অপেক্ষায় রাখলেন সাকিব আল হাসান। অপেক্ষা বাড়াল বাংলাদেশ। আজ জিতলেই নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিশ্চিত হয়ে যেত। আর সাকিব দুই উইকেট পেলে টি-টোয়েন্টিতে সর্বাধিক উইকেটের বিশ্বরেকর্ড গড়তেন। কিন্তু মিরপুরের ২২ গজে আজ বেদনাবিধুর গল্প লেখা হলো। সাকিব উইকেটশূন্য থাকলেন। বাংলাদেশও জিততে পারল না।
নিউ জিল্যান্ড দারুণ লড়াই করে বাংলাদেশকে হারাল ৫২ রানে। আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে মাত্র ১২৮ রানের পুঁজি পায় সফরকারীরা। বাংলাদেশ করতে পারে মাত্র ৭৬ রান। অথচ এ রানটাও বাংলাদেশের জন্য পাহাড়সম হয়ে ওঠে। ভুলে ভরা ও তালগোল পাকানো ব্যাটিংয়ে ম্যাচটা নিউ জিল্যান্ডকে উপহারই দিলো স্বাগতিকরা।
অবশ্য অতিথিদের বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের প্রশংসা না করলে বড্ড অন্যায়ই হবে। নিয়ন্ত্রিত বোলিং ও জমাট ফিল্ডিংয়ে ১২৮ রানও যে কত বড় হতে পারে, তা ল্যাথামের দল করে দেখাল। লক্ষ্যে বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল হতশ্রী। তালগোল পাকানো একেকটি শটে যেভাবে ব্যাটসম্যানরা আউট হচ্ছিলেন, তাতে জয়ের তাড়না ছিল কি না সেই প্রশ্নও তোলা যায়।
আসা-যাওয়ার মিছিল শুরুর আগে দৃশ্যপট ছিল ভিন্ন। ১৬ বলে ২৩ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন নাঈম ও লিটন। প্রথম ওভারে পেসার ড্যারেল টাফিকে পরপর দুই চার মেরে শুরু নাঈমের। দ্বিতীয় ওভারে এজাজ প্যাটেলকেও বাউন্ডারিতে পাঠান লিটন। তৃতীয় ওভারে ম্যাককনচিকে দুই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে লিটন বড় কিছুর আশা দেখান। ২৩ রানের উদ্বোধনী জুটির পরপরই বাংলাদেশের ছন্দপতন শুরু। প্রথম বলে ম্যাককনচির সোজা বলে এলবিডব্লিউ হন লিটন।
তিনে পরীক্ষামূলকভাবে নামানো হয়েছিল মেহেদীকে। সুযোগ কাজে লাগাতে না পেরে এজাজের বলে আউট হন। চারে নেমে সাকিব প্রথম বলই স্লগ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হন। তবে দ্বিতীয় বলে উইকেটটা ঠিকই এজাজকে উপহার দিয়ে আসেন। এবারও স্লগ করে লং অনে ক্যাচ দেন তিনি। ২ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশ হারায় ৩ উইকেট।
ওপেনার নাঈম অনেক কিছু করার চেষ্টা করতে গিয়ে রবীন্দ্র জাজেদার বল উইকেটে টেনে আনেন। ইনিংসের অর্ধেকতম ওভারে মাহমুদউল্লাহ ও আফিফ হতাশ করেন। এজাজকে কাভারের ওপর দিয়ে উড়াতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ ক্যাচ দেন ৩ রানে। আফিফ গোল্ডেন ডাককে সঙ্গী করেন। ৪৩ রানে যেতেই নেই ৬ ব্যাটসম্যান।
এক ওভার পরই মুশফিক ও সোহানের ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটের সুযোগ তৈরি করে কিউইরা। এ যাত্রায় বেঁচে যাওয়া সোহান দুই ওভার পরই আউট হন ম্যাককনচির বলে। একপ্রান্ত আগলে ব্যাটিং করে যাওয়া মুশফিককে সঙ্গ দিতে পরেননি কেউ। একটা সময় মনে হচ্ছিল টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন ৭০ রানের রেকর্ড আজ ভেঙে যাবে। সেই লজ্জায় পড়তে হয়নি মুশফিকের অপরাজিত ২০ রানের বদৌলতে।
টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কার্যকারিতা প্রমাণ করেন নিউ জিল্যান্ডের টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা। পাওয়ার প্লের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ১ উইকেট হারিয়ে ৪০ রান তুলে নেয়। শুরুটা হয়েছিল করোনা যুদ্ধে জয়ী ফিন অ্যালেনের দারুণ ব্যাটিংয়ে। দুই স্পিনার মেহেদী ও নাসুমকে ৩ বাউন্ডারি মেরে বড় কিছুর আশা দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু তৃতীয় ওভারে মোস্তাফিজ বোলিংয়ে এসে প্রথম বলে তাকে সাজঘরের পথ দেখান। তবুও কিউইরা সাচ্ছন্দ্যে ছিলেন। কিন্তু ইনিংসের মধ্যভাগে পথ হারায় তারা।
ভুলে ভরা ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বড় হার
ভুলে ভরা ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বড় হার
৭-১৬ ওভারে স্কোরবোর্ডে মাত্র ৫৫ রান যোগ করেন অতিথিরা। বাংলাদেশ এ সময়ে তুলে নেয় ৪ উইকেট। পেসার সাইফউদ্দিন সপ্তম ওভারে জোড়া আঘাত করে ইয়াং ও গ্র্যান্ডহোমকে ফেরান স্লোয়ার অফকাটারে। এরপর রাচিন রবীন্দ্রকে বোল্ড করে মাহমুদউল্লাহ শততম ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখেন। সঙ্গে মেহেদী ফিরতি ক্যাচে কিউই অধিনায়ক ল্যাথামের উইকেট নেন।
৬২ রানে ৫ উইকেট হারানো নিউ জিল্যান্ডকে ম্যাচে ফেরান ব্লান্ডেল ও নিকোলস। তাদের ৫৫ বলে ৬৬ রানের জুটিতে শেষটা রাঙায় অতিথিরা। শেষ ৪ ওভারেই তারা স্কোরবোর্ডে জমা করে ৪০ রান। ২৯ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ৩৬ রান করেন নিকোলস। ব্লান্ডেল বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাটিং করে ৩০ বলে করেন ৩০ রান। তার ইনিংসেও ছিল ৩টি বাউন্ডারি।
বল হাতে বাংলাদেশের সেরা সাইফউদ্দিন। ২৮ রানে তার শিকার ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন মেহেদী, মোস্তাফিজ ও মাহমুদউল্লাহ।
২-১ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকলেও নিউ জিল্যান্ড সিরিজ জীবন্ত করে ফেলল। কিউইরা বরাবরই পেশাদার ও লড়াকু। সেই ছাপটাই আজ বাংলাদেশ চেয়েচেয়ে দেখল। ব্যাটিং-বোলিংয়ে নিষ্প্রভ দিন কাটিয়ে বাজে হারকে সঙ্গী করলেন মাহমুদউল্লাহরা।
/জেড এইচ