ব্যক্তিত্ব

ভরসার মানুষটির নাম ‘বাবা’

সাদিয়া মাহবুব সারা :

ছোটবেলা থেকে বাবাকে সব সময় চামড়ার ফিতের হাতঘড়ি পরতে দেখতেন বলে সত্তরের কোঠায় পৌঁছে ছেলেও আজ শুধু চামড়ার ঘড়িই পরছেন।
যুবক বয়সে যে ছেলেটা নিজের বাবার কাছ থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে ধূমপান বা এটা সেটা করতো, সে আজ তার মেয়ের এক কথায় বহু বছরের ঐ খারাপ অভ্যাস বিনা বাক্যে ছেড়ে দিয়েছেন।
এককালের ডানপিটে, ভবঘুরে ছেলে তার জীবনের অর্ধেক সময় পার করে আজ বাবা হবার পর চোখে পানি নিয়ে বলছেন- এর আগে তিনি কখনো এমন প্রশান্তি আর ভালোবাসা অনুভব করেননি।
জীবিকার তাগিদে প্রবাসে থাকা বাবা ঈদে ভিডিও কলে সন্তানের পোলাও-কোর্মা খাবার দৃশ্য দেখে দিব্বি নিজে শুকনো খাবার খেয়ে কাজ করতে চলে গেছেন।
দিনমজুর বাবাটাও দিনশেষে তার সন্তানের জন্য বড় একটা মাছ কিনে বাড়ি ফেরেন তার সন্তান আবদার করেছে বলে।
বাবারা এমনই হন। মায়েদের প্রতিদানের কথা আমরা যতটা ফলাও করে বলি, বাবাদের বিষয়ে সেভাবে ঠিক বলা হয়ে উঠে না। নিঃসন্দেহে মায়ের ত্যাগের সাথে কারোর-ই তুলনা হয় না, কিন্তু মায়েদের পেছনে নিভৃতে বটবৃক্ষের মতো দাঁড়িয়ে থাকেন যিনি, তিনি হলেন বাবা। দিনের পর দিন নিজের প্রায় সমস্তটা বিলীন করে, একটু একটু করে ক্ষয়ে আরাম কেদারায় বসে বাবারা যখন তার জীবনের পেছনের দিকে ফিরে তাকান, তখন তার সাথে কথা বলার, তার জীবনের গল্পগুলো ভাগ করে নেয়ার মানুষের বড্ড অভাব।
আমরা সন্তানেরা এই ব্যস্ত সময়ে দিনের অল্প কিছু সময় বের করতে পারি না। জীবিকার পেছনে ছুটতে থাকা আমরা ভুলে যাই তাদের জন্য অল্প হলেও দিনের একটা অংশ বরাদ্দ রাখতে। ভোর বেলায় কিছুক্ষণ একসাথে হাঁটা বা অফিস যাবার আগে এক কাপ চা কিংবা ঘরে ফেরার পর রাতে একসাথে খাবার খাওয়া, এর থেকে বেশি সময় হয়তো দেয়ার প্রয়োজন হয় না। দিন শেষে বাড়ি ফিরে বাবার শরীর কেমন আছে জিজ্ঞেস করা, দুপুরে খাবার শেষে ওষুধ খেয়েছেন কিনা খোঁজ করা, এই ছোট ছোট বিষয়গুলো তাদের উৎফুল্ল রাখতে সাহায্য করবে। সংসারে তার প্রয়োজন যে এখনো ফুরিয়ে যায়নি এটা এক বড় আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করবে।
এই মহামারির ক্রান্তিলগ্নে তাদের বয়সি অনেকেই চলে গেছেন। এটাও তাদের মনে নতুন এক শঙ্কার জন্ম দিয়েছে। এজন্য তাদের সাথে সময় কাটানো আরও বেশি জরুরি। যে বাবারা বাইরে যাচ্ছেন, তারা তাদের মাস্ক ঠিকমত পরছেন কিনা খেয়াল রাখুন, ঠিকমত হাত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করছেন কিনা খোঁজ নিন।
বাবারা সব সময় নিজের কাঁধে সকল ভার নিতে পছন্দ করেন। আমরা চাইলেই বাবাদের এই ভার কমিয়ে দিতে পারি। বাড়ির ছোটোখাটো বাজারগুলো, বিলগুলো, ওষুধপত্র নিয়ে আসার মতো টুকটাক কাজ করলে তারা অল্প হলেও কাজের ভার থেকে মুক্তি পাবেন।
বিশ্ব বাবা দিবস ‍আজ। করোনার এই সময়ে আমাদের মাথার উপরে থাকা এই বটবৃক্ষরাজিকে এখন সব থেকে বেশি আগলে রাখার প্রয়োজন। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন পৃথিবীর সকল বাবারা। বাবাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *