খেলাধুলা

বিপিএলের প্রথম দুই দিনে যত বিতর্ক

বিপিএল মানে কী? বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ নাকি বিতর্কিত প্রিমিয়ার লিগ? বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) প্রথম দুই দিন শেষে কেউ যদি বিতর্কিত প্রিমিয়ার লিগ বেছেও নেয়, খুব একটা অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

চলতি বিপিএলের প্রথম দুই দিনেই বিতর্ক ছড়িয়েছে দাবানলের মতো। আরটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য বিপিএলের প্রথম দুই দিনের যত বিতর্ক রয়েছে, সেসব তুলে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সাকিব-বিপিএলের গভর্নিং বডির কথার লড়াই: সাকিব আল হাসান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের অবিচ্ছেদ্য অংশের মতো। সাকিব তো বাংলাদেশ ক্রিকেটের সেরা তারকা হয়ে আছেন দীর্ঘ ১৫ বছর ধরেই। সেই সাকিব বিপিএল খেলার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে এবারের আসর মাঠে গড়ানোর আগে সমালোচনা করতে বাধ্যই হয়েছেন।

বিপিএলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে মুখ খুলেছেন সাকিব। বলেছিলেন, বাংলাদেশের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগও ঢের ভালো বিপিএলের চেয়েও। এও বলেছেন, টুর্নামেন্টের প্রধান নির্বাহী হয়ে বদলে দিতেন বিপিএলের চিত্র।

সাকিবের এমন ইচ্ছা নিয়ে স্বাগতম জানিয়েছে বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল। তবে এটাও জানিয়েছে, সাকিব বিপিএলের চেয়েও ডিপিএল এগিয়ে রাখলেও, খেলেন কেবল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টই। ডিপিএল তো মিস দিয়েছেন অহরহ।

নাসিরের অপেশাদার আচরণ: এবারের বিপিএলে ঢাকা ডমিনেটর্সের অধিনায়কত্ব করছেন নাসির হোসেন। গত আসরে এই ক্রিকেটার ইনজুরির কারণে খেলতে পারেননি। বিপিএলের শিরোপা উন্মোচনের দিন নাসিরের কাছে এই বিষয়ে জানতে চেয়েছেন এক গণমাধ্যমকর্মী।

নাসির শুরুতে সেই গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে সহনশীল আচরণ না করে বরং বিতর্কিত উত্তর দিয়েছেন, মজা নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যা বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে নাসির নিজেই আন্তরিক ক্ষমা চেয়েছেন সেই গণমাধ্যমকর্মীর কাছে।

আচমকা খেলার সময়সূচী এগিয়ে আনা: সম্ভবত বিপিএলের বিতর্কের মধ্যে উপরের দিকে থাকবে এটি। বিপিএল মাঠে গড়ার বেশি আগে থেকে গণমাধ্যম থেকে শুরু করে সাধারণ দর্শক সকলে জানতো, টুর্নামেন্টের খেলা প্রতিদিন শুরু হবে দুপুর ২টা এবং সন্ধ্যা ৭টায়। ব্যতিক্রম কেবল শুক্রবারে। সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে খেলা শুরু হবে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে এবং সন্ধ্যা ৭টা ১৫তে।

বিপিএলের এই সময়সূচী আচমকাই বদলে দিয়েছে আয়োজক কমিটি। সময়সূচী বদলানো সমস্যা নয় তবে কারণ ব্যাখ্যা না করা এবং খেলা শুরু হওয়ার মাত্র দেড় ঘণ্টা আগে আচমকা সময় বদলে দেওয়াটাই সবচেয়ে বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

যদিও বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল জানিয়েছিল, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এই ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু সেই সত্যতা পাওয়া যায়নি বিপিএলের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে।

এডিআরএস বিতর্ক, সৌম্যের আউট ঘিরে নাটক: টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যখন বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিলের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ডিআরএস কেন ব্যবস্থা করেনি তারা? তখন তারা জানিয়েছিল, সীমাবদ্ধতার কথা। সেই সীমাবদ্ধতা এড়িয়ে অ্যাডিশনাল ডিসিশন রিভিউ সিস্টেম নিয়ে আসছে তারা।

এমন সিস্টেমই নিয়ে এসেছে বিপিএলের আয়োজক কমিটি, যা সমাধানের চেয়েও সংশয় বাড়িয়েছে বেশি। ঢাকা ডমিনেটর্স এবং খুলনা টাইগার্সের মধ্যকার ম্যাচে যে চিত্র দেখা গেছে। যেখানে মাঠের আম্পায়ার গাজী সোহেল সৌম্যকে এলবি আউট দেন।

এডিআরএস নিয়ে সৌম্য জানিয়েছে, বল তার গ্লাভস ছুঁয়ে গেছে। তবে বিপিএলের অতি আধুনিক এডিআরএসে সেটি ধরা পড়েনি। ফলে টিভি আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। সৌম্য সঙ্গে সঙ্গে সেই সিদ্ধান্তের আবারও বিরোধিতা জানান। মাঠের আম্পায়ার বলে দেন কট বিহাইন্ড হয়েছেন সৌম্য। যদিও শেষ পর্যন্ত সৌম্যকে আবারও নট আউট ঘোষণা দেন টিভি আম্পায়ার।

আম্পায়ারিং নিয়ে সাকিব-তামিমের ক্ষোভ: বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ারিং নিয়ে সাকিব বরাবরই বিরক্ত। একই দৃশ্য দেখা গেছে বিপিএল শুরু হওয়ার দুই দিনের মধ্যে। সাকিবের দল ফরচুন বরিশালের ম্যাচেই মাঠেই সাকিবকে ক্ষোভ ঝাড়তে দেখা গেছে আম্পায়ারের প্রতি।

রেজাউর রাজার একটি বল সাকিবের মাথার উপর দিয়ে গেলে লেগ আম্পায়ার ওয়াইডের কল দেননি। কিন্তু বলটি নিশ্চিতভাবে ওয়াইড ছিল। আম্পায়ারের এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি সাকিব। সঙ্গে সঙ্গে ক্ষোভ ঝেড়েছেন এই অলরাউন্ডার।

সাকিবের ম্যাচের ঠিক আগেই ক্ষোভ ঝেড়েছেন তামিম ইকবালও। সেই ম্যাচে সৌম্যকে আউট দেওয়া, না দেওয়া নিয়ে যে নাটক হয়েছে, সেই বিষয়ে আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনা করেন তামিম। এই সময় আক্ষেপের সুরেই তামিম বলেন, ‘এমন হলে আমরা কই যাব?’

অধিনায়ক ছাড়া টস: এটি ঠিক বিতর্কের বিষয় নয়। তবে চমকে দেওয়ার মতো বটে। ফরচুন বরিশাল এবং সিলেট স্ট্রাইকার্সের মধ্যকার ম্যাচে নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফীকে ছাড়া টস করে সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজি। মাশরাফীর বদলে টসে যান মুশফিকুর রহিম।

অবশ্য এই বিষয়ে পরবর্তীতে যথাযথ ব্যাখ্যা দিয়েছে সিলেট ফ্র্যাঞ্চাইজি। একই ম্যাচে বরিশালের হয়ে অধিনায়ক হিসেবে সাকিব না এসে মিরাজ আসেন। পরবর্তীতে বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজি জানিয়েছে, তারা প্রথম ম্যাচের জন্য অধিনায়ক হিসেবে মিরাজকেই বেছে নিয়েছে। ম্যাচ বাই ম্যাচ অধিনায়ক বদলাতে পারেন তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *