পোশাকশিল্প

বিদায় অ্যাকর্ড, পোশাক খাতে নতুন তদারকি সংস্থা আরসিসির যাত্রা শুরু

ধূমকেতু প্রতিবেদক: বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিধানে পশ্চিমা ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ডের দীর্ঘদিনের সংস্কার কাজ এখন নতুন তদারকি সংস্থা আরসিসির হাতে গেল। আরএসসি হলো আরএমজি সাসটেইনেবিলিটি কাউন্সিল। পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ সুরক্ষায় বিদেশি ক্রেতা, উৎপাদনকারী ও ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ প্রয়াসে এর যাত্রা শুরু হলো।

কারখানার কর্মপরিবেশ পরিদর্শন, অবকাঠামো সংস্কার কাজের তদারকি, নিরাপত্তামূলক প্রশিক্ষণ এবং একটি স্বাধীন বা স্বতন্ত্র অভিযোগকেন্দ্র পরিচালনা করবে আরএসসি।

সোমবার আরএসসির প্রথম সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “অ্যাকর্ড অন ফায়ার অ্যান্ড বিল্ডিং সেইফটির বাংলাদেশ অফিসের যাবতীয় কাজ আজ থেকে আরএসসির কাছে ন্যস্ত হলো। আরএসসি হচ্ছে একটি স্থায়ী জাতীয় সংগঠন যাতে রয়েছে পোশাক প্রস্তুতকারক, পোশাক খাতের আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও পোশাক শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের প্রতিনিধিত্ব।”

আরএসসিতে কারখানা মালিকদের প্রতিনিধি হিসেবে আছেন বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক ও পরিচালক মিরান আলী, বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিনিধি হিসেব আছেন এইচঅ্যান্ডএমের রজার হুবার্ট এবং শ্রমিক প্রতিনিধি হিসাবে আছেন ইন্ড্রাস্ট্রিঅল বাংলাদেশ কাউন্সিলের মহাসচিব চায়না রহমান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এতদিন ধরে অ্যাকর্ড যে ১৬০০ কারখানায় সংস্কার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করেছিল, প্রথম পর্যায়ে সেগুলোতে কর্মপরিবেশ তদারকি করবে আরএসসি। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে অন্যান্য রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোকে তাদের কার্মপরিধির অন্তর্ভুক্ত করবে। কর্মদক্ষতার উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষার বিভিন্ন দিক এবং শিল্পখাতের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের বিষয়গুলোও নিজেদের কার্যতালিকায় স্থান দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আরএসসির।

২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। কারখানার অবকাঠামো উন্নয়ন, আগুন থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা, শ্রমিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা। এর বাইরে বিভিন্ন দাতা সংস্থার উদ্যোগে শ্রমিকদের কর্মদক্ষতার উন্নয়নে প্রশিক্ষণের প্রচলন করা হয়েছে।

এছাড়া মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর উদ্যোগে উচ্চমূল্যের পণ্য উৎপাদন, পোশাকপণ্যের ভ্যালু সংযোজন ও পণ্যের বহুমুখীকরণেও বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

অ্যাকর্ডের তদারকি তৎপরতায় যুক্ত ১২০০ এর বেশি কারখানায় ৯০ শতাংশেরও বেশি সংস্কার উদ্যোগ ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন হয়েছে। এখন নতুন করে যাত্রা শুরু করা আরএসসি বাকি কাজ দ্রুত শেষ করতে পারবে বলে আশা করছে।

নতুন উদ্যোগ সম্পর্কে বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, “একটি অভূতপূর্ব জাতীয় উদ্যোগ হিসাবে আরএসসির জন্ম। ব্র্যান্ড ও ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের সঙ্গে নিয়ে এই উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা বিশ্বব্যাপী প্রমাণ করার চেষ্টা করব যে, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক কেনার জন্য বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ একটি কেন্দ্র।”

শ্রমিক নেতা চায়না রহমান বলেন, “শ্রমিকরা যাতে নবগঠিত আরএসসির ওপর আস্থা রাখতে পারে আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করব। পোশাক শ্রমিকরা যাতে নিরাপদ কর্মপরিবেশ পায় এবং অন্যান্য নিরাপত্তামূলক বিষয়গুলো যাতে নিশ্চিত হয় সেই লক্ষ্যে কাজ করবেন শ্রমিক প্রতিনিধিরা।”

এইচঅ্যান্ডএমের ব্র্যান্ড প্রতিনিধি রজার হুবার্ট বলেন, কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়মিতভাবে যাচাই করা হচ্ছে, আরএসসি তা নিশ্চিত করে যাবে।

চলমান কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের পোশাক খাতও একটি কঠিন সময় পার করছে। সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে মহামারীর মধ্যেই খুলতে শুরু করেছে কিছু কিছু পোশাক কারখানা। চালু হওয়ার পর কারখানাগুলোতে মহামারী সংক্রান্ত নিরাপত্তা পদক্ষেপ তদারকি করা আরএসসির অন্যতম কাজ হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *