স্বাস্থ্য

বিনা খরচে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন চৌগাছার মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু ডটকম: মকছেদ আলী। বয়স নব্বইয়ের কোটায়। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে শরীর। উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট ও কোমরে ব্যথাসহ শরীরে নানা রোগবালাই। টাকা পয়সা তেমন নেই। এজন্য ভালো চিকিৎসা নিতেন পারেন না। তারপরও বেঁচে থাকতে দরকার নিয়মিত চিকিৎসাসেবা।

তার জন্য এই বৃদ্ধ বয়সে স্বল্প খরচে দূরে কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়। তাই নিজ এলাকার কমিউনিটি ক্লিনিকেই নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছেন তিনি। তাও আবার বিনা খরচে।

বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মকছেদ আলীর বাড়ি যশোরের চৌগাছা উপজেলার সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের কুলিয়া গ্রামে।

রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আসমা খাতুন (২৫), গর্ভবতী নারী আয়শা বেগম (৪৫), বৃদ্ধ মহাসিন আলীসহ (৬৫) একাধিক রোগী জানালেন তাদের প্রতিক্রিয়া। তারা জানান, আমরা গরীব মানুষ। টাকা-পয়সা দিয়ে চিকিৎসা নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। তাই গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত এসে ওষুধ নিই। ডাক্তার ও ম্যাডামেরা (সিএইচসিপি) আমাদের দেখে ওষুধ দেন।

সিএইচসিপি মোমিনুর রহমান বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকে বৃদ্ধ রোগী, মাতৃস্বাস্থ্য রোগী ও শিশু রোগীসহ প্রতিদিন গড়ে প্রায় একশ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। আমি তাদের দেখে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ দিই। আর যাদের বড় ধরনের সমস্যা তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠিয়ে দিই।’

তিনি আরও জানান, আমি ছাড়াও এই ক্লিনিকে একজন স্বাস্থ্য সহকারী (এইচএ) ও একজন পরিবার পরিকল্পনা সহকারী (এফডব্লিউএ) সপ্তাহে দুইদিন বসেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্যমতে, এভাবেই উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো প্রতিমাসে গড়ে ২৪ হাজার রোগী স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। বিনা খরচে সেবা পেয়ে উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের গ্রামাঞ্চলের মানুষ অনেক খুশি।

সর্দিজ্বর, ঠাণ্ডা, হাঁচি, কাশিসহ যেকোনো ছোটখাট সমস্যা হলেই মানুষ ছুটে যান কমিউনিটি ক্লিনিকে। এ উপজেলায় ২৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক বিরামহীন স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছে। উপজেলার এসব কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সেবা দিচ্ছে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি)। এই উপজেলায় আরও ৪টি ক্লিনিক স্থাপনের জন্য জমি দেখা হয়েছে। খুব শিগগিরই এই ক্লিনিকগুলো স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার লাকি।

রোস্তমপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মোক্তার হোসেন, আন্দুলিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি শিরনা সুলতানা, বর্ণী কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আশরাফুল ইসলামসহ কয়েকজন সিএইচসিপি বলেন, ‘তাদের ক্লিনিকে প্রতিদিন গড়ে ৮০-১১০ জন পর্যন্ত রোগীর সেবা দেন তারা।

তারা বলেন, ‘যে পরিমাণে ওষুধ সরবরাহ করা হয় জনগণের চাহিদার তুলনায় সরবরাহের পরিমাণ একটু বাড়ালে ভালো হতো। দিনের প্রথম প্রহরায় রোগীদের ভিড় বেশি হয়। তার পরেও প্রতিদিনের রোগী প্রতিদিন রেজিষ্ট্রারভুক্ত করেন। সিএইচসিপিদের চাকরি জাতীয়করণ হলে সেবার মান আরও উন্নত হবে বলে দাবি করেন তারা। ক্লিনিকগুলো পরিচালনা করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা।’

কর্মকর্তা লুৎফুননাহার লাকি বলেন, ‘ক্লিনিকগুলোতে ৩২ রকমের ওষুধ রয়েছে। আমি মনে করি কমিউনিটি ক্লিনিক বাংলাদেশে একটি রোল মডেল। আমরা সার্বক্ষণিক ক্লিনিকগুলো তদারকি করছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের কারণে তৃণমূলের অসহায় ও গরীব রোগীরা সহজেই বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। আমরা আরও চারটি ক্লিনিক স্থাপনের জন্য জমি দেখেছি।’

তিনি বলেন, ‘উপজেলার চলমান ২৬টি ক্লিনিকের মধ্যে সবগুলো ক্লিনিকে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। কিছু ক্লিনিকে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো নেই। বাউন্ডারি ওয়াল নেই। এছাড়াও রয়েছে কিছু অবকাঠামোগত ও আসবাবপত্র সমস্যা। এসব সমস্যাগুলো সমাধান হয়ে গেলে ক্লিনিকগুলো আরও ভালোভাবে চলবে।

জানা যায়, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ১০-২০% গেজেটেড বরাদ্দ থেকে আর্থিক যোগান দেওয়ার কথা ক্লিনিক পরিচালনায়। ইউনিয়নের বার্ষিক মূল বাজেটের ১০-২০% টাকা ব্যয় হবে স্বাস্থ্য খাতে অর্থাৎ কমিউনিটি ক্লিনিকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দের টাকা দেওয়া হয় না। যার কারণে অবকাঠামো উন্নয়নের দিক দিয়ে ক্লিনিকগুলো অনেক পিছিয়ে পড়ছে। জনগণ চায় তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর এ মাধ্যমকে আরও সচল ও গতিশীল করা হোক। কারণ এটিই তৃণমূলে বিনা খরচে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার একমাত্র উপায়।

এ নিয়ে কথা হয় কয়েকজন সচেতন নাগরিকের সাথে। তাদের ধারণা ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সবচেয়ে সহজ উপায়। তাই এ ক্লিনিকগুলো আরও গতিশীল করতে দরকার ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সরকারের দেওয়া বাজেটের যথাযথ বাস্তবায়ন। সরাসরি রাজস্ব হয়ে গেলে তো মডেল আকারে রূপ নেবে ক্লিনিকগুলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাবনা পুরোপুরি সফল হবে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

আরও পড়ুন:

হাড়ক্ষয় রোধে দরকার স্বাস্থ্যকর জীবনপ্রণালী : গবেষণা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *