়ে এদের দেখা পাওয়া যায়।

বিগত কয়েক বছরে এই চিলের সংখ্যা কি হারে কমছে বা বাড়ছে সে সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়নি। এখনো এরা সন্তোষজনক সংখ্যায় রয়েছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে নূন্যতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। পৃথিবীতে মোট ভুবন চিলের সংখ্যা আনুমানিক ১০ লক্ষ থেকে ৬০ লক্ষটি বলে বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল উল্লেখ করেছে।

খোলা বিস্তীর্ন এলাকা ভুবন চিলের প্রিয় এলাকা। এছাড়া ঘন বন, পাতলা বন, পার্বত্য অঞ্চল, নদীর পাড়, বেলাভূমি, বন প্রান্ত, ঘাসবন, সাভানা প্রভৃতি অঞ্চলে দেখা যায় এদেরকে। মাঝে মাঝে বড় বড় বন্দর, শহরাঞ্চল ও গ্রামাঞ্চলেও দেখা যায়।

শীতে বিপুলসংখ্যক পরিযায়ী ভুবন চিল এসে বাংলাদেশে আবাসিক পাখির দলে যোগ দেয়। ভুবন চিল সুযোগসন্ধানী খাদক। এর খাদ্য তালিকা বেশ বিশাল। এর খাদ্যতালিকা স্থানীয় খাদ্যের যোগানের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। পানির আশেপাশে আবাস হলে মাছই এদের প্রধান শিকার হয়। অনেকসময় এরা মৃত বা রুগ্ন মাছও খায়।

খাদ্যের সন্ধানে এরা আকাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অলস ভঙ্গিমায় চক্কর কেটে বেড়ায়। এরা খুব কমই ডানা ঝাপটায়। ডানার তুলনায় শরীর হালকা হওয়ায় এরা অনেক্ষণ ডানা না ঝাপটে ভেসে বেড়াতে পারে। নৌকার হালের মতো লেজ ব্যবহার করে ঝটপট দিক বদল করতে পারে। উড়তে পারে বাতাসের প্রতিকূলেও। খাদ্যের সন্ধান পেলে এরা ডানা গুটিয়ে ফেলে ও ঝাঁপ দিয়ে শিকার ধরে।

মার্চ থেকে মে ভুবন চিলের প্রধান প্রজনন ঋতু। এ সময় পুরুষ চিল আকাশে চক্রাকারে উড়তে থাকে এবং হঠাৎ ঝাঁপ দিয়ে ডালে বসে থাকা স্ত্রী চিলের পিঠে এসে নামে। স্থানভেদে প্রজনন মৌসুমে বিভিন্নতা দেখা যায়।

উঁচু গাছে কাঠি, ডালপালা ও কাঠি দিয়ে এলোমেলো মাচার মত বাসা বানায়। উঁচু দালানে পানির ট্যাঙ্কেও বাসা করতে পারে। বাসায় নষ্ট কাগজ, পাখির পালক, ছেঁড়া কাপড়, শুকনো গোবর, কাদা, উজ্জ্বল প্লাস্টিকের বস্তুও থাকে। বাসার উচ্চতা ভূমি থেকে ৫ মিটার থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত হয়। বাসা বানানো হয়ে গেলে ২-৪টি ডিম পাড়ে। ডিমের রঙ পাটল-সাদা। ডিমের মাপ ৫.৩ দ্ধ ৪.৩ সেন্টিমিটার। ৩০ থেকে ৩৪ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। ছানারা প্রায় দুই মাস বাসায় থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ উভয় চিলই বাসা বানায়, ডিমে তা দেয় ও সন্তান লালন-পালনের ভার নেয়। দুই বছর বয়সে ছানারা প্রজননক্ষম হয়।

আরো পড়ুন:

তরমুজের রস দিয়ে তৈরি নতুন গুড় ‘তোগুড়’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *