টানা ভারী বর্ষণে বান্দরবানের মাতামুহুরী ও সাঙ্গু নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দুই হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়াও রাঙ্গামাটিতে টানা ভারী বর্ষণে পাহাড়ধসে ৩৮১টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় ভারী বর্ষণে বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও বরকল উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এদিকে কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায়ও বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে তিন উপজেলার প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছেন।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) স্থানীয় প্রশাসন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। কক্সবাজার সদর উপজেলার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় রান্নাবান্না করতে না পারায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন এলাকার মানুষ।
রাঙ্গামাটি : টানা ভারী বর্ষণে পাহাড়ধসে ৩৮১টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছেন প্রায় ১০ জন। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সকালে ভারী বর্ষণে বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, বিলাইছড়ি ও বরকল উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় এ পর্যন্ত ২৩৫ স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। ৩৮১টি বসতঘর ধসে গেছে। ২৪২টি আশ্রয়কেন্দ্রে সাড়ে তিন হাজার মানুষ অবস্থান করছে। পাহাড়ধসে প্রাণহানি না হলেও আহত হয়েছেন ১০ জন।’
বান্দরবান : ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পাহাড়ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বান্দরবানে। সাঙ্গু নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা শহরে নদীর তীরবর্তী, অফিসার্স ক্লাব, ইসলামপুর, আর্মিপাড়া এলাকাসহ নিচু এলাকাসমূহে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের কারণে পর্যটকবাহী গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম জানান, মাতামুহুরী নদীর পানিতে চৈক্ষ্যং ইউপি পরিষদ এলাকার সড়ক প্লাবিত হয়ে আলীকদমে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ায় জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের আশঙ্কা রয়েছে। তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনগণকে নিরাপদে সরে গিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানের অনুরোধ জানানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে বান্দরবান জেলায় সর্বমোট ১৯৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
কক্সবাজার : টানা ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে বান্দরবানের লামা, কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে তিন উপজেলার প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় জীবনযাপন করছেন। এ ছাড়াও কক্সবাজার সদর উপজেলার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় রান্নাবান্না করতে না পারায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে পড়েছেন এলাকার মানুষ।
চকরিয়া উপজেলার কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, কোনাখালী, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড় ভেওলা, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, ফাঁসিয়াখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী এবং পেকুয়া সদর, রাজাখালী, উজানটিয়া এবং চকরিয়া পৌরসভার সিংহভাগ এলাকা বর্তমানে ৮ থেকে ১০ ফুট বানের পানির নিচে রয়েছে। এসব এলাকার প্রায় তিন শতাধিক গ্রামের অন্তত সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ঘরে ঘরে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এসব পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের কারণে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে।
এদিকে চকরিয়ার বরইতলী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পূর্ব ভিলিজার পাড়ায় মাটির ঘরের দেয়াল ধসে আনোয়ার হোসেনের দুই শিশুর মৃত্যু হয়। তারা হলেন- মোহাম্মদ সাবিত (৫) ও তাবাচ্ছুম (১)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ছালেকুজ্জামান।
কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আব্দুর রহমান জানান, সোমবার (৭ আগস্ট) রাত ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান তিনি।