মাতৃভূমি

ডিজেল হোক আর গ্যাসচালিত হোক, সব বাসেই বাড়লো ভাড়া || কে করবে নিয়ন্ত্রণ?

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা:  “এখন থেকে বাসে ওঠার আগে তাহলে (বাসের) নিচে দেখে নিতে হবে। দেখতে হবে সিলিন্ডার লাগানো আছে কিনা; গ্যাসে চলছে না ডিজেলে”— রসিকতা করেই কথাগুলো বলছিলেন আশরাফ হোসেন নামের এক যাত্রী। সোমবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে গাবতলীতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি।

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘটে যায় পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। রবিবার (৮ নভেম্বর) বিআরটিএ’র সঙ্গে বৈঠকে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলে তুলে নেওয়া হয় ধর্মঘট। বৈঠকে আরও জানানো হয়, সিএনজিচালিত বাস কিংবা মিনিবাসের ভাড়া বাড়েনি, তাই এসব পরিবহনে নতুন ভাড়া আদায় করা যাবে না।

বাসের যাত্রীরা অভিযোগ করছেন, গ্যাসে চালিত গাড়িতেও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। গাবতলীর যাত্রী আশরাফ গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় পেয়েই রসিকতার করে কথাগুলো বলছিলেন। পরক্ষণে আবার প্রশ্ন করেন, ‘আসলে কোনটা ডিজেলচালিত আর কোনটা গ্যাসচালিত, এটা বুঝবো কীভাবে? সবগাড়িতে কী বোঝার উপায় আছে? আর সবাই কী এটা বুঝবে? আসলে সব ভোগান্তি আমাদের সাধারণ মানুষের।’

এবার তার সঙ্গে যোগ দিলেন বাসের অপেক্ষায় থাকা আরেক যাত্রী শহীদ। আশরাফের কথা রেশ ধরেই তিনি বলেন, ‘সব দায় আমাদের জনগণেরই। বাসে ওঠার আগে জিজ্ঞেস করতে হবে— সিএনজি না ডিজেল? বাসের ভেতর থেকে তো বোঝার কোনও উপায় নেই। বাসের সুপারভাইজার কিংবা হেলপার যা বলবে আমাদের তাই মেনে নিতে হবে।’

বাসের চালকরাও বলছেন, বাইরে থেকে বোঝার কোনও উপায় নেই বাসটি সিএনজিচালিত না ডিজেল চালিত। বাসের পেছনের নিচের অংশে সিলিন্ডারের উপস্থিতি থাকলে বুঝতে হবে সেটা সিএনজিচালিত। এছাড়া চালকের পাশে একটি মিটার থাকে, সেটা দেখেও বোঝা যায়। তবে সাধারণ যাত্রী হিসেবে সবাই এ বিষয়টি বুঝতে পারবেন না। বিষয়টি বুঝতে চালক কিংবা হেলপারের বা পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সহায়তা নিতে হবে।

যাত্রীরা কীভাবে সিএনজিচালিত বাস চিনবেন— এমন প্রশ্নের জবাবে সরাসরি কোনও মন্তব্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি বলেন, বিষয়টি দেখভালের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটগণ অভিযান পরিচালনা করবেন। কোনও অভিযোগ পেলে এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীতে চলা ২৫টি কোম্পানির বাসের মধ্যে ২০ কোম্পানির বাস সিএনজিতে রূপান্তর করা। তথ্যে দেখা গেছে তখনই ছিল শতকরা ৮০ ভাগ বাস সিএনজিতে কনভার্ট করা। এ সংখ্যা বর্তমানে আরও বেড়েছে বলে আমাদের ধারণা। আর পরিবহন মালিকরা পরিবহন সেবা নয়, পরিবহন ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা কৌশলী হবেই সেইসাথে বিআরটিএ কে আরো কৌশলী হতে হবে। এছাড়া বাসের ভিতরে ভাড়ার চার্ট টাঙ্গানোর সাথে সাথে বাসটি ডিজেলচালিত না সিএনজিচালিত তার তথ্য রাখা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

ধর্মঘটে ডিজেল চালিত বাসের মালিকদের সঙ্গে গ্যাসে চালিত বাসের মালিকরাও তাদের বাস বন্ধ রেখেছিলেন। তারা (গ্যাসে চালিত বাস মালিক) কোন দাবিতে এমনটা করলেন এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ খান বলেন, তারাও ভুক্তভোগী। তারা পরিস্থিতির শিকার। মহানগরে যে পরিমাণ বাস ও মিনিবাস চলে তার এক থেকে দুই শতাংশ সিএনজিচালিত বলেও দাবি করেন পরিবহন মালিকদের এই নেতা।

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল নেওয়াজ বলেন, ‘পরিবহন মালিকরা ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাড়া বৃদ্ধির জন্য তারা ধর্মঘট করেছিলেন। যা মূলত এক প্রকার জোর করে আদায় করা। আর জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলা।’

আরো পড়ুন:

ভাড়া আদায়ে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে: সড়ক পরিবহনমন্ত্রী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *