মাতৃভূমি

বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা, যাত্রীদের দাবি ভাড়ার তালিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ধূমকেতু বাংলা: রাজধানী ঢাকায় গণপরিবহনে বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে চলছে বাকবিতণ্ডা। যাত্রীরা বলছেন, বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ২৭ শতাংশ, কিন্তু মিনিবাসে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৫০ শতাংশেরও বেশি।

সোমবার (৮ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বাসে এমন চিত্র দেখা যায়।

বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মো. আরিফ। মিরপুর ১২ নম্বর থেকে যাচ্ছিলেন গুলশান ১ নম্বরে। রব রব পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন বাসের কন্ডাক্টরের সঙ্গে। আরিফ বলেন, বিআরটিএ ভাড়া করেছে কিলোমিটার প্রতি ১.৮ টাকা। কিন্তু কন্ডাক্টর বেশি ভাড়া চাচ্ছে। বলতে পারছে না কত টাকা ভাড়া বেড়েছে অথচ চাইছে অতিরিক্ত ভাড়া। মিরপুর থেকে গুলশানের ভাড়া আগে ছিল ২৫ টাকা। এই ভাড়া বেড়ে হতে পারে ৩০ টাকা। সেখানে কন্ডাক্টর ভাড়া নিচ্ছে ৩৫ টাকা।

তিনি বলেন, কন্ডাক্টর যে ভাড়া চাচ্ছে তা ৫০ শতাংশের কাছাকাছি। করোনাকালে ৪০ শতাংশ হারে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল। এখন যে ভাড়া নিতে চাচ্ছে কন্ডাক্টর তা তো দেখি করোনাকালের থেকেও বেশি।

একই বাসের যাত্রী বেসরকারি কর্মকর্তা মো. রহমান। যাবেন মহাখালী। অতিরিক্ত ভাড়া চাওয়ায় তিনিও জড়িয়ে পড়েন বাকবিতণ্ডায়। রহমান বলেন, বিআরটিএ যে ভাড়া বাড়িয়েছে তার থেকেও অনেক গুণ বেশি নিচ্ছেন কন্ডাক্টর। ১৫ টাকা জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। এই কারণে কি একজন যাত্রী থেকেই সেই বাড়তি টাকা তুলবে? সব মাশুল কি শুধু সাধারণ মানুষরাই দেবেন?

দূরপাল্লায় তালিকা ছাড়াই বেশি ভাড়া আদায়

ভাড়া বাড়ানোর পর রাজধানীর গাবতলী টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে বাড়তি ভাড়ার নতুন তালিকা এখনো করা হয়নি। অথচ টিকিট কাউন্টারগুলোতে ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।

সোমবার (৮ নভেম্বর) সকালে গাবতলী বাস টার্মিনালের কাউন্টার ঘুরে এবং যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, ডিজেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে নতুন বাসভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তবে বাস মালিকরা এখনো ভাড়ার তালিকা করেননি। ফলে ইচ্ছেমতো যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসময় নতুন নির্ধারিত ভাড়া নিয়ে যাত্রী ও টিকিট বিক্রেতাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হচ্ছে। তবে নিরূপায় হয়ে যাত্রীরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে যাত্রা করছেন।

যশোর-মাগুরা চলাচলরত দিগন্ত পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, ‘ভাড়া বৃদ্ধির নতুন তালিকা আমরা এখনো পাইনি। এ কারণে আগের চাইতে কিছুটা বেশি ভাড়া ধরে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।’

কতটা বেশি নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দূরত্ব অনুযায়ী প্রতিটি টিকিটে ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে।’

মাগুরা যাওয়ার জন্য হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার থেকে টিকিট কিনেছেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগে ভাড়া নেওয়া হতো ৪০০ টাকা। এখন পর্যন্ত সেটা ৪৫০ টাকা নিচ্ছে।’

হানিফ এন্টারপ্রাইজের টিকিট বিক্রেতা ইদ্রিস মিয়া বলেন, ‘নতুন ভাড়ার চার্ট এখনো আসেনি। তবে ভাড়া যেহেতু বাড়িয়েছে সরকার, তাই আগের চেয়ে কিছুটা বেশি নেওয়া হচ্ছে। নতুন চার্টে তো ভাড়া বেশিই থাকবে।’

ঢাকা-কুয়াকাটা রুটে চলাচল করা গোল্ডেন লাইন পরিবহনেও ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দূরত্ব অনুযায়ী প্রতি টিকিটে এ পরিবহন কর্তৃপক্ষ ৫০-১০০ টাকা বেশি আদায় করছে।

গোল্ডেন লাইনের টিকিট বিক্রেতা ফরিদ মিয়া বলেন, ‘মালিকপক্ষের নির্দেশে আগের চাইতে ভাড়া কিছুটা বাড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে ভাড়ার নতুন তালিকা আসলে সে অনুযায়ী টিকিট বিক্রি করা হবে।’

ঝিনাইদহ যাবেন মো. হায়দার মিয়া। তিনি ৫০০ টাকায় ঈগল পরিবহন বাসের টিকিট নিয়েছেন। আগে ভাড়া ৪৫০ টাকা নেওয়া হলেও এখন বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তার।

তিনি বলেন, ‘কয়েকটি কাউন্টার ঘুরে দেখলাম, সবাই ভাড়া বাড়িয়ে টিকিট বিক্রি করছে। এ কারণে বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়ায় টিকিট নিতে হলো।’

এছাড়া উত্তরবঙ্গ রুটে চলাচল করা সব পরিবহনের বাসের টিকিটপ্রতি ১০০ টাকা করে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। পরিবহন মালিকের নির্দেশে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন এস আর ট্রাভেলসের টিকিট বিক্রেতা সুজিত।

তিনি বলেন, ‘নতুন ভাড়ার তালিকা না পেলেও মালিক নির্দেশ দিয়েছেন, প্রতি টিকিটে ১০০ টাকা বাড়তি ভাড়া নিতে। এ কারণেই আমরা বাড়তি ভাড়া যোগ করে নিচ্ছি। নতুন তালিকা আসলে সে অনুযায়ী ভাড়া আদায় করা হবে।’

আরো পড়ুন:

বাড়লো ভাড়া, প্রত্যাহার হলো পরিবহন ধর্মঘট

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *