ক্রীড়া প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে তখন পিনপতন নীরবতা। রিকার্ভ মিশ্র দ্বৈতের সেমিফাইনাল গড়িয়েছে টাইব্রেকে। শুট অফের শেষ দুটি তির ছুড়লেন হাকিম আহমেদ ও দিয়া সিদ্দিকী। দুটি তিরই ‘বুলস আই’ নিশানায় বিঁধল।
কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ লাফিয়ে উঠলেন উচ্ছ্বাসে। এরই সঙ্গে প্রথমবারের মতো এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে পৌঁছে গেল বাংলাদেশ।
গত দুই দিন যেখানে বাংলাদেশের আর্চাররা শুধুই হতাশা উপহার দিয়ে চলেছেন, সেখানে আর্মি স্টেডিয়ামে আজকের বিকেলে সোনার পদকের স্বপ্ন দেখালেন দিয়া-হাকিম।
রিকার্ভ মিশ্র দ্বৈতের সেমিফাইনালে এই জুটি ৫-৪ সেট পয়েন্টে ভারতের কপিল-অঙ্কিতা ভক্ত জুটিকে হারিয়ে চমকে দিয়েছেন। ১৯ নভেম্বর ফাইনালে বাংলাদেশের এই জুটি খেলবে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে।
বাংলাদেশ এমন স্নায়ুক্ষয়ী ম্যাচ খুব কমই খেলেছে এই টুর্নামেন্টে। আজ শুরুতেই প্রথম সেটে ২-০ পয়েন্টে এগিয়ে যায় ভারত। এই সেটে টানা চারটি শটেই ১০ পয়েন্ট করে মারে ভারত। প্রথম সেটে ভারতের পয়েন্ট ৪০, বাংলাদেশের ছিল ৩৭। কিন্তু দ্বিতীয় সেটে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ।
দ্বিতীয় সেটে বাংলাদেশ ৩৭ পয়েন্ট করে, ভারত করতে পারে ৩৬ পয়েন্ট। এরপর তৃতীয় সেটটিও জিতে নেয় বাংলাদেশ। তৃতীয় সেটে বাংলাদেশের স্কোর ৩৮, ভারতের ৩৬। চতুর্থ সেটে বাংলাদেশ ও ভারতের সমান পয়েন্ট হলেও ড্র হওয়ার সুবাদে বাংলাদেশ পৌঁছে যেত ফাইনালে।
কিন্তু চতুর্থ সেটে বাংলাদেশ করে ৩৬, ভারত করে ৩৭ পয়েন্ট। এই সেট জেতায় তখন ৪-৪ সেট পয়েন্টে সমতায় থাকে ম্যাচটি। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচ গড়ায় শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকে। নিয়ম অনুসারে টাইব্রেকে দুটি করে তির ছুড়তে হয় দুই দেশের আর্চারদের। বাংলাদেশের হাকিম প্রথম শটে মারেন ১০ পয়েন্ট। এরপর ভারতের কপিল মারেন ১০।
কিন্তু ভারতের অঙ্কিতা ৯ মারার পর শেষ শটে দিয়া ১০ পয়েন্ট মারতেই উল্লাসে মেতে ওঠে পুরো বাংলাদেশ গ্যালারি। ম্যাচ শেষে সতীর্থদের অভিনন্দনের বৃষ্টিতে ভিজতে শুরু করেন দিয়া ও হাকিম। আনন্দে আর্চারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদও আর্চারদের সঙ্গে নাচতে শুরু করে দেন।
এর আগে কখনোই বাংলাদেশ এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে কোনো পদক জিততে পারেনি। ফাইনালে ওঠার সুবাদে অন্তত রুপার পদক নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের। পুরো টুর্নামেন্টে এই একটি ইভেন্টের দিকেই তাকিয়ে ছিল পুরো আর্চারি ফেডারেশন। পদকমঞ্চে উঠলেও দিয়ার চোখ সোনার পদকে, ‘ভারতকে হারানোর মতো সামর্থ্য আমাদের রয়েছে, সেই আত্মবিশ্বাস আমাদের ছিল। প্রথম সেটে ওরা এগিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত ১০ পয়েন্ট মেরে আমরাও এগিয়ে যাই। ম্যাচ শেষে তো আমি উত্তেজনায় কাঁপতে শুরু করি। শুট অফে ওরা ৯ মারলে সেটা দেখে ফেলি আমি। তখনই ভাবি আমাকে ১০ মারতেই হবে। শেষ পর্যন্ত ১০ মেরেই ফাইনালে উঠেছি। আমার খুব ভালো লাগছে। যেহেতু বাংলাদেশের মাটিতে খেলা হচ্ছে, আমার ইচ্ছা যেন আমরা একটা সোনার পদক জিততে পারি। সেই লক্ষ্যেই খেলব ফাইনালে। আশা করি, কোরিয়াকেও হারাতে পারব।’
গত মে মাসে সুইজারল্যান্ডে আর্চারির বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিলেন রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী জুটি। ওই বিশ্বকাপে রুপা জেতে এই জুটি। কিন্তু এবারের এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে রোমান সানার পারফরম্যান্স বাজে হওয়ায় মিশ্র দ্বৈতে রোমানের বদলে দলে ঢোকেন হাকিম।
প্রথমবার আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে ওঠার পর আত্মবিশ্বাসী হাকিমের চোখও এবার সোনার পদকে, ‘আমি খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলাম এই ম্যাচ নিয়ে। দিয়াকে নিয়ে বেশি খুশি ছিলাম। কারণ, ও ধারাবাহিকভাবে খুব ভালো শট করেছে। প্রথম সেটে পিছিয়ে পড়ার পর কোচ বললেন যে নিজেদের মধ্যে কথা বলো। সেটাই করেছি। ভাবছিলাম হয়তো এমন সুযোগ আর না–ও আসতে পারে, তাই সেরাটা দিয়েই খেলেছি। তা ছাড়া এর আগেও কোরিয়ার সঙ্গে খেলেছি বিশ্বকাপে। তাই এবার আশা করি ওদের হারাতে পারব।’
আরো পড়ুন:
পাকিস্তান সিরিজে ভালো কিছু উপহার দেয়ার প্রত্যাশা তাসকিনের