বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের আজ শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা
আজ রোববার (১৫ মে) বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের আজ শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় বা প্রধান ধর্মীয় উৎসব। ‘অহিংসা পরম ধর্ম’–এই বাণীর প্রচারক গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব, বোধিপ্রাপ্তি আর মহাপরিনির্বাণ–এই স্মৃতিবিজড়িত দিনটিকে বুদ্ধপূর্ণিমা হিসেবে পালন করেন বুদ্ধভক্তরা।
বৌদ্ধ ধর্মমতে, আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে এই দিনে মহামতি গৌতম বুদ্ধ আবির্ভূত হয়েছিলেন। তার জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে এর (বৈশাখী পূর্ণিমা) অপর নাম ‘বুদ্ধপূর্ণিমা’।
বৈশাখ মাসের এ পূর্ণিমায় মহামানব বুদ্ধের জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো খ্রিষ্টপূর্ব ৬২৩ অব্দে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন, ৫৮৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের এই দিনে তিনি সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেন এবং ৫৪৩ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের এই দিনে তিনি মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্বলাভের মধ্যদিয়েই জগতে বৌদ্ধ ধর্ম প্রবর্তিত হয়।
বৌদ্ধ সাহিত্য থেকে জানা যায়, পূর্বজন্মে বোধিসত্ত্ব সকল পারমি পূরণ করে সন্তোষকুমার নামে যখন স্বর্গে অবস্থান করছিলেন, তখন দেবতারা তাকে জগতের মুক্তি ও দেবতা এবং মানুষের নির্বাণ পথের সন্ধান দানের জন্য মনুষ্যকুলে জন্ম নিতে অনুরোধ করেন।
দেবতাদের অনুরোধে বোধিসত্ত্ব সর্বদিক বিবেচনাপূর্বক এক আষাঢ়ি পূর্ণিমায় স্বপ্নযোগে মাতৃকুক্ষিতে প্রতিসন্ধি গ্রহণ করেন এবং পরবর্তী এক শুভ বৈশাখী পূর্ণিমায় জন্ম লাভ করেন। তার জন্ম হয়েছিল লুম্বিনী কাননের শালবৃক্ষ ছায়ায় উন্মুক্ত আকাশতলে। তার নিকট জাতি, শ্রেণি ও গোত্রের কোনো ভেদাভেদ ছিল না। তিনি মানুষকে মানুষ এবং প্রাণীকে প্রাণীরূপেই জানতেন এবং এর প্রাণসত্তার মধ্যেই যে কষ্টবোধ আচে তা তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতেন। তাই তিনি বলেছিলেন, ‘সবেব সত্তা ভবন্তু সুখীতত্তা’ জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক।
দিবসটি উপলক্ষ্যে দেশজুড়ে বিভিন্ন বৌদ্ধবিহারে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর বাসাবো ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারেও বুদ্ধপূজা ও শীলগ্রহণ, পিণ্ডদান, ভিক্ষু সংঘের প্রাতরাশসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে দিনটি পালন করা হবে।
বৈশাখের পূর্ণিমা তিথিতে এ পুণ্যোৎসবে বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা স্নান করেন, শুচিবস্ত্র পরিধান করে মন্দিরে মন্দিরে বুদ্ধের বন্দনায় রত থাকেন। অর্চনার পাশাপাশি তারা পঞ্চশীল, অষ্টশীল, সূত্রপাঠ, সূত্রশ্রবণ, সমবেত প্রার্থনা করেন।
এদিকে দিবসটি উলপক্ষ্যে আজ সরকারি ছুটির দিন। এ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীকে মৈত্রীময় শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মীয় উৎসব। মহামতি গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনির্বাণ শুভ বুদ্ধপূর্ণিমার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। মহামতি বুদ্ধ ছিলেন জীবের মঙ্গল কামনায় সত্যসন্ধ। পৃথিবীকে সুখী ও শান্তিপূর্ণ করে গড়ে তোলার জন্য তিনি নিরন্তর প্রয়াস চালান। বুদ্ধের চেতনায় ছিল দুঃখজয়ের মাধ্যমে জীবের মুক্তি কামনা।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেছেন, মহামতি গৌতম বুদ্ধ আজীবন মানুষের কল্যাণে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অহিংসা, সাম্য ও মৈত্রীর বাণী প্রচার করেছেন। শান্তি ও সম্প্রীতির মাধ্যমে আদর্শ সমাজ গঠনই ছিল তার একমাত্র লক্ষ্য।
বুদ্ধ সত্য ও সুন্দরের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবজগৎকে আলোকিত করতে কাজ করে গেছেন। মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তার জীবনাদর্শ ও শিক্ষা অনুসরণ করা প্রয়োজন।