নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে যখন সব লণ্ডভণ্ড, ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা আঁটতে আঁটতেই যখন গত বছর পার করেছে বিশ্ব অর্থনীতি। তখন পোশাকের রফতানি বাজারে ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলেছে মেইড ইন বাংলাদেশ। জাতিসংঘ ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার অঙ্গ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার আইটিসির সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর, এই ১২ মাসে পোশাকের বিশ্ববাজারে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম রফতানি করেছে ২৭ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলারের আর বাংলাদেশ করেছে ২৯ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক। অর্থাৎ পোশাক রফতানি করে ভিয়েতনামের চেয়ে ১ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার বেশি আয় করেছে বাংলাদেশ। অথচ ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের মে পর্যন্ত ১১ মাসে বাংলাদেশের চেয়ে ভিয়েতনামের আয় ২ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার বেশি ছিল। ওই সময়ে তৈরি পোশাক থেকে বাংলাদেশের রফতানি আয় ছিল ২৫ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার আর ভিয়েতনামের ছিল ২৮ দশমিক ২৬ বিলিয়ন ডলার।
তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকরা বলছেন, করোনাকালে সরকারের দেয়া প্রণোদনা এই খাতের ঘুরে দাঁড়াতে বেশ বড় ভূমিকা রেখেছে। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে আরও নীতি ও অর্থ সহায়তা দরকার বলে জানান তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসির।
সংগঠনটির সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, পোশাকের রফতানিবাজারে ভিয়েতনাম কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের শক্ত প্রতিপক্ষ। তাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কৌশলও বাংলাদেশের তুলনায় ভালো। বিশেষ করে, ইউরোপের বাজার সুবিধা আদায়ে ভিয়েতনামে সম্প্রতি একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করেছে। যেখানে বাংলাদেশ এমন কোনো উদ্যোগ নেই। ইউরোপের বাজারে ভিয়েতনাম রফতানি করে ৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আর বাংলাদেশ করে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের। তাই এই বাজারে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে পাওয়া জিএসপি সুবিধা বাতিল হয়ে গেলে বড় বেকায়দায় পড়তে হবে বাংলাদেশকে।
দুই দেশের মধ্যকার ব্যবসাবিষয়ক বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ড. রুবানা হক বলেন, ব্যবসা সহজীকরণ সূচকেও বাংলাদেশের চেয়ে ভিয়েতনাম এগিয়ে। আবার ভিয়েতনামের রফতানি পণ্যও বেশি অর্থাৎ দেশটি বিচিত্র রকম পণ্য তৈরিতে বাংলাদেশের তুলনায় বেশ এগিয়ে। আবার তাদের পোশাকের দামও বাংলাদেশি পোশাকের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ উচ্চমূল্যের পোশাক তৈরিতে বাংলাদেশের থেকে অনেক খানি এগিয়ে।
এমন নানান দুশ্চিন্তার কথা বললেও বাংলাদেশের উৎপাদন সক্ষমতা ও কারখানার সংখ্যা বেশি বলে জানান তিনি। বাংলাদেশের শ্রমবাজারও তুলনামূলক সূলভ। তাই প্রতিবন্ধকতাগুলোকে আমলে নিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তার সবটুকু কাজে লাগাতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারকেও তৎপর হওয়ার তাগিদ তার।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ- বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কৌশলে ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে বাংলাদেশকে। আর এ জন্য শুধু দক্ষ শ্রম শক্তির ওপর নির্ভর করলেই সুবিধা আদায় করা কঠিন হবে। তার পরামর্শ, এ জন্য দূতাবাসগুলোকে সুবিধা আদায়ে আরও কৌশলী ও দক্ষ হতে হবে। বাজার ধরতে ও টিকে থাকতে পণ্য সরবরাহের সময় কমিয়ে আনতে হবে। বাজারের চাহিদামতো পণ্য প্রস্তুতে গবেষণা বাড়াতে হবে।
এ ছাড়া প্রচলিত বাজারের বাইরে রাশিয়া, জাপান, আফ্রিকার মতো নতুন বাজারে রফতানি বাড়াতে শুল্ক সুবিধা আদায়ে সরকারকে আরও তৎপর হওয়ার তাগিদ এই অর্থনীতিবিদের।