নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: বর্তমানে খুব ঘনঘন শোনা যায়, আঙুলের ছাপ মেলে না। ফলে ব্যাংক, এয়ারপোর্টে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। ড্রাইভিং লাইসেন্স, মোবাইল ফোনের সিম উত্তোলনসহ নানা কাজেও পড়তে হয় ভোগান্তিতে। এর পেছনে যে একটি রোগ অনেক সময় দায়ী, সেটা জানেন না অনেকেই।
রোগটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় অ্যাডার্মাটো লাইফিয়া। সহজ করে বললে, ইমিগ্রেশন ডিলে ডিজিজ বা অভিবাসন বিলম্ব রোগও বলা হয় একে।
এ রোগটি শরীরের অন্যান্য সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। এতে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুছে যায় আঙুলের ছাপ। তাই এ সমস্যা দেখা দিলে দেখাতে হবে একজন চর্মরোগের চিকিৎসককে।
বিষয়টি নিয়ে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক (বারডেম) হাসপাতালের ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের প্রধান ও লাইফস্টাইল মোডিফায়ার ডা. এসএম জি সাকলায়েন রাসেল বলেন, রোগটি অনেকে জন্ম থেকেই নিয়ে আসেন। অনেকের জন্মের পর অন্যান্য সমস্যা থেকে হয়। যদি জন্ম থেকে কারো রোগটি থাকে, তাহলে আর ভালো হয় না। তবে অন্যান্য কারণে এ রোগ দেখা দিলে চিকিৎসায় ভালো হয়। এজন্য একজন চর্মরোগের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
তিনি এ নিয়ে উৎকণ্ঠার কথাও জানান। যাদের আঙুলের ছাপ মুছে যায়, তারা নাগরিক সেবা পেতে কতনা বিড়ম্বনায় পড়েন! তাই পাসপোর্ট, এনআইডিসহ সব কর্তৃপক্ষের উচিত এ নিয়ে বিকল্প কোনো চিন্তা করা। যাতে এ ধরনের নাগরিকরা সেবা পেতে কোনো অসুবিধায় না পড়েন।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে জাতীয় পরিচয়ত্র (এনআইডি) দিচ্ছে, তার ভিত্তিতেই তৈরি হচ্ছে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স। এছাড়া ব্যাংকসহ ১৪০ ধরনের প্রতিষ্ঠান এনআইডি সার্ভার থেকে তথ্য নিয়ে ব্যক্তিকে শনাক্ত করছে। কারণ ভোটার হওয়ার সময় নেওয়া আঙুলের ছাপসহ ব্যক্তির দুই ডজনেরও বেশি তথ্য নিয়ে রাখে ইসি।
কিন্তু প্রায়ই অভিযোগ আসে, বিভিন্ন সেবা নিতে গিয়ে মিলছে না আঙুলের ছাপ। ইসিতে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে বলা হয়, তাদের সার্ভারে আঙুলের ছাপ রয়েছে। তার অর্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আঙুলের ছাপ ভোটার হওয়ার পরে যে কোনো সময় মুছে গেছে-বলেন ইসি কর্মকর্তারা।
আঙুলের ছাপ বয়স বাড়লে কিংবা ভারী কাজ করলেও অনেকের কিছু অংশ মুছে যায়। কিংবা অস্পষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রেও সেবা নিতে গেলে এনআইডি সার্ভারের সঙ্গে মেলে না। এ বিষয়টি উপলব্ধি করে নির্বাচন কমিশন প্রায় পাঁচ বছর আগে থেকে নিচ্ছে চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি। সঙ্গে নিচ্ছে হাতের ১০ আঙুলের ছাপ। তাই সরকার কিংবা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যদি আইরিশ চিহ্নিত করার যন্ত্র ব্যবহার করে, তবে ব্যক্তি শনাক্ত করতে আর সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন তারা।
কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন শুরুতে দুই হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি আর তর্জনীর ছাপ নিতো। কিন্তু অনেক ব্যক্তির ছাপ পাওয়া যেত না। পরে ১০ আঙুলের ছাপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়, যাতে এক আঙুলের ছাপ হলেও পাওয়া যায়। এরপর আরো নিশ্চিয়তা দিতে সফটওয়্যার পরিবর্তন করা হয়। বর্তমানে ইসি এমন যন্ত্র ব্যবহার করে, যেখানে একজন ব্যক্তির ১০টি আঙুলের মধ্যে যে কোনো একটি আঙুলের ৩৫ শতাংশ ছাপ পাওয়া গেলেও তা নেওয়া হয়।
এরপরও যার না মেলে, ভোটার ফরমে তার ক্ষেত্রে ‘আঙুলের ছাপ নাই’ লিখে রাখা হয়। এ ধরনের ব্যক্তির ক্ষেত্রে কিংবা যার দু’টি হাতই নেই; তাদের পরিচয় শনাক্তের জন্য নিয়ে রাখা হয় চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি।
এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. নুরুজ্জামান তালুকদার এ বিষয়ে বলেন, আঙুলের ছাপ যাতে মিলে যায়, সেজন্য আমরা ১০ আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করি। এছাড়া ব্যক্তি চিহ্নতকরণে নিশ্চয়তার জন্য নিচ্ছি চোখের আইরিশের প্রতিচ্ছবি। আমাদের সার্ভারে সেটা সরক্ষিত থাকছে। এ অবস্থায় সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যদি আইরিশ চিহ্নিত করার যন্ত্র ব্যবহার করে, তাহলে ভুক্তভোগীদের সমস্যা দূর হবে।