ডেস্ক রিপোর্ট, ধূমকেতু ডটকম: টানা চার বছর ধরে ছাগলের দুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে। তবে মোট দুধ উৎপাদনে দেশের অবস্থান বিশ্বে ২৩তম। গরুর দুধ উৎপাদন গত ১০ বছরে বেড়েছে প্রায় পাঁচ গুণ। গরু ও ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। দুধ উৎপাদনের বৈশ্বিক সূচকেও কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। এই তথ্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার।
তবে দুধ উৎপাদন বাড়লেও এর বহুমুখী ব্যবহার ও চাহিদা বাড়ছে না। এজন্য গুঁড়া দুধ আমদানিকে দায়ী করছেন কেউ কেউ। এমন প্রেক্ষাপটে আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশে নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালন করা হচ্ছে “বিশ্ব দুগ্ধ দিবস”। এ উপলক্ষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সারাদেশে আজ থেকে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি পালন করবে।
আরও পড়ুন: হজমশক্তি বাড়ায়, রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখে গোলমরিচ
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৯০ শতাংশ দুধ আসে গরু থেকে, আট শতাংশ ছাগল থেকে এবং দুই শতাংশ আসে মহিষ থেকে। বর্তমানে দেশে মোট দুগ্ধ উৎপাদনকারী গরু ৮.৬ মিলিয়ন, যার মধ্যে দেশীয় ৪.৫৬ মিলিয়ন (৫৩ শতাংশ) এবং সংকর জাতের ৪.০৪ মিলিয়ন (৪৭ শতাংশ)। বর্তমানে মাথাপিছু দৈনিক ২৫০ মিলিলিটার দুধের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ১৭৫ মিলিলিটার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারে এক কেজি ভালোমানের গুঁড়া দুধের দাম প্রায় দেড় হাজার টাকা। অথচ দেশে আমদানি করা গুঁড়া দুধ বিক্রি হচ্ছে মাত্র গড়ে ৫০০-৬০০ টাকা কেজি দরে। নিম্নমানের কারণেই দাম এত কম হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে দেশের তরল দুধের বাজার নষ্ট হচ্ছে। অথচ গো-খাদ্যসহ অন্যান্য ব্যয় অনেক বেড়েছে। এ অবস্থায় দুগ্ধশিল্পের সুরক্ষায় গুঁড়া দুধের শুল্ক বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ আনা জরুরি বলে মনে করেন সংশ্নিষ্টরা।
দুগ্ধ খাত-সংশ্নিষ্টদের হিসাবে দেশে প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার গুঁড়া দুধ আমদানি করা হয়, যা মোট দুধের চাহিদার ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ। বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) মহাসচিব শাহ এমরান বলেন, “ভেজিটেবল ফ্যাট মিশ্রিত দুধ আমদানিই দেশের দুগ্ধশিল্পের বিপর্যয়ের জন্য দায়ী। এই দুধের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়নি।” আগামী বাজেটে দুধের ওপর আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করার এবং অ্যান্টি-ডাম্পিং ট্যাক্স আরোপ করে দেশীয় দুগ্ধশিল্প রক্ষার দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, “খামারিদের সহজ শর্তে ঋণ, বিপণন ও ভর্তুকি দিলে এ শিল্পে বিপ্লব ঘটবে।”
মিল্ক ভিটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক অমর চান বণিক বলেন, উৎপাদন বাড়াতে আমরা আরও বেশি খামারি তৈরির চেষ্টা করছি। কারখানায়ও নতুন নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হচ্ছে। দুধের বিপণন ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৩০০টি ভিলেজ মিল্ক কালেকশন সেন্টার (ভিএমসিসি) স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানান প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক পার্থ প্রদীপ সরকার।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, ২০৩১ সালে ২ কোটি টন এবং ২০৪১ সালে ৩ কোটি টন দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছি। আশা করি, ৮ থেকে ৯ বছরের মধ্যে দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উদ্বৃত্ত রাখতে পারব। তিনি বলেন, দুধের উৎপাদন বাড়াতে গুঁড়া দুধের আমদানি নিরুৎসাহিত করছি।