আন্তর্জাতিকসর্বশেষ

ভারতে সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়াতে ব্যবহৃত হচ্ছে ফেসবুক


সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকের নিজেদের অভ্যন্তরীণ গবেষণায় দেখা গেছে, এর ভারতীয় পাতাগুলোর একটা বড় অংশের বিষয়বস্তু (কনটেন্ট) উসকানিমূলক বক্তব্যে ভরা। সংশ্লিষ্ট গবেষকদের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ধরনের বিষয়বস্তু ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সঙ্গেও যুক্ত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল শনিবার এক প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানাচ্ছে, ফেসবুকের গবেষকরা ২০২০ সালের জুলাইতে এক প্রতিবেদনে লেখেন, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পরের কয়েক মাসে উসকানিমূলক বিষয়বস্তু আগের সময়ের তুলনায় তিন গুণ বেড়েছিল। ওই সময় ভারতজুড়ে ধর্মীয় বিষয়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ চলে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকা ফেসবুকের গবেষকদের প্রতিবেদনটি সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেছে। এতে দেখা যায়, বিশেষ করে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ফেসবুকের খুদেবার্তার সার্ভিস হোয়াটসঅ্যাপে গুজব ও সহিংসতার ডাক ব্যাপকভাবে ছড়ায়। তখন দিল্লিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ৫৩ জন নিহত হয়েছিল।
ভারতের হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মের ফেসবুক ব্যবহারকারীরা বলেছেন, তারা ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে সংঘাত, ঘৃণা ও সহিংসতাকে উৎসাহিত করার মতো বিশাল পরিমাণ বিষয়বস্তুর সম্মুখীন হয়ে থাকেন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-এর কথায়, নিজেদের সেবার সঙ্গে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বের সম্ভাব্য সম্পর্ক নিয়ে ফেসবুক এতটাই উদ্বিগ্ন ছিল যে তারা এ নিয়ে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে কথা বলতে গবেষকদের মাঠ পর্যায়ে পাঠায়। দিল্লির একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী ফেসবুক ব্যবহারকারী ওই গবেষকদের বলেন, তিনি প্রায়ই ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে বিপজ্জনক সব বার্তা পান।
ফেসবুকের গবেষকরা দেখেছেন, ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে যুক্ত দুটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী গ্রুপ ফেসবুকে উসকানিমূলক পোস্ট দেয়। তাঁরা ফেসবুকের বিদ্বেষমূলক (হেট স্পিচ) প্রচারণার নীতি লঙ্ঘনের দায়ে একটি গ্রুপকে নিষিদ্ধ করার সুপারিশ করেন। তবে গ্রুপটি এখনো সক্রিয় রয়েছে। আরেকটি গ্রুপও সহিংসতায় উসকানি দেয় ও মুসলিমদের জন্য অবমাননাকর বিষয়বস্তু পোস্ট করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতার জন্য’ একে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি।
ফেসবুকের মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন বলেন, ‘ফেসবুক সতর্ক, বিশদ ও বহুমাত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করে থাকে।’ তিনি বলেন, প্রতিবেদনগুলোর কিছু কিছু চলমান কাজের অংশ মাত্র, তা পূর্ণাঙ্গ তদন্ত নয়। স্টোন আরো বলেন, ফেসবুক বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা খুঁজে বের করতে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ করেছে।
‘ভারতে সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মুম্বাইয়ের এক মুসলিম ব্যক্তি গবেষকদের বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর ১০ বছর এভাবে চললে ঘৃণা ছাড়া আর কিছু থাকবে না।’
প্রতিবেদনে গবেষকরা আপত্তিকর বিষয়বস্তু নিয়ন্ত্রণের জন্য তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলাসহ কিছু সুপারিশও করেছেন। তবে ফেসবুকের মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টোন এসব নিয়ে কথা বলতে চাননি। তিনি বলেন, ‘ফেসবুক উন্নতির ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করে।’   সূত্র : ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *