নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: তৈরি পোশাক খাতের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান এনভয় গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম মুর্শেদী জানান, রোবট ব্যবহারের ফলে আমাদের উৎপাদনশীলতা অনেক বেড়েছে। উৎপাদিত সুতার মান আরও নিখুঁত হয়েছে। যদিও স্পর্শকাতর রোবট ব্যবহারে প্রাথমিক বিনিয়োগটা একটু বেশিই লেগেছে। তবে শেষ বিচারে রোবটের ব্যবহার বাণিজ্যিকভাবে লাভজনকই মনে হচ্ছে আমার কাছে। কারণ, উৎপাদনশীলতা বেশি হলে প্রাথমিক বিনিয়োগ উঠে আসতে খুব বেশি সময় লাগবে না। ভালুকায় এনভয় টেক্সটাইলে উৎপাদন শুরু হয় ২০০৮ সালে। আর রোবটের ব্যবহার শুরু হয় ২০১৯ সালের অক্টোবরে। জাতীয় একটি দৈনিক পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বস্ত্র উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মাঝেমধ্যেই লাইনের সুতা ছিঁড়ে যায়। এ রকম মুহূর্তে রোবট অনেকটা চোখের পলকেই আবার সুতায় জোড়া লাগিয়ে দিতে সক্ষম। এর ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয় না। রোবট ব্যবহারে এই একটা বড় সুবিধা। সাধারণ শ্রমিকের পক্ষে এটা প্রায় অসম্ভব। শ্রমিকদের নিজ হাতে সুতায় জোড়া লাগাতে অনেক সময়ের প্রয়োজন হতো। ততক্ষণ উৎপাদন ব্যাহত হতো। তার মানে, দিন শেষে উৎপাদন কম হতো। ময়মনসিংহের ভালুকায় এই কারখানাটি বিশ্বের ইউএসজিবি লিড সনদপ্রাপ্ত বিশ্বের প্রথম বস্ত্র কারখানা। ১৪টি রোবোটিক কর্নার রয়েছে কারখানাটিতে। প্রতিদিন ৫০০ টন ডেনিম সুতা উৎপাদন হয়।
আমাদের কারখানায় ৪২০টি রোবট কাজ করছে। এগুলোর প্রতিটির দাম গড়ে ৬ লাখ ইউরো। জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড থেকে এসব রোবট আমদানি করা হয়েছে। সাধারণ মেশিনারিজের তুলনায় রোবট ব্যবহারে আনুমানিক চার গুণ বেশি বিনিয়োগ করতে হয়। তবে একবার বিনিয়োগের পর নতুন করে আর বিনিয়োগ বা ব্যয় বলতে গেলে নেই। ১০ জন শ্রমিক যে কাজ করেন, একটা রোবট সেই পরিমাণ কাজ করতে পারছে। ফলে রোবটের ব্যবহার তুলনামূলক অনেক সাশ্রয়ী। যেমন, আমাদের কারখানায় একেকটি লুম এত বড় যে, সেগুলো প্রতিটি ৫০ ফুট জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। এ রকম চারটি লুমের পেছনে রোবট পরিচালনায় মাত্র একজন অপারেটরই যথেষ্ট। সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের কারখানাটিতে শ্রমিকের সংখ্যা এখন মাত্র এক হাজার।
আমাদের টেক্সটাইল কারখানায় রোবটের ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছি। কাপাসিয়ায় আমাদের আরও একটি টেক্সটাইল মিল হচ্ছে, সেখানে রোবট দিয়ে উৎপাদনের উপযোগী করে অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। রোবট আনা হচ্ছে জার্মানিসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে। সংশ্নিষ্ট কাজের উপযোগী উন্নত মানের রোবট যে দেশে পাওয়া যায়, সে দেশ থেকেই আমদানির প্রক্রিয়া চলছে।
রোবটের ব্যবহার আসলে স্পিন অর্থাৎ সুতা তৈরিতেই বেশি ভালো। বিশেষ করে ওয়াশিংয়ের জন্য অত্যন্ত ভালো। তবে তৈরি পোশাকে রোবট ব্যবহারের ব্যাপারটা এখনও এতটা সহজ নয়। কারণ, একটা পোশাক উৎপাদনে ছোট ছোট অনেক কাজ থাকে। বিভিন্ন এক্সেসরিজ ব্যবহার করতে হয়। এ রকম ছোট কাজগুলো রোবটের মাধ্যম করা সহজ নয়। তবে প্রযুক্তির উন্নয়নে আগামীতে হয়তো সেটাও সহজ হয়ে আসবে। এ ছাড়া উৎপাদনে রোবট ব্যবহার করতে চাইলে কারখানায় ভিন্ন ধরনের অবকাঠামো প্রয়োজন হয়। আমাদের পুরোনো কারখানাগুলোতে এ রকম অবকাঠামো এখন আর বলতে গেলে সম্ভব নয়। পরিকল্পনা করেই অবকাঠামো তৈরি করতে হয়। আমরা আমাদের নতুন কারখানাটির অবকাঠামো সেভাবেই তৈরি করছি। আগে আমরা অবকাঠামো তৈরি করে পরে মেশিন নিয়ে আসতাম। এখন ঠিক উল্টো। মেশিনের উপযোগী করে অবকাঠামো তৈরি করছি।
তবে, পুরোনো কারখানা ভবনগুলোতে রোবট উপযোগী কাঠামো গড়ে তোলা কঠিন না হলেও সাশ্রয়ী হবে না। এছাড়া সাধারণ বিনিয়োগের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি বিনিয়োগ করাও অনেক উদ্যোক্তার পক্ষে সম্ভব নয়। এর চেয়ে বড় যে কারণের কথা আমি বলতে চাই, তা হলো দক্ষ শ্রমিকের অভাব। রোবট বলেন আর আধুনিক প্রযুক্তির অটোমেটিক মেশিনারিজ বলেন, এসব পরিচালনা করার মতো দক্ষ শ্রমিকের অভাব আমাদের প্রকট। প্রযুক্তি পরিচালনায় দক্ষ শ্রমিক তৈরিতে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।
আরো পড়ুন: