ভারতে চলমান ওয়ানডে বিশ্বকাপ মিশনে বাংলাদেশ দলের যাত্রা শেষ হয়েছে। এবার অত্যন্ত হতাশাজনক পারফরম্যান্সে টুর্নামেন্টে নয় ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটিতে জিতেছে টাইগাররা। যা ২০০৭ আসরের পর বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বাজে বিশ্বকাপ। কিন্তু হতাশাজনক এই সফরেও বাংলাদেশের হয়ে মাথা উঁচু করে রেখেছেন একমাত্র মাহমাদুল্লাহ রিয়াদ।
অথচ গত মার্চে ইংল্যান্ড সিরিজের পর বিশ্রামের নামে দল থেকে ছাঁটাই করা হয়েছিল রিয়াদকে। তবে যাদের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল তারা ব্যর্থ হওয়ায় শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপ দলে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। আর সেই রিয়াদই বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে মূল্যবান খেলোয়াড় (এমভিপি) হিসেবে টুর্নামেন্টটি শেষ করেছেন।
বিশ্বকাপে আট ম্যাচে অংশ নিয়ে দারুণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করে ৫৪.৬৬ গড়ে বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩২৮ রান করেছেন রিয়াদ। একটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটির সঙ্গে তার স্ট্রাইক রেটও ছিল সাড়াজাগানো ৯১.৬২। তার চেয়ে সামান্য বেশি ৯৫.৩৯ স্ট্রাইক রেটে শীর্ষে ছিলেন ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম।
এবার দলের হয়ে একমাত্র সেঞ্চুরি পাওয়ার কারণে আসরটি রিয়াদের জন্য বিশেষ কিছু। এর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে দুটি সেঞ্চুরি হাকিয়েছিলেন তিনি। ফলে বিশ্বকাপে এখন রিয়াদের সেঞ্চুরি সংখ্যা দাঁড়িয়েছে তিন। এটিও বাংলাদেশের কোন ব্যাটারের জন্য সর্বোচ্চ। ২০১৯ বিশ্বকাপে দুটি সেঞ্চুরি হাঁকান সাকিব আল হাসান।
রিয়াদের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮৪ রান নিয়ে এবারের বিশ্বকাপ মিশন শেষ করেছেন ওপেনার লিটন দাস। বিশ্বকাপের ইতিহাসে কোনো বাংলাদেশি ওপেনারের জন্য এক আসরে এটিই সর্বোচ্চ সংগ্রহ। শুরুতে তাকে নিয়ে সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল দল। তবে ব্যর্থতার ভিড়ে আসরে দুটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন লিটন দাস।
বাংলাদেশের হয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২২২ রান করেছেন সহ-অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। এর পরের অবস্থানে আছেন মুশফিকুর রহিম (২০২) ও মেহেদি হাসান মিরাজ (২০১)। বাংলাদেশ দলের মাত্র ৫ জন ব্যাটার এবারের বিশ্বকাপে ২০০ রানের মাইলফলক অতিক্রম করতে পেরেছেন।
২০১৯ বিশ্বকাপে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখানো বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান এবারের বিশ্বকাপে রান সংগ্রহের দিক থেকে ষষ্ঠ স্থানে আছেন ১৮৬ রান নিয়ে। অথচ আগের আসরে ৬০৬ রান নিয়ে টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের আসনে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি।
শুধু তাই নয়, বল হাতে ১১ উইকেট নিয়ে তিনি বিশ্বকাপে বিরল এক রেকর্ড গড়েছিলেন সাকিব। একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে ৫০০ এর অধিক রানের পাশাপাশি ১০ এর অধিক উইকেট শিকারিতে পরিণত হয়েছিলেন টাইগার এই অলরাউন্ডার।
তবে এর ন্যুতম ছাপও এবারের আসরে রাখতে পারেননি সাকিব। আসরে বাংলাদেশের ভরাডুবির অন্যতম কারণ ছিল সাকিবের ফর্মহীনতা। এ ছাড়া বোলিং বিভাগে সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ।
টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের হয়ে যৌথভাবে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির খাতায় নাম লিখিয়েছেন অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ ও বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। দুইজনেই ১০টি করে উইকেট শিকার করেছেন। শরিফুল আসরে আট ম্যাচে খেললেও মিরাজ খেলেছেন নয় ম্যাচে।
সাত ম্যাচ থেকে ৯ উইকেট শিকার করেছেন অধিনায়ক সাকিব। আর তিন ম্যাচে অংশ নিয়ে ৬ উইকেট শিকার করেছেন শেখ মাহেদি হাসান। মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ যথাক্রমে আট ও সাতটি করে ম্যাচ খেলে শিকার করেছেন ৫টি করে উইকেট।